1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ সত্য নয়’

২৫ জুলাই ২০১৭

বাংলাদেশে যত গুমের ঘটনা ঘটে এবং যতগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যোগসাজশ আছে বলে দাবি করা হয়, তার সব সত্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব:) আবদুর রশিদ৷

https://p.dw.com/p/2h0Jz
Bangladesch Polizei Sicherheit Terror Symbolbild
ছবি: AFP/Getty Images/M. Uz Zaman

ডয়চে ভেলে: আমরা ইদানীং দেখছি, গুম, অপহরণ এবং কেউ হারিয়ে যাওয়া ও এরপর ফিরে না আসা – এ সব নিয়ে খুব কথা হচ্ছে৷ সেক্ষেত্রে অনেক অভিযোগ আসছে আইন-শৃংখলা বাহিনীর ওপর৷ আপনি কি আমাকে বলবেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম' – একে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়?

আবদুর রশিদ: এটা কোনো সংজ্ঞায়নের মধ্যে পড়ে না৷ কারণ সংবিধানে এই ক্ষমতা কাউকে দেয়া হয়নি৷ তাই এ রকম যদি কোনো অভিযোগ আসে, তাহলে অভিযোগগুলো অবশ্যই খতিয়ে দেখার অবকাশ আছে৷ তবে আমি দেশে আমি যা দেখি, তাতে যতগুলো অভিযোগ আসে তার মধ্যে কিছুর সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লেষ আছে৷ অনেক গুমই ইচ্ছাকৃত হওয়ার সংকেত পাওয়া যায়৷ আবার অনেকে আছে গুম করে সরকারের ভাবমূর্তির ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে, যেটা সর্বশেষ ফরহাদ মজহারের গুমের ঘটনাটি থেকে স্পষ্ট৷ তবে স্বভাবতই একটি গণতান্ত্রিক দেশের যে কোনো ব্যক্তির অধিকার সরকারকে রক্ষা  করতে হবে৷ সেটা রক্ষা করতে গিয়ে যদি কোনো ঘাটতি দেখা যায়, আমি মনে করি সেটি খুব দ্রুত পূরণ করতে হবে৷ তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যতগুলো গুমের ঘটনা ঘটে বা যতগুলোর পেছনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাত আছে বলে বলা হয়, ততগুলা হয় বলে মনে হয় না৷ তবে সেটি একেবারে হয় না তাও ঠিক না৷ সেক্ষেত্রে কোনো কোনো ঘটনার তদন্তে তাদের জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে৷ শাস্তিও হয়েছে৷ এটিকে এড়িয়ে যাওয়া যাবে না৷ মানুষকে আস্থায় রাখতে হলে এ ধরনের অভিযোগ অবশ্যই পরিষ্কার করতে হবে এবং মানুষের অধিকার রক্ষা করতে হবে৷ এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের দায় আছে৷

‘মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগগুলোই তুলে ধরছেন’

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷ ৮২ পৃষ্ঠার সেই প্রতিবেদনে তারা বলছে, ২০১৬ সালেই কমপক্ষে ৯০ ব্যক্তি গুমের শিকার হয়েছেন৷ যদিও গোপনে আটকে রাখার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তাদের আদালতে হাজির করা হয়৷ আটক হওয়া ২১ জনকে পরে হত্যা করা হয়েছে৷ এ ধরনের আরো অনেক তথ্য রয়েছে৷ এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাইছি৷

আমি প্রথমে মনে করি, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো যেসব সংগঠন রয়েছে তারা রাজনীতি বিবর্জিত না৷ আমরা দেখেছি যে কোনো দেশের একটি শাসনব্যবস্থা বা সরকারের ওপর নির্ভর করে তারা একটি দিক ঠিক করে৷ এরপর তাদের তথ্য সংগ্রহের উৎস হলো যেটা করে, যেমন বাংলাদেশে যারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে তাদের থেকে পাঠানো ই-মেল বা বার্তা৷ এক্ষেত্রে এককভাবে তাদের নিজস্ব তদন্তসম্বলিত রিপোর্ট তারা প্রকাশ করে বলে আমি মনে করি না৷ অনেক শোনা কথা, অনেক রিপোর্টকে সত্য ধরে তারা তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করে৷ এটি শুধু আমাদের দেশে না, অনেক দেশেই করে যা ভূ-রাজনীতিমুক্ত না৷

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমেই হোক, বা কেউ স্বেচ্ছায় নিঁখোজ হয়ে যাক, এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে কেন বলে আপনার মনে হয়?

প্রথমত আমরা যেটি মনে করি, বাংলাদেশের যে অল্প জায়গা, সেখানে যে জনসংখ্যা তার তুলনায় অপরাধ যে খুব একটা বেড়েছে সেটি আমি বলব না, কিন্তু সেটি একই রকম ‘লেভেলে' আছে৷ জনসংখ্যার তুলনায় যে কয়টি গুম হচ্ছে, সেটি এ ধরনের অপরাধ যেসব দেশে হয়, তার তুলনায় কম৷ কিন্তু এটি একেবারে শূন্যে রাখতে হবে৷ বিষয়টি নীতিগত৷ আমরা যে জায়গাটি দেখতে চাচ্ছি যে সরকার বা শাসকগোষ্ঠীর কোনো রাজনৈতিক নির্দেশনা আছে কিনা, এরকম গুম খুন করার ব্যাপারে, এবং কারো বিরুদ্ধে এ সব অভিযোগ সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হবার পর তাকে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে কিনা৷ রাজনৈতিক প্রত্যয়ের অভাব আছে কিনা৷ সেক্ষেত্রে আমি দেখছি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যেসব অভিযোগ এসেছে তারা তার সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার করেছে৷ ঠিক তেমনি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এমন কোনো ঘটনা আমরা দেখিনি যা প্রমাণ করে, এ ধরনের গুমের পেছনে কোনো রাজনৈতিক ইচ্ছা, প্রত্যয় বা নির্দেশনা কাজ করেছে৷ কিন্তু সংখ্যা বাড়ছে বা কমছে, তার জন্য অভ্যন্তরীণ কোন্দল, দলীয় কোন্দল বা জমিজমার কোন্দল – এগুলোকে কিন্তু আমরা বাদ দিতে পারব না৷ শুধু এটি রাজনৈতিক কারণে হচ্ছে সেটি আমি কখনো বলব না৷ আপনি যদি দেখেন গুম খুনের মধ্যে এমন অনেকের নাম আছে, যারা রাজনৈতিকভাবে খুব বেশি অগুরুত্বপূর্ণ৷ এটি দৃশ্যমান না যে সে একটি রাজনৈতিক দলের একজন অ্যাকটিভ কর্মী বা নেতা৷ কিছু কিছু এ রকম ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ব্যক্তিগত আক্রোশ, ব্যবসা বিরোধ, ব্যক্তিগত, জমি বিরোধ এসব কারণকে আমাদের ধর্তব্যের মধ্যে নিতে হবে৷

সাজেদুল ইসলাম সুমন নামে এক বিএনপি কর্মীর কথা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যিনি ২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর নিখোঁজ হন৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, একজন জ্যেষ্ঠ ব়্যাব কর্মকর্তা পরে পরিবারের কাছে স্বীকার করেন যে সুমনসহ ছয়জন তাঁর হেফাজতে ছিল৷ কিন্তু তাদের হত্যা করতে অস্বীকৃতি জানানোয় পরে তাঁর কাছ থেকে তাদের সরিয়ে নেয়া হয়৷ এ ধরনের ঘটনা কি রাজনৈতিক বিবেচনার ইঙ্গিত দেয়? 

আমি দু'টো দিক দেখছি৷ যেটা আপনি বললেন যে একজন কর্মকর্তার নাম ধরে বলা হচ্ছে, সেখানে আমি বিশ্বাসযোগ্যতার কিছুটা ঘাটতি দেখছি৷ যার কথা বলা হচ্ছে তিনি একজন জাতীয় মানের নেতা নন৷ একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার হেফাজতে যদি তিনি থাকেন এবং সেই কর্মকর্তা যদি তাকে রক্ষা করতে চান, তাহলে সেটা না পারার কোনো কারণ দেখি না৷ তাই এক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব দেখছি৷ এর আগেও আমি ফাঁস হওয়া ফোনে কথাবার্তা শুনেছি৷ কিন্তু কেউ যদি জড়িত থাকে, তাহলে সে কেন ফাঁস করবে? পদ্ধতিগতভাবে এগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে৷ রাজনৈতিকভাবে এগুলোকে ব্যবহার করার প্রবণতা আছে৷ তবে এ ধরনের ঘটনা একেবারে ঘটছে না সেটাও আমি বলছি না৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা দেখছি, রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের জন্য ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যকে ব্যবহার করে হয়ত কোনো কোনো ঘটনা ঘটিয়েছে৷ কিন্তু আমি যে জায়গাটিতে গুরুত্ব দিতে চাই তা হলো, এ সব ঘটনা যখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে যাচ্ছে তারা সেটিকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছেন কিনা, কিংবা এর পেছনে কোনো দলগত রাজনৈতিক নির্দেশনা আছে কিনা৷ এখন পর্যন্ত সে রকম কিছু আমাদের চোখে পড়েনি৷ বাংলাদেশের জনসংখ্যার তুলনায় এ ধরনের ঘটনা সংখ্যানুপাতে যতটা, তা আমার মতে কম৷ কিন্তু সংগঠনগুলো যেভাবে এগুলো তুলে ধরছে, তা ভূ-রাজনীতিমুক্ত নয়৷

তাহলে যারা গুম করছে পরবর্তীতে তাদের ধরা হচ্ছে না, এমন অভিযোগও আছে৷ সেক্ষেত্রে অভিযোগের আঙ্গুল কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দিকেই আসে৷ শুধু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনই নয়, দেশীয় সংগঠনগুলোও তাই বলছে৷

তা তো আসছেই৷ তারা তাই করছেন৷ কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে৷ তারা যতটা এ সব রিপোর্ট প্রকাশ করতে আগ্রহী, ততটা আগ্রহ এগুলো দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করায় দেখা যায় না৷ তারা দেন দরবার করে এগুলো আইনের আওতায় আনতে আগ্রহী নন৷ রিপোর্ট প্রকাশ করতে বেশি আগ্রহী৷

এই যে গণমাধ্যমে, সামাজিক গণমাধ্যমে এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দিকে এসব কারণে যে আঙুল তুলছে, তাতে নিশ্চয়ই তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে৷ এই ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে তাদের কী করা উচিত? সেক্ষেত্রে সরকারেরই বা কী করা উচিত বলে আপনার মনে হয়?

প্রতিবছর আইন রক্ষা করতে বা দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হওয়া এবং আইন অপব্যবহারের কারণে অনেক সংখ্যক পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়, যা যতদূর আমি জানি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়৷ কিন্তু মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগগুলোই তুলে ধরছেন৷ কিন্তু তার জন্য যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে তা প্রকাশ করছেন না৷ ব়্যাব-এও এ সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে৷ কিন্তু সবাইকে বিষয়গুলোকে আরো পাবলিক করতে হবে৷ নৈতিকভাবে আমি মনে করি, এ ধরনের অভিযোগ এলে তা দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া উচিত৷ আর রাজনৈতিকভাবে আমি মনে করি, যদি এমন অভিযোগ আসে, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যেন তা ঢেকে ফেলতে না পারেন সরকারের পক্ষ থেকে তেমন স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা উচিত৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷