আনন্দ আর আন্দোলনের প্রস্তুতিতে এবারের ঈদ
১০ এপ্রিল ২০২৪রোজায় এবার ইফতার পার্টি করতে নিষেধ করে দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তার পরিবর্তে তারা ইফতার সামগ্রী ও ঈদ উপহার বিতরণ কর্মসূচি পালন করেছেন৷
আর বিএনপি মাস জুড়ে ইফতার মহাফিলের মাধ্যমে জনসংযোগ করেছে৷ নিহত, আটক ও পলাতক নেতা-কর্মীদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে৷ ঈদের দিন তারা শুভেচ্ছা উপহার বিতরণ করবেন৷ সারাদেশে নেতারা যে যার সাধ্যমতো দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তার শুভেচ্ছা উপহার পৌঁছে দেবেন৷ তাই যেসব কেন্দ্রীয় নেতাদের পক্ষে এলাকায় যাওয়া সম্ভব তাদের ঈদে যার যার এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে৷
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা বিশেষ করে যারা সংসদ সদস্য তাদের ঈদের দিন এলাকায় থেকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে বলা হয়েছে৷ তবে উপজেলা নির্বাচনের কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এমনিতেই মাঠে আছেন৷ এবার দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন হওয়ায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগেরই প্রতি উপজেলায় চার-পাঁচজন করে প্রার্থী আছে৷ তাদের মধ্যে ‘জনসেবার’ প্রতিযোগিতা চলছে৷ ঈদেও তা অব্যাহত থাকবে৷ বিএনপি এখনো দলীয়ভাবে এই নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারে অনড় আছে৷ তবে যেহতু কোনো প্রতীক থাকবেনা তাই কেউ কেউ প্রার্থী হবেন৷ জামায়াত থেকেও প্রার্থী হতে পারে৷ তারাও এলাকায় সক্রিয় আছেন৷
ঈদ নির্বাচন একাকার
প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলায় নির্বাচন হচ্ছে ৮ মে৷ তারমধ্যে একটি উপজেলা পিরোজপুরের নাজিরপুর৷ নাজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শেখ মোস্তাফিজুর রহমান৷ তিনি বর্তমানে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এবং এবারও একই পদে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন৷ তিনি বলেন, “এবার উপজেলা নির্বাচনের কারণে ঈদের আনন্দ ডাবল হয়ে যাচ্ছে৷ আওয়ামী লীগ থেকেই চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী আছেন৷ বিএনপির প্রার্থী এখনো দেখা যাচ্ছেনা৷ ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচ-ছয়জন হবে৷”
তিনি জানান, “প্রার্থীরা যার যার সাধ্যমতো ভোটারদের ঈদ উপহার দিচ্ছেন৷ নেতা-কর্মীরাও পাচ্ছেন৷ প্রার্থীরা রোজার মধ্যেই জনসংযোগ করেছেন৷ ঈদে এটা বেড়ে যাবে৷ আমিও আমার সাধ্য মতো করছি৷ কেন্দ্রীয় নেতারাও চলে এসেছেন ৷ তবে তারা কেউ প্রভাব বিস্তার করছেন না৷ ”
তার কথা,“ ভোট যেহেতু প্রতীকে হচ্ছেনা তাই আমি আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত সবার ভোট চাইছি৷”
টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলায়ও প্রথম ধাপে নির্বাচন হচ্ছে৷ সেখানে আওয়ামী লীগের তিনজন প্রার্থী মাঠে আছেন৷ এখনো অন্য কোনো দলের প্রার্থী নেই৷ তবে ভাইস চেয়ারম্যান পদে জামায়াতের একজন প্রার্থী আছেন৷ সেখানকার উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী শরীফ আহমেদ নাসির বলেন, “এবার ঈদ নির্বাচনি প্রচারে রূপ নিচ্ছে৷”
আর কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায়ও একই চিত্র৷ সেখানে প্রথম ধাপে নির্বাচন হওয়ায় প্রার্থীরা মাঠে রয়েছেন৷ রোজায় তো তারা ইফতার সামগ্রী বিতরণ করেছেন৷ ঈদের উপহার দিয়েছেন৷ আর ঈদের দিন প্রার্থীরা খাওয়া দাওয়ারও আয়োজন করেছেন৷ লাকসাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ইউসুফ ভুঁইয়া বলেন, “সব প্রার্থীরাই তাদের কর্মী সমর্থকদের নিয়ে মাঠে আছেন৷ ঈদের দিনও থাকবেন৷ আসলে আমাদের ঈদ আর নির্বাচন এবার এক হয়ে গেছে৷”
বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির সরদার বলেন, “সব প্রার্থীই ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান করছেন৷ খাওয়া দাওয়ার আয়োজন আছে৷ আমার উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী আছেন চার জন৷ সবাই আওয়ামী লীগের৷”
বিএনপির প্রার্থীরা এখনো প্রকাশ্যে নেই৷ অনলাইনে মনোনয়ন দাখিল করায় এখনো জানা যাচ্ছেনা৷ তবে আগ্রহী প্রার্থী আছে৷ গফরগাঁও জেলার বদলগাছি উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল বলেন, “আমাদের দলীয় সিদ্ধান্ত হলো আমরা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছিনা৷ তকে দুই-চার জন অংশ নিতে পারে৷ তাদের ব্যাপারে দল সিদ্ধান্ত নেবে৷”
“তাই বলে আমরা ঈদে জনবিচ্ছিন্ন নই৷ জনগণের সঙ্গেই আছি৷ রোজার পুরো একমাস আমি আমার এলাকায়ই আছি৷ সবাইকে নিয়ে ইফতার করেছি৷ সাধ্যমত সহায়তা করেছি৷ ঈদেই সাধারণ মানুষের সঙ্গেই থাকব,” বলেন তিনি৷
দলীয় কর্মসূচি
এবার আওয়ামী লীগের নেতারা বিশেষ করে যারা মন্ত্রী এমপি হয়েছেন তারা দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঈদ করবেন৷ ঢাকার সংসদীয় আসনগুলোতে এজন্য এমপিদের আলাদা আলাদা আয়োজন আছে৷ আর যারা ঢাকার বাইরের তাদের ঈদের দিন এলাকায় থাকতে বলা হয়েছে৷ সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ ও শুভেচ্ছা বিনিময় করতে বলা হয়েছে৷ এরমধ্যে অনেকেই এলাকায় চলে গেছেন৷ আবার কেউ কেউ ঈদ সমাগ্রী বিতরণ করে ঢাকায় চলে এসেছেন৷ তারাও ঈদের দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গণভবনে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে বিকেলে এলাকায় চলে যাবেন৷ যারা এবারই নতুন এমপি হয়েছেন তাদের এলাকার প্রতি আগ্রহ বেশি৷ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এম এম কামাল হোসেন বলেন, “আমি তো পুরো রোজায় বলতে গেলে আমার এলাকা খুলনায়ই ছিলাম৷ ঈদের পরের দিন আবার এলাকায় চলে যাবা৷ ঈদ উপহার বিতরণ করে আমি দুইদিন আগে ঢাকায় এসেছি৷”
তিনি বলেন, “এবার প্রধানমন্ত্রী ইফতার পার্টি করতে নিষেধ করে দিয়ে রোজায় সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে নেতা -কর্মীদের নির্দেশ দেন৷ আমরা সেভাবেই কাজ করেছি৷ সব নেতারাই রোজার মধ্যে এলাকায় গিয়েছেন৷ ঈদেও অনেকে এলাকায় থাকবেন৷”
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,“ উপজেলা নির্বাচনের কারণে এখন অনেকেই যার যার এলাকায় আছেন৷ প্রার্থীরা রোজা ঈদকে কাজে লাগাচ্ছেন৷ দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না হলেও মন্ত্রী-এমপিদের যার যার এলাকায় পছন্দের প্রার্থী আছে৷ ফলে এবার ঈদের সঙ্গে নির্বাচনের আমেজ আছে৷”
এর বাইরে যারা আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র এমপি হয়েছেন তারাও রোজা ঈদ কেন্দ্রিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন৷ তারা এলাকায় তাদের অবস্থান আরো সংহত করতে এটাকে কাজে লাগাচ্ছেন বলে জানাগেছে৷
বিএনপি যা করছে
ঈদের দিন বিএনপি নেতারা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারতের পর খালেদা জিয়ারা বাসায় তার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতে যাবেন৷ আর তাদের সবচেয়ে বড় কর্মসূচি হলো বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের আটক পলাতক ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের কাছে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার পৌঁছে দেয়া৷ আর এরইমধ্যে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে শরীক দলগুলোর নেতাদের বাসায় তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার পৌঁছে দেয়া হয়েছে৷
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, “আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে আছেন৷ অনেকে নিহত হয়েছেন, নিখোঁজ আছেন৷ পুরো রমজান জুড়েই আমরা তাদের পরিবারের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি৷ ঈদের দিনও তাদের পাশে থাকব৷ আমরা আমাদের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদ করব৷ আমাদের নেতারা অনেকেই এখন যার যার এলাকায় আছেন৷ রোজায়ও ছিলেন৷ আমরা পুরো রোজায় ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে জনসংযোগ করেছি৷ ঈদেও তাই করব৷ আমরা ঈদে একটি মেসেজ দিচ্ছি৷ আর তা হলো ভোটের অধিকার৷ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন৷”
ঈদের পরে নতুন কর্মসূচি
বিএনপি নেতা সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, “আমরা আন্দোলনের মধ্যেই আছি৷ ৭ জানুয়ারি গ্রহসনের নির্বাচনের পর মানুষ আমাদের কাছে নতুন কর্মসূচি আশা করছে৷ এটা নিয়ে আলোচনা চলছে৷ ঈদের পরে দ্রব্যমূল্য নিয়ে আমরা নতুন ধরনের কর্মসূচি দিতে পারি৷” তার কথা,“ রমজানে আমাদের ইফতার মাহফিলগুলো জনসভায় পরিণত হয়েছে৷ নেতা-কর্মীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে৷ এর মাধ্যমে আমরা নতুন করে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছি৷”
এর জবাবে আওয়ামী লীগ নেতা এস এম কামাল হোসেন বলেন, “বিএনপি মাঠে থাকলে তো ভালো৷ আমরা সতর্ক থাকতে পারি৷ তবে তারা জ্বালাও পোড়াও করলে জনগণ প্রতিহত করবে৷