সীমান্তে বেড়া দিচ্ছে পাকিস্তান
২৭ মার্চ ২০১৭আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে আরও একধাপ এগিয়ে গেল পাকিস্তান৷ শনিবার তারা জানিয়েছে, পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে তারা বেড়া দেয়া শুরু করেছে৷ ইসলামাবাদ বলছে, আফগানিস্তান থেকে যেসব ইসলামি জঙ্গি তাদের দেশে এসে হামলা চালায়, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তেই এই উদ্যোগ নিয়েছে তারা৷
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার বাজওয়া শনিবার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের আদিবাসী এলাকা সফর করে বেড়া নির্মাণের ঘোষণা দেন৷ ঐ এলাকাটিকে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি৷ তবে এই ঘোষণায় কেবল আফগানিস্তান নয়, পাকিস্তানের পশতু ভাষীরাও নিন্দার ঝড় তুলেছেন৷
প্রতিদিন লাখো আফগান ও পাকিস্তানি ড্যুরান্ড সীমান্ত অতিক্রম করে, যেটি পাক-আফগান সীমান্তের ২,৪৩০ কিলোমিটার সীমান্ত রেখা৷ তবে আফগান সরকার ওই রেখাকে আনুষ্ঠানিকভাবে আফগান-পাকিস্তান সীমান্ত বলে স্বীকার করেনি৷ দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমেই খারাপ হওয়ায় এবার পশতুনদের জন্য একটা অশনিসংকেত দেখা দিয়েছে৷ ইসলামাবাদ এরইমধ্যে দুই দেশের মধ্যকার সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করেছে৷ চলতি বছরের মার্চের ৭ তারিখে এখানকার পাক-আফগান সীমান্তটি সাময়িকভাবে তারা খুলে দিয়েছিল৷ ফেব্রুয়ারিতে জঙ্গি হামলায় বেশ কিছু সাধারণ মানুষ নিহতের পর ওই সীমান্ত বন্ধ করেছিল ইসলামাবাদ৷ আফগানিস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাজিব দানিশ সংবাদ সংস্থা এপিকে বলেছেন, সীমান্তে বেড়া দেওয়ার বিষয়ে কিছুই জানে না আফগান কর্তৃপক্ষ৷ এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়া হলে আফগানিস্তান তা যে কোনো উপায়ে প্রতিরোধ করবে৷
বিশেষজ্ঞদের মত
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফগান ও পাকিস্তানের পশতুনদের মধ্যে সম্পর্কের গভীরতা অনেক৷ তাই যে কোনো সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি এখানে ধোপে টিকবে না৷ এছাড়া দু'দেশের হোটেল ব্যবসা, যাতায়াত ক্ষেত্রে অনেকের ভাগ্য জড়িয়ে রয়েছে৷ সম্প্রতি এমন অনেক ব্যবসায়ীর পরিচয়পত্র নবায়ন করতে রাজি হয়নি পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ৷
সন্ত্রাসবাদ এবং বাণিজ্য
আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলের কুনার প্রদেশে সীমান্তবর্তী এলাকায় থাকেন জুমা খান৷ তিনি জানিয়েছেন, পাকিস্তানি সীমান্তরক্ষীরা সেই অঞ্চলে প্রায়ই বোমা নিক্ষেপ করে৷ এদের কারণে তারা স্বাধীনভাবে এলাকায় চলাচল করতে পারেন না বলে ডয়চে ভেলের কাছে অভিযোগ করেন তিনি৷ প্রতি বছর ড্যুরান্ড সীমান্ত দিয়ে দুই দেশের মধ্যে প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়৷ এছাড়া অবৈধ দ্রব্যের বাণিজ্য এবং পাচার তো হয়ই৷
বিখ্যাত কবি সুলেমান লায়েক ডয়চে ভেলেকে বলেন, সীমান্তে বেড়া দেয়া হলে দুই দেশের মধ্যে সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না৷ বেড়া দেয়ার সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই সরকারের হতে পারে না, বরং ঐসব এলাকার পশতুনরা সেই সিদ্ধান্ত নেবে৷ কারণ এটা কেবল তাদেরই অধিকার, যারা এসব এলাকায় বসবাস করে৷
আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
শামিল শামস/এপিবি