উত্তর কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা কমানোর উপায়
১০ আগস্ট ২০১৭বৃহস্পতিবার উত্তর কোরিয়ার বার্তা সংস্থা কেসিএনএ লিখেছে, ‘‘তাঁর (ট্রাম্প) মতো ব্যক্তির সঙ্গে সফল আলোচনা সম্ভব নয়৷ শুধুমাত্র কঠোর বলপ্রয়োগই তাঁর ক্ষেত্রে কাজ করবে৷’’ ট্রাম্পের হুমকিকে ‘সম্পূর্ণ অর্থহীন’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যানও করেছে দেশটি৷
পরমাণু কার্যক্রমের কারণে জাতিসংঘ উত্তর কোরিয়ার উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারির পর দেশটি ওয়াশিংটনকে ‘মারাত্মক শিক্ষা’ দেয়ার হুমকি দেয়৷ এর প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প জানান, উত্তর কোরিয়া নতুন করে অ্যামেরিকার বিরুদ্ধে আরও হুমকি দিলে সে দেশের উপর এমন মারাত্মক হামলা চালানো হবে, যা বিশ্বে কেউ কখনো দেখেনি৷ ট্রাম্পের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় উত্তর কোরিয়া গুয়ামের উপর হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে৷
যোগাযোগের উপায়
উত্তর কোরিয়ার হুমকির পর বিশ্লেষকরা উত্তেজনা প্রশমনের উপায় নিয়ে ভাবছেন৷ কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকায় কোনো এক পক্ষের নেয়া পদক্ষেপ যদি অন্যপক্ষ সঠিকভাবে বুঝতে না পেরে পালটা প্রতিক্রিয়া জানায় তাহলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশংকা করছেন তাঁরা৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কাছে অনেক পরমাণু অস্ত্র থাকলেও পরিস্থিতি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় সেজন্য ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে হটলাইন, স্যাটেলাইট সহ নানান ব্যবস্থা চালু আছে৷ এমনকি ভারত ও পাকিস্তানও প্রতিবছর জানুয়ারিতে যার যার পরমাণু অস্ত্রের সংখ্যা এবং সেগুলো কোথায় আছে তা একে অন্যকে জানিয়ে থাকে৷ এর মাধ্যমে কোনো পক্ষ যেন ভুল করে কোনো পরমাণু স্থাপনায় হামলা না চালায় সেটি নিশ্চিত করা হয়েছে৷
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় চিন্তিত বিশ্লেষকরা৷ সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার একজন উপদেষ্টা জন ওল্ফসথাল রয়টার্সকে বলেছেন, ‘‘আমাদের মধ্যে (দুই দেশের মধ্যে) কিছু অ্যাডহক ও অ্যানালগ উপায়ে যোগাযোগের ব্যবস্থা আছে৷ কিন্তু সংকট সমাধানে কার্যকর হতে পারে এমন পরীক্ষিত কোনো মাধ্যম নেই৷’’
জাতিসংঘে থাকা যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার মিশনের মাধ্যমে অনেক সময় দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ হয়ে থাকে৷ এছাড়া বেইজিংয়ে দুই দেশের দূতাবাসের মাধ্যমেও যোগাযোগ হয়৷ আর দুই দেশের সামরিক কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনা হয় পানমুনজমে৷ কোরীয় উপত্যকায় অবস্থিত এই স্থানেই ১৯৫০-৫৩ কোরীয় যুদ্ধের সময় যুদ্ধবিরতি চুক্তি সই হয়েছিল৷
এছাড়া চীন কিংবা সুইডেনের মাধ্যমেও কখনও কখনও যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়ার কাছে বার্তা পাঠিয়ে থাকে৷
গুয়াম সম্পর্কে কিছু তথ্য
১৮৯৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ গুয়াম৷ তবে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখন্ড থেকে এটি অনেক দূরে অবস্থিত৷ তবে জাপান, কোরিয়া, ফিলিপাইন্স থেকে এটি কাছে৷ পিয়ংইয়ং থেকে গুয়ামের দূরত্ব প্রায় সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার৷ জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার পর্যটকরা গুয়ামে বেড়াতে যান৷
গুয়ামে জন্ম নেয়া শিশুরা মার্কিন নাগরিক হলেও তাদের ভোটাধিকার নেই৷
গুয়ামে যুক্তরাষ্ট্রের নৌ ও বিমানঘাঁটি রয়েছে৷ প্রায় ছয় হাজার মেরিন সেনা সেখানে মোতায়েন রয়েছে৷ পঞ্চাশের দশকে কোরীয় যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র গুয়াম ঘাঁটি ব্যবহার করেছে৷ এছাড়া ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ও গুয়ামের বিমানঘাঁটি বহুল ব্যবহৃত হয়েছে৷
জেডএইচ/ডিজি (রয়টার্স, এপি)