1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উপকূল অতিক্রম মোকার, টেকনাফ ও কক্সবাজার বেশি ক্ষতির মুখে

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৪ মে ২০২৩

ঘূর্ণিঝড় মোকা বাংলাদেশের উপকূল অতিক্রম করে চলে গেছে। বিকেল তিনটেয় আঘাত করে সন্ধ্যায় উপকূল অতিক্রম করে।

https://p.dw.com/p/4RKqG
কক্সবাজার জেলার টেকনাফসহ ভিন্ন এলাকায় কাঁচা ও আধাপাকা দুই হাজারের মত ঘর-বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে
কক্সবাজার জেলার টেকনাফসহ ভিন্ন এলাকায় কাঁচা ও আধাপাকা দুই হাজারের মত ঘর-বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছেছবি: Mohibullah Mohib/DW

দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, যত তীব্রতায় আঘাত হানার কথা ছিলো আঘাতের তীব্রতা তত নয়। আঘাতের সময়  সেন্ট মার্টিনে বাতাসের গতিবেগ ১৪৭ কিলোমিটার ছিলো বলে আবহওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।

মোকা আঘাত হানে ভাঁটার সময়। দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতায় প্লাবিত হয়েছে।

সারা দেশে হতাহতের বড় কোনো খবর পাওয়া না গেলেও, কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি, ফসল ও গবাদি পশুর ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে।

'মোকায় কোনো হতাহতের খবর নেই'

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার মোকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ সর্বাধিক ক্ষতির মুখে পড়েছে। সেন্ট মার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান রবিবার বিকেল পাঁচটার দিকে জানান," বাতাসের  গতিবেগের তীব্রতায় স্থাপনাগুলো যেন কেঁপে কেঁপে উঠছে। তবে সেন্টমার্টিন তখনো পানি নিচে যায়নি। সাগরে তীব্র ঢেউ ও পানির উচ্চতা বেড়েছে। সেখানকার সাত হাজার মানুষের সবাইকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে।” আগেই তিন হাজার অধিবাসী টেকনাফে গিয়ে আশ্রয় নেন।''

তবে টেকনাফের বাসিন্দা রাসেল আহমেদ ডয়চে ভেলেকে বলেন," তার কিছু আত্মীয়-স্বজন সেন্ট মার্টিনে আছেন। বিকেল তিনটার পর থেকে তিনি আদের আর টেলিফোনে পাচ্ছেন না। তার ধারণা," সেন্ট মার্টিনের মোবাইল নেটওয়ার্ক কোথাও কোথাও বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে।”

তিনি জানান," আমার কাছে যে খবর আছে তাতে কিছু মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে যাননি। তারা তাদের বাড়ি ঘর- গবাদি পশু ফেলে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চান না দ্বীপ প্লাবিত হলে হয়তো যাবেন। প্রচুর বাড়িঘর উড়ে গেছে। গবাদি পশু ভেসে গেছে।''

তিনি বলেন, তার স্বজনরা দুপুরের দিকে সেন্ট মার্টিনে গাছ পড়ে দুই জনের মৃত্যুর খবর তাকে জানিয়েছেন। তবে সেন্ট মার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান এধরনের মৃত্যুর খবরের কথা অস্বীকার করেছেন।

দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতায় প্লাবিত হয়েছে
দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতায় প্লাবিত হয়েছেছবি: Mohibullah Mohib/DW

সেন্ট মার্টিনের পর টেকনাফের মোকার আতঙ্ক সবচেয়ে বেশি ছিলো। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে জানান," ৩০ হাজার মানুষকে তারা আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়েছেন। মোট আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১০৬টি। তবে বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিছু বাড়ি-ঘর ও গাছপালা উড়ে গেছে। জনপদে জলোচ্ছ্বাস হয়নি।”

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান সন্ধ্য ছয়টার দিকে জানান, "  বাতাসের তীব্রতা  তেমন নেই তবে সাগরে ঢেউ আছে। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আমি এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সমুদ্র সৈকতেই আছি।” তিনি বলেন," গাছ ও ঘর-বাড়ি ভেঙে কিছু লোক আহত হয়েছেন। তবে কোনো হতাহতের খবর আমরা পাইনি।”

তিনি বলেন," প্রাথমিক তথ্য যা পেয়েছি তাতে এ পর্যন্ত কক্সবাজার জেলার টেকনাফসহ ভিন্ন এলাকায় কাঁচা ও আধাপাকা  দুই হাজারের মত ঘর-বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হজারের মতো ঘরবাড়ি। তবে গবাদি পশুর হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি।”

বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে: ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

সন্ধ্যায় মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি যাওয়া শুরু করেছেন বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন,"দুই লাখ ৪০ হাজার লোককে আমরা আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে পেরেছি। পুরো জেলায় আমরা সব মিলিয়ে ৬০০ আশ্রয়কেন্দ্র খুলি। এর ধারণ ক্ষমতা ছয় লাখ মানুষ।”

কক্সবাজারে শরণার্থী ক্যাম্পে ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আছেন। তারাও আতঙ্কে ছিলেন। শরানার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার শামসুদ্দোজা নয়ন জানান," রোহিঙ্গাদের কিছু ঘর উড়ে গেছে। তাদের ক্যাম্পের খোলা জায়গায় যেসব স্থাপনা আছে সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে। অধিকাংশই ক্যাম্পে যার যার ঘরে আছেন। এখন পর্যন্ত বড় কোনো ক্ষয়ক্ষতি বা আহত-নিহতের খবর পাওয়া যায়নি।”

চট্টগ্রামের জেলা জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জানান, জেলার বাঁশখালী উপজেলায় ১১০ টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪৫ হাজার ১৪৩ জন, সন্দ্বীপ উপজেলায় ১৬২ টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৯ হাজার ৮৮৫ জন, আনোয়ারা উপজেলায় ৩৩ টি আশ্রয়কেন্দ্রে  পাঁচ হাজার ২৮০ জন, সীতাকুণ্ড  উপজেলায় ৬২ টি আশ্রয়কেন্দ্রে এক হাজার ২৮৯ জন; কর্ণফুলী উপজেলায় ১৮ টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২০০ জন এবং মিরসরাইয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে ৬০ জন আশ্রয় নিয়েছেন।

ওইসব উপজেলায় কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আহত বা নিহতের কেনো খবর পায়নি জেলা প্রশাসন।

এদিকে ঝড়ে চট্টগ্রামের গভীর সমুদ্রে একটি এলএনজি স্টেশন ভেসে গেছে। এর ফলে দেশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট দেখা দিয়েছে। দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎ সংকট। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ খান জানিয়েছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে দুই-তিনদিন সময় লাগবে।

দেশের উপকূলীয় জেলা ফেনী, নোয়াখালি, লক্ষীপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুণায় মোকার প্রভাবে ক্ষয়ক্ষতি হলেও তা তা খুব বেশি নয় বলে জানা গেছে। এসব এলাকায় কাঁচা বাড়ি-ঘর, গবাদি পশু ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে ঝড়ের কারণে দেশের ছয়টি শিক্ষা বোর্ডের এসএসসিপরীক্ষা স্থগিত রাখা হয়েছিলো।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও  ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন," ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র টেকনাফ থেকে ৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ দিক দিয়ে গেছে সেজন্য তীব্রতা কম এবং বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতি কম হয়েছে। আমরা মিয়ানমারের সিটুয়ে শহরের ছবি দেখেছি। সেখানে ইলেট্রিক পোল ও বাড়িঘর উড়ে গেছে।”

তিনি জানান," সেন্ট মার্টিন, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে সাত লাখ ৫০ হাজার মানুষকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ''ঘূর্ণিঝড় তো চলে গেছে।এখন মানুষ বাড়ি ঘরে যাবে। তারপর ক্ষয়ক্ষতি দেখে পরবর্তী পুনর্বাসন কাজ শুরু হবে।''

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বরিশাল বিভাগে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হচ্ছে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।

পদ্মা ও মেঘনা-সহ নদীগুলো উত্তাল রয়েছে। সব ধরনের নৌ-যান চলাচল বন্ধ আছে।