এটিএম থেকে টাকা উধাও, আতঙ্ক কলকাতায়
৬ ডিসেম্বর ২০১৯টাকা তোলার পদ্ধতি হিসেবে অটো ট্রেলার মেশিন (এটিএম) জনপ্রিয় হয়েছে বহুদিন৷ যে এটিএম কার্ড ও পিন ব্যবহার করে গ্রাহকরা টাকা তোলেন, তা হাতিয়ে নিচ্ছেন জালিয়াতরা৷ কলকাতা শহরে এটিএম প্রতারণা এই প্রথম নয়৷ তবে গত কয়েকদিন ধরে বড় সংখ্যায় এটিএম জালিয়াতির ঘটনা সামনে এসেছে৷ শুধু যাদবপুর থানাতেই ২৪ জন অভিযোগ দায়ের করেছেন৷ তাঁদের মধ্যে অধিকাংশেরই দাবি, তাঁরা কাউকে এটিএম কার্ড বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য দেননি, তা সত্ত্বেও তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা লোপাট হয়ে গেছে৷ অনেকের মোবাইলে টাকা তোলার মেসেজ আসার পর তাঁরা জানতে পেরেছেন বিষয়টি৷ আবার অনেকের কাছে ব্যাংকের এসএমএস আসেনি৷ দফায় দফায় বিভিন্ন গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে গেছে হাজার হাজার টাকা৷
কার্ড বা অ্যাকাউন্টের তথ্য না দিলেও কীভাবে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে জালিয়াতরা? তারা দুটি পদ্ধতিতে এই কাজ করে৷ প্রথমত, কোনো পাহারার ব্যবস্থা না রেখেই এটিএমে্ ক্যামেরা ও স্কিমিং মেশিন লাগিয়ে দিচ্ছে প্রতারকরা৷ কোনো গ্রাহক এসে টাকা তুললে তাঁর কার্ডের ছবি ও পিন রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে ওই যন্ত্রে৷ পরে কোনো এক সময় প্রতারকরা এটিএমে এসে যন্ত্র খুলে নিয়ে চলে যাচ্ছে৷ সেখান থেকে তথ্য বের করে তৈরি করছে নকল এটিএম কার্ড৷ পিনের সাহায্যে দেশের যে কোনো জায়গা থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে৷ যাদবপুরের একাধিক গ্রাহকের অভি্যোগ, তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে দিল্লি বা অন্যান্য শহরের এটিএমের মাধ্যমে টাকা তোলা হয়েছে৷ এই জালিয়াতির ক্ষেত্রে ব্যাঙ্ক কর্মকর্তা ও পুলিশ এটিএমে তল্লাশি চালিয়ে যন্ত্র খুলে নিলে তথ্য প্রতারকদের হাতে পড়ার সম্ভাবনা থাকতো না৷ এই বাধাও অতিক্রম করে ফেলেছে জালিয়াতরা৷
দ্বিতীয় পদ্ধতিতে তারা লাইভ স্ট্রিমিং-এর সাহায্য নিচ্ছে৷ অর্থাৎ এটিএমের কি-প্যাড বা কার্ড স্লটে যে স্কিমিং মেশিন ও ক্যামেরা বসানো থাকছে, সেখান থেকে তথ্য সরাসরি চলে যাচ্ছে দুষ্কৃতীদের হাতে৷ ফলে তল্লাশিতে যন্ত্র উদ্ধার হলেও তথ্য আগেই চলে যাচ্ছে দুষ্কৃতীদের হাতে৷ কিছুই জানতে পারছেন না গ্রাহক৷ এত দিন ভুয়া পরিচয় দিয়ে ফোন করে কার্ড ও অ্যাকাউন্টের তথ্য হাতিয়ে নিত প্রতারকরা৷ এ ব্যাপারে জনতা অনেকটা সাবধান হয়ে যাওয়ায় বিকল্প পথে ঠকানো হচ্ছে৷ একের পর এক ঘটনার খবর সামনে আসায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে গ্রাহকদের মধ্যে৷ তাঁদের অভিযোগ, ব্যাংকের তরফ থেকে সেভাবে সচেতন করা হচ্ছে না৷ ব্যাংকের শাখায় গেলে তেমন কোনো সুপরামর্শ দিতে পারছেন না আধিকারিকরা৷
সাইবার অপরাধ ঠেকাতে এই জনসংযোগের কাজ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন প্রাক্তন পুলিশ কর্মকর্তা সন্ধি মুখোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রতারিত মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে পুলিশ ও ব্যাংকের প্রতিনিধিদের৷ কীভাবে তাঁরা প্রতারিত হয়েছেন, বুঝতে হবে৷ সময় দিয়ে কথা বলে মানুষকে ভরসা জোগানো জরুরি৷’’ গ্রাহকদের অনেকেই এখন এটিএম এড়িয়ে চলছেন, ব্যাংকে চেক কেটে টাকা তুলছেন৷ এর ফলে ব্যাংকে ভিড় বাড়ছে৷ যাদবপুরের বাসিন্দা সুকান্ত দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘অধিকাংশ এটিএমে নিরাপত্তারক্ষী থাকে না৷ সেখানে যাওয়ার প্রশ্নই নেই৷ রক্ষী থাকলেও যে জালিয়াতি হবে না সেই ভরসা পাচ্ছি না৷ তবু সব এটিএমে নিরাপত্তাকর্মী রাখার ব্যবস্থা করা উচিত৷’’
কলকাতার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের আধিকারিক গ্রাহকদের জন্য সতর্কতামূলক কিছু পরামর্শ দিয়েছেন৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটিএমে রক্ষী থাকুক বা না থাকুক, নিজেকেই সতর্ক হতে হবে৷ দেখে নিতে হবে কার্ড স্লটে কোনো আলগা বস্তু আছে কিনা৷ সন্দেহজনক কিছু দেখলে জানাতে হবে ব্যাংক ও থানাকে৷ পিন নম্বর দেওয়ার সময় হাত দিয়ে আড়াল করতে হবে কি-প্যাড৷ বিপণিতে পিওএস-এ কেনাকাটার সময়ও পিন দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা জরুরি৷’’ কলকাতা পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগ পরিচালিত হয় সদর দপ্তর লালবাজার থেকে৷ সন্ধি মুখোপাধ্যায়ের পরামর্শ, ‘‘এই বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ করা উচিত৷ একটির বদলে একাধিক ডিভিশনে আলাদা আলাদা ইউনিট রাখা দরকার৷ তাহলে অপরাধের অভিযোগ নিয়ে দ্রুততা সঙ্গে কাজ করতে পারবে পুলিশ৷’’
২০১৭ সালের ছবিঘরটি দেখুন...