‘এমএইচ৩৭০ খুঁজতে অস্ট্রেলিয়ার চেষ্টা অর্থের অপচয়'
৭ মার্চ ২০১৫দুর্ঘটনার পর শুরু হয় ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল উদ্ধার তৎপরতা৷ মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার যৌথ আর্থিক উদ্যোগে প্রায় ৯৩ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে চলছে হারিয়ে যাওয়া বিমানের খোঁজ৷
বছরব্যাপী খোঁজের এক পর্যায়ে মালয়েশিয়ার সরকার দাবি করে যে, দুর্ঘটনার কারণ বিমানটি হারিয়ে গেছে এবং বিমানে থাকা সবাই নিহত হয়েছেন৷ কিন্তু যাত্রীদের আত্মীয়স্বজন এই দাবি মানতে রাজি নন৷ তাঁরা বলছেন, সরকার যে দাবি করছে তার পক্ষে কোনো যুক্তি তারা এখনও দাঁড় করাতে পারেনি৷ কোনো এক সময় উদ্ধারকাজও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আত্মীয়স্বজনরা৷
এঁদেরই একজন সারাহ বাইচ৷ তাঁর সঙ্গী ফিলিপসও ঐ ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি মালয়েশীয় সরকারের দাবি বিশ্বাস না করার কারণ সহ অনেক কথা বলেছেন৷
ডিডাব্লিউ: এক বছর পার হতে চললো৷ এমএইচ৩৭০ আপনার জীবনে কী প্রভাব ফেলেছে?
সারাহ বাইচ: ফিলিপের হারিয়ে যাওয়া আমার জীবনকে সবদিক দিয়ে বদলে দিয়েছে৷ আমার প্রতিদিনের জীবন, আমার ভবিষ্যৎ সবকিছুতেই নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে৷ যেমন আমাদের যার যার কাজের বাইরে আমরা সবসময় একসঙ্গে থাকতাম৷ সকালে একসঙ্গে কফি পান করতাম, যোগাসন করতাম, রাতের খাবার রান্না করতাম, শহরে ঘুরে বেড়াতাম আর নিজেদের সব অনুভূতি শেয়ার করতাম৷ কিন্তু এখন আমি একা৷ এখন আমি স্কুলে পড়ানোর পাশাপাশি নিখোঁজ বিমানের তল্লাশি নিয়ে চিন্তা করি, আমার মতো যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন তাঁদের সঙ্গে কথা বলি, বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি৷
অন্য যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন তাঁরা বিমানের হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
বেশিরভাগ স্বজনই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন৷ এজন্য ‘ভয়েস৩৭০' নামে একটি অনানুষ্ঠানিক সংগঠনও তৈরি করেছি আমরা৷ তবে চীন ও মালয়েশীয় সরকারের বাধার কারণে আমরা একসঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বসতে পারছিনা৷
সরকার কী ধরনের বাধা দিচ্ছে?
চীন যেটা করছে সেটা হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের একসঙ্গে কোথাও মিলিত হতে দিচ্ছে না৷ সরকার বলছে সেটা নাকি অবৈধ৷ অনেককে বিচার ও হয়রানির ভয়ও দেখানো হচ্ছে৷
আর মালয়েশিয়ার সরকার নিখোঁজ যাত্রীদের পরিবারের সদস্যদের নিজেদের মধ্যে আলোচনাকে উৎসাহিত করছে না৷ বরং সরকার একবার বলছিল যে তারাই স্বজনদের নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠান করবে৷ কিন্তু সেটা করেনি৷
আপনিতো নিজ উদ্যোগ বিমান হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি তদন্ত করছেন৷ এখন পর্যন্ত কী ফল পেয়েছেন?
এখন পর্যন্ত যা জানতে পেরেছি তা হচ্ছে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের মুখ বন্ধ করতে এবং তথ্যপ্রমাণ ধ্বংস বা লুকিয়ে ফেলতে সক্রিয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷ এছাড়া উদ্ধার তৎপরতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেককে কথা না বলতে হুমকি দেয়া হয়েছে৷
কোনো একটি দুর্ঘটনার পর যে ধরনের তথ্য সাধারণত প্রকাশ করার কথা সেটা করা হয়নি৷ যেমন কার্গো তালিকা, এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের রেকর্ড, সামরিক রাডার রেকর্ডিং ইত্যাদি৷ এমএইচ৩৭০ যদি আসলেই দুর্ঘটনায় পড়ে থাকে তাহলে সেটা প্রমাণের জন্য তো এসব তথ্য প্রকাশ করার কথা৷ কিন্তু সেটা কেন হচ্ছে না?
বিমান নিখোঁজের ঘটনায় অস্ট্রেলিয়ার প্রতিক্রিয়াকে আপনি কীভাবে দেখছেন? আপনার কি মনে হয় বিমান সেখানে পাওয়া যাবে?
এমএইচ৩৭০ দক্ষিণ ভারত মহাসাগরে পতিত হয়েছে বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করিনা৷ ফলে অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোগে যে তল্লাশি চলছে সেটা আমার মতে পুরোপুরি অর্থের অপচয়৷ অস্ট্রেলিয়ার সরকার হয় খুব বোকা যে তারা কোনো তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই সাগরের গভীরে গিয়ে তল্লাশির দায়িত্ব নিয়েছে কিংবা তারা কিছু একটা লুকানোর প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত৷