এলডিসি দেশগুলোর উন্নয়ন থামিয়ে দিয়েছে করোনা: জাতিসংঘ
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১আঙ্কটাডের ‘লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিস রিপোর্ট ২০২১' বলছে, করোনা মহামারির কারণে দারিদ্র্য, শিক্ষা, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যক্ষেত্রে স্বল্পোন্নত দেশগুলো যে অগ্রগতি অর্জন করেছিল তা থেমে গেছে৷
গরিব দেশগুলোকে সহায়তা দিতে এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাজারে প্রবেশের সুযোগ দিতে ১৯৭১ সালে জাতিসংঘ ‘লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিস' বা এলডিসি গ্রুপ তৈরি করেছিল৷ বর্তমানে বাংলাদেশসহ ৪৬টি দেশ এই গ্রুপের অন্তর্গত৷ বাকি দেশগুলোর মধ্যে ৩৩টি আফ্রিকার, নয়টি এশিয়ার, তিনটি প্রশান্ত মহাসাগরীয় রাষ্ট্র ও অন্যটি হাইতি৷
স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে বিশ্বের ১৫ শতাংশ মানুষ (১১০ কোটি) বাস করে৷ তাদের মাত্র দুই শতাংশ লোক করোনার টিকা পেয়েছেন বলে জানিয়েছে আঙ্কটাড৷
এখন পর্যন্ত ছয়টি দেশ ‘স্বল্পোন্নত' থেকে ‘উন্নয়নশীল' দেশে পরিণত হয়েছে৷ এগুলো হচ্ছে বতসোয়ানা, কাবু ভ্যার্দি, মালদ্বীপ, সামোয়া, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি ও ভানুয়াতু৷
বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা
গত ফেব্রুয়ারিতে এলডিসি থেকে বের হয়ে যাওয়ার সুপারিশ পায় বাংলাদেশ৷ জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি এই সুপারিশ করে৷ তবে এজন্য ২০২৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷
আঙ্কটাডের প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে সোমবার এক ভার্চুয়াল আলোচনার আয়োজন করা হয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশে ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম৷ আঙ্কটাড কর্মকর্তারা বলেন, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলে এলডিসি হিসেবে পাওয়া আন্তর্জাতিক সুবিধাগুলো বন্ধ হওয়ার আগেই কার্যকর নীতি গ্রহণ করতে হবে৷
আঙ্কটাডের অর্থনীতি বিষয়ক কর্মকর্তা জিওভানি ভ্যালেন্সিসি বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপের উপর বেশি পরিমাণে নির্ভরশীল৷ সরকার এসব পদক্ষেপকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছে৷ ‘‘এ কারণে তৈরি পোশাকের মতো রপ্তানি খাতে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে, যা দ্বিমুখী ধারালো তলোয়ারে পরিণত হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপগুলো পর্যায়ক্রমে বন্ধ হলেও যাতে অগ্রগতি থেমে না যায়, সেজন্য শিল্পের নীতি কাঠামো তৈরি করা দরকার৷''
বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির তুলনায় আরও বাড়াতে এই অর্থনীতিবিদ এ খাতের বিনিয়োগকে আরও গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন৷
জিওভানি ভ্যালেন্সিসি বলেন, বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রে অগ্রগতি করলেও এখনও মাথাপিছু জিডিপি বৈশ্বিক গড়ের মাত্র ১৫ শতাংশ৷ এক্ষেত্রেও বড় পরিসরে কাজ করার সুযোগ রয়েছে৷
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমানও মধ্যম আয়ের দেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অভ্যন্তরীণ সম্পদের কার্যকর ব্যবহারের উপর গুরুত্ব দেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশে ডমেস্টিক রিসোর্চ মবিলাইজেশন জিডিপির ১০ ভাগ মাত্র৷ এটা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ, এটা দক্ষিণ এশিয়ার কয়েক দেশের তুলনায়ও কম৷ আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে হবে, পাশাপাশি যেসব খাত ভালো করবে সেখানে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার৷''
অধ্যাপক মোস্তাফিজ বলেন, জিডিপিতে যদি উৎপাদন খাতের অবদান দ্বিগুণ করতে হয়, তাহলে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণে বিনিয়োগ দরকার হবে৷ ‘‘বাংলাদেশের মত দেশে বৈষম্য দূর করার জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে কৌশলগত জায়গায় কৌশলগত পদক্ষেপ নিতে হবে৷ আর আমাদেরকে হোমওয়ার্ক করতে হবে৷''
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘এলডিসি থেকে উত্তরণের পর অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্যিক সুবিধা আরও ১২ বছর চালু রাখার কথা বলছে বালাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলো৷ হয়ত এত সময় পাওয়া যাবে না, তবুও আমরা মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব৷''
ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো বলেন, বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ যাতে সাবলীলভাবে হয়, সেই সহযোগিতা দিয়ে যাবে জাতিসংঘ৷
ঢাকায় জাতিসংঘ কার্যালয়ের অর্থনীতিবিদ মাজেদুল ইসলামের সঞ্চালনায় আলোচনায় অন্যদের মধ্যে আঙ্কটাডের এলডিসি বিভাগের প্রধান রলফ ট্রেগার বক্তব্য দেন৷
আর্থার সুলিভান/জেডএইচ