ঐক্যবদ্ধ ইইউ, কোণঠাসা জনসন, ভরসা ম্যার্কেল
২১ আগস্ট ২০১৯এখনো অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার প্রচেষ্টা ছাড়তে রাজি নন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন৷ পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে আগামী ৩১শে অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছেদ চান তিনি৷ তবে সেই বিচ্ছেদ চুক্তির মধ্যে রদবদলের যে দাবি তিনি করে চলেছেন, ইউরোপের কোনো নেতা তা মানতে রাজি নন৷ মঙ্গলবার তিনি এই মর্মে যে চিঠি লিখেছিলেন, তার প্রতিক্রিয়া এই প্রশ্নে ইইউ-র অবস্থান আবার স্পষ্ট করে দিয়েছে৷ তা সত্ত্বেও হাল না ছেড়ে জনসন বুধবার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর সঙ্গে আলোচনা করতে বার্লিন যাচ্ছেন৷
ইইউ দেশগুলির সরকারপ্রধানদের পরিষদের সভাপতি ডোনাল্ড টুস্ক এক টুইট বার্তায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ব্রেক্সিট চুক্তির মধ্যে আয়ারল্যান্ড সীমান্তে ‘ব্যাকস্টপ' ব্যবস্থা নিয়ে কোনোরকম আপোশ সম্ভব নয়৷ তিনি ইইউ-র অবস্থান ব্যাখ্যা করে মনে করিয়ে দিয়েছেন, যে আয়ারল্যান্ড সীমান্তে কড়া নিয়ন্ত্রণ এড়াতে অন্য কোনো বিকল্পের অভাবে বিমা হিসেবে ‘ব্যাকস্টপ' ব্যবস্থা স্থির করা হয়েছিল৷ টুস্ক লেখেন, ‘‘যারা এর বিরোধিতা করছে, তারা কোনো বাস্তব বিকল্পের প্রস্তাব না দিয়ে বরং সীমান্তে কড়া নিয়ন্ত্রণের প্রতি সমর্থন দেখাচ্ছে৷ যদিও তারা এ কথা স্বীকার করছে না৷''
জার্মান চ্যান্সেলরও ইইউ-র সম্মিলিত অবস্থান থেকে বিচ্যুতির কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছেন না৷ অতীতে তিনি বার বার ব্রিটেনের ইইউ ত্যাগের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে দুঃখ প্রকাশ করেছেন৷ তবে সে বিষয়ে বোঝাপড়ার ক্ষেত্রে তিনি ইইউ দেশগুলির বাকি সরকার প্রধানদের মতোই কোনো বিকল্প পথে বিশ্বাসী নন৷ মঙ্গলবার তিনি বলেন, পরে কোনো এক সময়ে ইইউ আইরিশ সীমান্তে ‘বাস্তবসম্মত কোনো ব্যবস্থা' কার্যকর করতে পারবে বলে তিনি আশা করেন৷ তবে বর্তমান বিচ্ছেদ চুক্তিতে কোনো রদবদল সম্ভব নয় বলে তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন৷
এমন প্রেক্ষাপটে ব্রেক্সিটের প্রশ্নে ইইউ নেতাদের ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টায় জনসন কতটা সফল হবেন, তা নিয়ে সংশয় থেকে যাচ্ছে৷ তিনি চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের হুমকি দিয়ে গেলেও ইইউ কোনোরকম আপোশের লক্ষণ দেখাচ্ছে না৷ মঙ্গলবার তাঁর চিঠি সত্ত্বেও ইইউ-র কড়া অবস্থানের বিষয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, এই প্রশ্নে ইইউ একটু নেতিবাচক অবস্থান দেখাচ্ছে বটে, তবে তা সত্ত্বেও বোঝাপড়া সম্ভব বলে তিনি বিশ্বাস করেন৷
ইউরোপের কূটনৈতিক মহল প্রধানমন্ত্রী জনসনের হম্বিতম্বিকে বিশেষ গুরুত্ব না দিয়ে আগামী ৩রা সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ সংসদের অধিবেশনের দিকে নজর রাখছে৷ বিরোধী লেবার পার্টি জনসনের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট আনলে তার পরিণাম কী হয়, তা জানার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে৷ তাছাড়া চুক্তিহীন ব্রেক্সিট এড়াতে সংসদ সদস্যরা অন্যান্য উদ্যোগও নিতে চান৷ ব্রিটিশ রাজনীতির এমন উত্তাল পর্যায়ে বরিস জনসন আদৌ ক্ষমতায় টিকতে পারবেন কিনা, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে৷ ফলে ইউরোপ সফরে তাঁর দরকষাকষির ক্ষমতা ঘরে-বাইরে প্রশ্নের মুখে পড়ছে৷ জনসন আদৌ কোনো সমাধানসূত্র চান, না কি ব্রেক্সিটকে ঘিরে তাঁর ব্যর্থতার দায় পুরোপুরি ইইউ-র উপর চাপিয়ে দিতে চান, অনেকে সেই সন্দেহও প্রকাশ করেছে৷
এসবি/কেএম (ডিপিএ, এএফপি, রয়টার্স)