‘‘ন্যায়বিচারের মানদণ্ড লঙ্ঘন’’
১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৩বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মঙ্গলবার কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন৷ তার আগে ট্রাইব্যুনাল তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন৷ নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে বলেছে, কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচারের মানদণ্ড লঙ্ঘিত হয়েছে৷ সংগঠনের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বিবৃতিতে বলেছেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সব সময় ১৯৭১ সালে সংঘটিত বর্বরতার বিচার চেয়ে আসছে৷ কিন্তু এই বিচার ন্যায়সঙ্গত এবং আইন অনুযায়ী হওয়া উচিত৷
তিনি বলেন, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যে কোনো পরিস্থিতিতেই মৃত্যুদণ্ড বিরোধী৷ কারণ মৃত্যুদণ্ড নিষ্ঠুর এবং অমানবিক৷ তিনি বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিটির মতে যে সব ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে, সে সব ক্ষেত্রে ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা জরুরি৷ তাই অস্বচ্ছ মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলে তা ন্যায়বিচারের লঙ্ঘন৷ তিনি মৃত্যুদণ্ডকে বর্বর শাস্তি অভিহিত করে তা থেকে সরে আসার আহ্বান জানান৷
এর জবাবে ড. শাহদীন মালিক ডয়চে ভেলেকে বলেন, সাধারণভাবে তিনি নিজেও শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী৷ কিন্তু মানবতা বিরোধী অপরাধের মত জঘন্য অপরাধে যারা জড়িত, তারা মৃত্যুদণ্ড থেকে রেহাই পেতে পারেন না৷ তিনি বলেন, ‘‘এটি এক বা দুইজনকে হত্যার বিষয় নয়৷ একাত্তরে বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষ গণহত্যার শিকার হয়েছেন৷ একটি জাতিকে নির্মূল করার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে৷ তাই এটি সাধারণ কোনো ঘটনা বা হত্যাকাণ্ড নয়৷ এটি মানবতা বিরোধী অপরাধ৷ এই অপরাধে যারা জড়িত তাদের মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য বলে মনে করেন তিনি৷''
তিনি জানান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখনো পুরোপুরি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রহিত হয়নি৷ বিশ্বের প্রায় অর্ধেক দেশে মৃত্যুদণ্ডের বিধান এখন আর নেই৷ তিনি চান, বাংলাদেশেও মানবতা বিরোধী অপরাধের মত জঘন্য অপরাধ ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের বিধান শিথিল হোক৷
যুদ্ধাপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তাকে অমূলক বলে অভিহিত করেন ড. শাহদীন মালিক৷ তিনি বলেন, অনেকে এটাকে সাধারণ ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলায় এমন ভাবনা তাদের মাথায় আসছে৷ তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যুদ্ধপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক সহায়তা নেয়া হয়েছে৷ কিন্তু বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইনে নিজেরাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে সক্ষম হচ্ছে৷ এটা কোনো কোনো আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর পছন্দ হয়নি৷ তাই তারা সুনির্দিষ্ট কোনো কথা না বলে অযৌক্তিক বিরোধিতায় নেমেছে৷