কালরাত্রি আর যুদ্ধদিনে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের স্মৃতি
২৫ মার্চ ২০২৪তাদের কেউ তখন রেডিও পাকিস্তানের টেকনিক্যাল অ্যাসিস্টেন্ট। কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। কেউবা সাংবাদিক। কেউ কলেজ পড়ুয়া তরুণ।
কলকাতার সে বাড়িতে কেউ প্রকৌশলী, কেউবা শিল্পী, কেউ সংবাদ পাঠক, কেউ যন্ত্রশিল্পী কিংবা সংবাদের ট্রান্সস্ক্রিপ্টর।
একাত্তরে তাদের কারো কারো অবদান প্রচারের আলোয় এলেও অনেকেই থেকে গেছেন নিভৃতে। সেই কয়েকজনের স্মৃতিতে ২৫ মার্চ কালরাত্রি আর যুদ্ধদিনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কথা।
২৫ মার্চ কালরাত্রি ‘গুলি আর গালির বিভীষিকা'
সারা ঢাকা শহর তখন উত্তাল। নানা নেগোসিয়েশন চলছে। নাসরীন আহমেদ তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল বিভাগের শিক্ষার্থী। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬৭৭ নাম্বার বাড়ির পাশেই ৬৭৮ নম্বর বাড়িটি তাদের। মা বদরুন্নেসা বেগম রাজনীতিবিদ। যার নামে এখনকার বদরুন্নেসা কলেজ। নাসরীনও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। দুপুরে শেখ মুজিব তাদের বাড়িতে এলেন। জিজ্ঞেস করলেন, ‘তাজউদ্দীন এসেছে'। নাসরীন বললেন ‘না'। চা খেতে চাইলেন। পরে আবার নাও করলেন। যাবার সময় বললেন ,' আজ রাতটা খুব খারাপ'।
বিকেলে মিরপুর রোডের রাস্তাটা থমথমে হয়ে গেল। নাসরীন দেখলেন , ‘অনেক কর্মী বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে এলো। বাড়িটি ঘিরে রাখার জন্য। বঙ্গবন্ধু সবাইকে চলে যেতে বললেন। সন্ধ্যায় আমার ফুফাতো ভাই বঙ্গবন্ধুর প্রেস সেক্রেটারি আমিনুল হক বাদশা বঙ্গবন্ধুর একটা মেসেজ নিয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে চলে গেলেন। সেখানে সব সাংবাদিক ছিলেন। রাত বাড়ছে। মিরপুর রোডে লোকজন ব্যারিকেড দিচ্ছে। গাছ কাটার শব্দ হচ্ছে। অনেকটা সময় পর আর্মি কনভয় এলো। তারা গেল বঙ্গবন্ধুর বাসায়। আমাদের দুই বাসার মধ্যে বাউন্ডারি। যখনই বলা হলো, জওয়ান পজিশনস। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেয়ালজুড়ে তারা দাঁড়িয়ে গেল। পর মুহূর্তেই বললো ‘ফায়ার'। শুরু হয়ে গুলি, সাথে গালি। আমি আর বাবা জানালা থেকে সরে এলাম। সমান তালে গুলি চললো। কিছুক্ষণ পর শুনছি, দরজার সামনে আর্মির মেশিনগানের শব্দ। ভাবলাম ঐ বাড়িতে সব শেষ করেছে । এবার আমাদের বাড়িতে। অপেক্ষায় আছি। কিন্তু কিছু হলো না। বঙ্গবন্ধুর বাড়ির গেইট খোলার শব্দ শুনলাম। শুনলাম, আর্মি ট্রাক বেরিয়ে যাবার শব্দ। কে যেন বলে উঠলো, জয় বাংলা। তারপর সব চুপ। আমরা ঘরে বসে আছি। কিছুক্ষণ পর পূর্বদিকের জানালায় টোকা। খুলতেই বঙ্গবন্ধুর ব্যাক্তিগত ড্রাইভার মুন্সি বললো, সাহেব (বঙ্গবন্ধু) কে ধরে নিয়ে গেছে'।
রেডিও পাকিস্তান, চট্টগ্রাম কেন্দ্রে কর্মরত টেকনিক্যাল এসিস্টেন্ট আমিনুর রহমান ২৪ ও ২৫ মার্চ অবস্থান নিয়েছিলেন রাজপথে। ছাত্র ইউনিয়নের এই কর্মী'র কাছে খবর ছিল, ঢাকায় আক্রমণ হবে। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ থেকে অস্ত্রবাহী ট্রাক যেন ঢাকায় না পৌঁছাতে পারে, সে জন্য তারা রাজপথে ব্যারিকেড দিয়ে কর্মসূচি পালন করেছেন।
অন্যদিকে অবজারভারের তরুণ সাংবাদিক মৃণাল কৃষ্ণ রায় তখন অবস্থান করছিলেন শাঁখারি বাজারে নিজ ভবনে। ৬৩ নাম্বার বাড়িটিতে তারা থাকতেন। দুপুর থেকেই সেনা টহল। বাড়িতে হ্যান্ড গ্রেনেড ছোঁড়া হলো। তখন দ্বিতীয় তলা থেকে নেমে নীচের এক রুমে তারা আশ্রয় নিলেন। বাড়িতে ঢুকলো আর্মি। কাউকে না পেয়ে চলে গেল। মৃণাল বুঝলেন এখানে থাকা চলবে না। ম্যাথর গলি দিয়ে সন্ধ্যায় তারা গিয়ে পানিটোলায় এক বাড়ির ছাদে। রাতে সেখানেও গুলি হলো। আতঙ্কে কাটলো পুরো রাত।
আতঙ্কে রাত কেটেছে ঢাকায় কলেজ অব মিউজিকের শিক্ষার্থী মনোয়ার হোসেন খানেরও। ২০ বছর বয়সী এই তরুণ দেখেছেন, কেমন ভয়াল রাত নেমেছিল ঢাকায়। দেখেছেন, বংশালে আগুন জ্বলছে। রাত পার করে পরদিন বেশ কিছু পরিবারকে তিনি সাহায্য করেছেন, পালিয়ে যেতে।
ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজের ছাত্র পরিতোষ কুমার সাহা আগের দিন ঢাকায় এসেছিলেন মায়ের বারণ উপেক্ষা করে। উঠেছিলেন ইন্দিরা রোডে। বিকেলের দিকে দেখলেন, মিছিল আর মিছিল। রাতে ঢাকায় যখন আগুন জ্বলছে, তখন তিনি আশ্রয় নিয়েছেন এক ভিনদেশি খ্রিস্টান ভদ্রলোকের বাসায়। পরদিন শহরে দেখলেন, শুধু লাশ আর লাশ।
স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র
১৯৭১ এর ২৬ মার্চ চালু হয় স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র। ৩০ মার্চ দুপুরে বিমান হামলা হলো সে বেতার কেন্দ্রে। বিকল হয়ে গেল ট্রান্সমিটার। তখন থেকেই বেতারকর্মী সৈয়দ আবদুস শাকের, মোস্তেফা আনোয়ার, বেলাল মোহাম্মদ, রাশেদুল হোসেন, আব্দুল কাদের সন্দ্বীপ, আমিনুর রহমান , শরিফুজ্জামান, রেজাউল করিম, কাজী হাবিবউদ্দিন এবং আবদুল্লাহ আল ফারুক নেমে পড়েন ট্রান্সমিশন চালু করতে।
তখনকার টেকনিক্যাল অ্যাসিস্টেন্ট আমিনুর রহমান বলছিলেন, ‘আমাদের একটা স্ট্যান্ডবাই ওয়ান কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার ছিল। ঐ ট্রান্সমিটার আমরা পটিয়া নিয়ে যাবার চিন্তা করলাম। ১ এপ্রিল আমরা পটিয়ায় যাই। ঐ দিন আমাদের সহকর্মী রাশেদুল হোসেন ও শরফুজ্জামান যায় ট্রান্সমিটার নিয়ে আসতে। আর আমি ও বেলাল মোহাম্মদ তখনকার সংসদ সদস্য অধ্যাপক নুরুল ইসলাম চৌধুরীর বাসায় যাই। তিনি বললেন, যেহেতু কালুরঘাট স্টেশনে বিমান আক্রমণ হয়েছে, যদি ট্রান্সমিটার পটিয়ায় বসানো হয়, তবে এখানেও বিমান আক্রমণ হবে। পরামর্শ দেয়া হলো, ট্রান্সমিটারটি রামগড় বর্ডারে নিয়ে যাবার।
২ এপ্রিল ট্রান্সমিটারটি পটিয়া মাদ্রাসায় রেখে আমরা দশজন একটা মাইক্রোবাসে করে রামগড় গেলাম। পৌঁছালাম তিন এপ্রিল। এখানে ভারতের বিএসএফ সহযোগিতা করলো। তাদের একটা শর্টওয়েভ ট্রান্সমিটার আমাদের নিয়ে গেল। সেখানে আমরা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রের কিছু সংবাদসহ কিছু পাঠকরলাম। ৪ এপ্রিল আমি আর রাশেদুল হোসেন এক কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার নিয়ে যাবার জন্য চট্টগ্রামে ফেরত আসি'।
দুইটি জিপ নিয়ে নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে ট্রান্সমিটার নিয়ে রামগড় পৌঁছালাম আট এপ্রিল। এর মধ্যে দুইটি দল হলো। এক গ্রুপ গেলো আগরতলায়। অন্য গ্রুপ বেলোনিয়া। সেখান থেকেই এক কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার দিয়ে চালু হলো ট্রান্সমিশন। পরে সরকারের মধ্যস্থতায় ১০ জনের দলকে আগরতলা থেকে কার্গো বিমানে উড়িয়ে নিয়ে আসা হয় কলকাতায়। শক্তিশালী ৫০ কিলোওয়াট শক্তিমত্তায় চালু হয় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র।
আমিনুর রহমানসহ সাতজন প্রকৌশলী ছিলেন সে বেতার কেন্দ্রে। সেখানেই জুনের প্রথমে ইংরেজি সংবাদ পাঠক হিসেবে যোগ দিলেন নাসরীন বেগম। তার ছদ্মনাম জেরিন আহমেদ। শুধু খবরই পড়েননি, অনেক গানও গেয়েছেন। তবে খবর পড়া শুরুর আগে রেকর্ড হয়েছিল তার গান। আমি ভয় করবো না, ভয় করবো না-গানখানি রেকর্ড হয়ে প্রচার হয়েছিল। মাঝে মাঝেই কোরাস গানে অংশ নিতেন।
নাসরীন বলছিলেন, ‘ছয় ডিসেম্বর আমি আর ছদ্ম নামে সংবাদ পাঠ করলাম না। তখন নিজের নামটাই বললাম। সাথে জুড়ে দিলাম ডাক নামটিও। পড়লাম, দিস ইজ স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র। দা নিউজ রেড বাই নাসরীন আহমেদ শিলু'।
রাজেন্দ্র কলেজের শিক্ষার্থী পরিতোষ কুমার সাহা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে যোগ দিলেন তবলা বাদক হিসেবে। তার জন্য সুপারিশ করেছিলেন নেতা ওবায়দুর রহমান। কলকাতায় কোকাকোলা বিল্ডিং সেই নেতার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তখন সেখানে আসেন শিল্পী আপেল মাহমুদ ও আব্দুল জব্বার। ওবায়দুর রহমানের অনুরোধে পরিতোষকে তারা নিয়ে আসেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে। সেখানে প্রোগ্রাম প্রোডিউসার তাহের সুলতান তার বাদনের পরীক্ষা নেন। গানও গাইলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি তার মফস্বল শহরে নানা রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন। তবলা বাজিয়েছেন। সেই আত্মবিশ্বাসেই পরিতোষ গাইলেন, ‘আমি ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম'। বেতার কেন্দ্র তবলা বাদক হিসেবে যুক্ত হলেন পরিতোষ। মহড়া, রেকর্ডিং এবং নানা ক্যাম্পে তিনি শিল্পীদের সঙ্গে বাজাতেন। পারিশ্রমিক পেতেন প্রতি প্রোগ্রামে ১৫ টাকা।
মাদারিপুরের সন্তান মনোয়ার হোসেন খান দেশে থাকতেই বেতারে ৮০ টাকা কন্ট্রাক্টে প্রোগ্রাম করতেন। তাকে প্রোগ্রাম দিতেন বেতারের আনিস সুলতান। সংগীতের শিক্ষার্থী মনোয়ার যখন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে পৌঁছালেন তখন তাকে পেয়ে সেই আনিস সুলতান জড়িয়ে ধরলেন। বললেন, ‘এসেছ। ভালো করেছ।‘ মনোয়ার বলছিলেন, ‘ বিভিন্ন জায়গায় যেতাম। প্রোগ্রাম করতাম। কোরাস গানই বেশি করেছি।‘ তার ছদ্মনাম ছিল ‘মনোহর'।
অবজারভারের সাংবাদিক মৃণাল কৃষ্ণ রায় কলকাতায় গিয়ে বাংলাদেশ হাই কমিকশনে প্রায়ই যেতেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে তার সঙ্গে দেখা হলো সাংবাদিক তোয়াব খানের। তোয়াব খান তাকে বললেন, ‘মৃণাল তুমি কবে এসেছ?' কামাল লোহানী বললেন ,' তুমি কোথাও জয়েন করেছ?' মৃণাল তখন বললেন, ‘গাফফার ভাই তার জয় বাংলা পত্রিকায় নেবেন বলেছেন। আমি সিদ্ধান্ত নেই নি।‘ পরে কামাল লোহানীর অনুরোধেই তিনি জয়েন করলেন ট্রান্সক্রিপশন সেকশনে। কামাল লোহানীর তত্ত্বাবধানে নিউজ কালেক্ট করতেন, খবরগুলো স্ক্রটিনাইজ করতেন, সিরিয়াল করতেন। আবার মাঝে মাঝে গানের কোরাসে লোক কম হলে গলাও মেলাতেন।
তার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে ১৬ ডিসেম্বর দিনটি। বলছেন, ‘আমরা এরমধ্যেই জেনে গিয়েছিলাম দেশ স্বাধীন হতে চলেছে। স্টডিও রুমে সবাই জমায়েত হলাম। বলা হলো, স্বাধীন হবার নিউজটা ব্রডকাস্ট করতে। লোহানী ভাইয়ের বলিষ্ঠ কন্ঠ। ঠিক হলো, তিনিই ঘোষণা করবেন। কিন্তু যারা নিয়মিত কন্ঠ দেয়, তারা বললেন, আমরা কেন কন্ঠ দেব না। এত বড় ঘটনা। লোহানী ভাই বললেন, ঠিক আছে। তোমরা দাও। কিন্তু তাদের ভয়েস ফেইল হলো। তারপর সিদ্ধান্ত হলো, লোহানী ভাই দেবেন। তিনি দিলেন। একবারেই টেক ওকে হলো'।
কেমন আছেন এই সূর্য সন্তানেরা?
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের ২৮০ জনের মুক্তিযুদ্ধের শব্দসৈনিক স্বীকৃতি মিলেছে। আর ৫০ জনের তালিকা প্রক্রিয়ায় রয়েছে। তবে স্বাধীন বাংলা বেতার কর্মী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার হোসেন খান বলছেন, ‘বেতারে চারশ'র ওপর কর্মী ছিলেন। অনেকেই স্বাধীনতার পর দেশের নানা জায়গায় চলে গেছেন। তাদের খুঁজে পাওয়া অনেক দুরূহ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।‘
একই সঙ্গে তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সরকার আর কাউকে শব্দসৈনিক স্বীকৃতি দিতে চায় না।
স্বাধীন দেশে বেতার থেকে প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে অবসর নেয়া আমিনুর রহমান শেখ মুজিব বেঁচে থাকতে ‘বঙ্গবন্ধু স্বর্ণপদকে'র জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। বর্তমানে চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন। শরীরে বাইপাস সার্জারি হয়েছে। তবু বলছেন, ‘দেশ আমাকে যা দিয়েছে তা আমি শোধ করতে পারব না'।
তবলা বাদক পরিতোষ কুমার সাহা শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছেন। স্বাধীন দেশে বিশ বছর বেতারে চুক্তিভিত্তিক ছিলেন। পরে স্টাফ হন। অবসরে সরকারিকরণের কোন সুবিধা পাননি। আক্ষেপ করে বললেন, ‘খালি হাতে অবসর নিয়েছি। তবু ভালো আছি'।
সাংবাদিক মৃণাল কৃষ্ণ রায় এখন অশীতিপর। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কথা বলতে গিয়ে ভরে ওঠা বুকে তিনি শুধু বলেন, ‘দেশটা অসাম্প্রদায়িক হলো না!'