কিশোরী ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় উত্তাল হরিয়ানা
১৫ জানুয়ারি ২০১৮ফিরে এল দিল্লি ধর্ষণের স্মৃতি৷
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে দিল্লির বাসে ধর্ষিত হয়েছিলেন এক তরুণী৷ গণধর্ষিতা সেই তরুণী জীবনযুদ্ধে শেষ পর্যন্ত জিততে পারেননি৷ জিততে পারলেন না দিল্লির অনতিদূরে হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রের কিশোরীও৷ ১৫ বছর বয়সি ধর্ষিতা কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার হলো জলাশয় থেকে৷ অভিযোগ, গণধর্ষণের সময় ওই তরুণীর উপর পৈশাচিক অত্যাচার চালানো হয়৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গেছে, কিশোরীর শরীরে অন্তত ১৯টি আঘাতের চিহ্ন আছে৷ তার যৌনাঙ্গে রডজাতীয় কিছু দিয়ে বারংবার আঘাতের চিহ্নও মিলেছে৷ শুধু তাই নয়, হাতে, মুখে, বুকে রয়েছে অসংখ্য আঘাতের দাগ৷
এছাড়াও তার ফুসফুস ফেটে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা৷ আশঙ্কা, গণধর্ষণের সময় তার বুকের উপর বসে অত্যাচার চালানো হয়েছিল৷ তারই জেরে ফেটে গিয়েছে ফুসফুস৷
২০১২ সালে ঠিক এভাবেই অত্যাচার চালানো হয়েছিল দিল্লির গণধর্ষিতার উপর৷ তফাৎ একটাই৷ সেবার ধর্ষিতার বন্ধু এবং ধর্ষিতার কাছ থেকে কিছু তথ্য পেয়েছিল পুলিশ৷ সেই মোতাবেক গ্রেফতার হয়েছিল ধর্ষণকারীরা৷ কিন্তু এবারের ঘটনায় অভিযুক্তদের কোনো তথ্য এখনও পর্যন্ত পায়নি পুলিশ৷ তবে খোঁজ চলছে৷ জানা গেছে, কিছুদিন আগে গ্রামেরই একটি ছেলের সঙ্গে পালিয়েছিল ওই কিশোরী৷ তার বাবা থানায় সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপহরণের মামলাও করেছিল৷ তবে সেই ব্যক্তির সঙ্গে ধর্ষণের ঘটনার সম্পর্ক আছে কিনা, তা নিয়ে নিশ্চিত নয় পুলিশ৷
এদিকে ঘটনার পর রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে হরিয়ানা এবং রাজধানী দিল্লিতে৷ বস্তুত দেশ জুড়েই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছেন মানুষ৷ তরুণীর বাবা পেশায় দর্জি৷ পুলিশ তাঁর হাতে মেয়ের মৃতদেহ তুলে দিতে গেলে তিনি নিতে অস্বীকার করেন৷ দাবি করেন, পুলিশ নয়, ঘটনার তদন্ত করতে হবে সিবিআইকে৷ শুধু তাই নয়, পরিবারের একজনের সরকারি চাকরি, দু'টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স এবং নির্ভয়াফান্ড থেকে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণও চেয়েছেন তিনি৷ উল্লেখ্য, দিল্লি গণধর্ষণের ঘটনার পর সরকার ধর্ষিতাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ‘নির্ভয়াফান্ড' তৈরি করেছিল৷ হরিয়ানার মন্ত্রী কেকে বেদীর হস্তক্ষেপে শেষ পর্যন্ত অবশ্য ধর্ষিতার বাবা মেয়ের মৃতদেহ নিতে রাজি হন৷ বেদী জানিয়েছেন, পরিবারের দাবিগুলি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করা হবে৷ ক্ষতিপূরণও পাওয়া যাবে৷
অন্যদিকে হরিয়ানা পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ঘটনাটির তদন্তের জন্য একটি বিশেষ দল তৈরি করা হয়েছে৷ তাঁদের আশা, দ্রুত অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা যাবে৷ ইতিমধ্যেই তদন্তের কাজ শুরু হয়েছে৷
কিছুদিন আগে পাকিস্তানের কাসুর শহরে এক শিশুকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা ঘটেছিল৷ পাকিস্তান জুড়ে তার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ হয়েছিল৷ অনেকেই সেই ঘটনার সঙ্গে দিল্লি ধর্ষণের তুলনা টেনেছিলেন৷ শুধু তাই নয়, প্রতিবাদ বিক্ষোভের ধরনের মধ্যেও দিল্লি ধর্ষণকাণ্ড পরবর্তী আন্দোলনের মিল খুঁজেছিলেন অনেকে৷ এবার দিল্লির কাছেই আবার একইরকম ঘটনা ঘটলো৷ প্রশ্ন উঠছে, আন্দোলনের ঢেউ কি আবার ২০১২ সালের চেহারা পাবে? নাগরিক সমাজ কি রাস্তায় নামবে? নাকি ঘটনাগুলি ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশে?
এসজি/এসিবি (এএনআই, রয়টার্স, টাইমস অফ ইন্ডিয়া)