জার্মানিতে শরণার্থী সমস্যা
১৭ আগস্ট ২০১৫জার্মানির সাপ্তাহিক ‘ডেয়ার স্পিগেল' সম্প্রতি এক নিবন্ধের শিরোনামে লিখেছে, ‘কুৎসিত জার্মানরা কি ফিরে আসছে?'৷ প্রশ্নটি এ বছর জার্মানিতে শরণার্থীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার কারণেই করা৷ জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বছরের প্রথম ৬ মাসে সারা দেশে শরণার্থীদের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ এবং অন্যা ধরণের উগ্র তৎপরতার ২০২টি ঘটনা ঘটেছে৷ ২০১৪ সালে সারা বছরেও এত বেশি অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেনি৷
ভাগ্যান্বেষণে নিজের দেশ ছেড়ে জার্মানিতে আসা মানুষদের প্রতি একটি মহলের এমন তৎপরতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ জার্মানির চ্যান্সেলর বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘এমন তৎপরতা আমাদের দেশের জন্য কল্যাণকর নয়, মানানসইও নয়৷'' জার্মান টেলিভিশন চ্যানেল জেডডিএফ-কে তিনি আরো বলেন, ‘‘অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমন ক্রমশ বাড়ছে৷ অভিবাসন ইস্যু ভবিষ্যতে ইউরোপের জন্য গ্রিস সংকটের চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে৷''
জার্মানিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীর চাপ এ মুহূর্তে আগের বছরগুলোর তুলনায় অনেক বেশি৷ ২০১৪ সালের প্রথম ৬ মাসে জার্মানিতে অভিবাসী হতে চেয়ে আবেদন করেছিলেন ৭৭ হাজার ১০৯ জন৷ চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৩৭৷
অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি তাঁদের বিরুদ্ধে উগ্রতাও বাড়ছে৷ বিষয়টিকে অনেকের মতো জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও ‘উদ্বেগজনক বিষয়' হিসেবেই দেখছেন৷ তবে এই উদ্বেগ যাতে বড় সংকট হয়ে না ওঠে, সেদিকেও নজর আছে জার্মানদের বড় একটা অংশের৷ সাম্প্রতিককালে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পাশে দাঁড়াতে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসছেন অনেকে৷ তরুণ ছাত্র থেকে শুরু করে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, সমাজসেবী থেকে সংসদ সদস্য – সবাই নিজের সামর্থ্যের মধ্যে যতটুকু করা সম্ভব, শরণার্থীদের জন্য ততটা করার চেষ্টা করছেন৷
বার্লিনের ২৪ বছর বয়সি ছাত্র ডাভিড ইয়াকব নিয়েছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ৷ সম্প্রতি একটি ওয়েবসাইট চালু করেছেন তিনি, নাম ওয়ারকিয়ার ডট ডিই৷ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তিনি জার্মান শিখেছেন এমন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কিছু নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ করিয়ে দেন৷ জুলাই মাসেই কাজ শুরু করেছেন ডাভিড ইয়াকব৷ এক মাসের মধ্যে ১ হাজার লোক চাকুরির জন্য এই ওয়েবসাইটের সহায়তা চেয়েছেন৷ পাশাপাশি ৪৫০টি নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে তারা ইয়াকবের মাধ্যমে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের পাশ আছে৷
বেশ কিছু জায়গায় অভিবাসনপ্রত্যাশীদের স্বাগত জানানোর জন্য অভ্যর্থনা কমিটি গঠন করছেন স্থানীয় জার্মানরা৷ ছাত্র, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ নিজের বাড়িতে থাকতে দিয়েছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের৷ কেউ কেউ ওয়েবসাইট খুলে বলছেন, ‘‘আাপনাদের নিয়ে আসার জন্য আমাদের গাড়ি তৈরি আছে৷''
অভিবাসনপ্রত্যাশীদের অনাকাঙ্খিত ভাবছে কিছু মানুষ৷ ডেয়ার স্পিগেল তাদেরই ‘কুৎসিত জার্মান' বলেছে৷ তবে আশার কথা, সুন্দর মনের জার্মানের সংখ্যা এখনো অনেক বেশি!
এসিবি/ডিজি (এপি, এএফপি)