1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ক্রিকেট জাতিকে এক করে'

সমীর কুমার দে ঢাকা
২০ মার্চ ২০১৭

‘‘এ খেলাকে যাঁরা প্রফেশন হিসেবে নিয়েছেন, তাঁদের টাকা আসবে-যাবে৷ কিন্তু প্যাশনটা থাকলে খেলার যে চরিত্র, সেটা আমরা মেইনটেইন করতে পারবো৷'' ডয়চে ভেলেকে এ কথা বলেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্টের অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়৷

https://p.dw.com/p/2ZQfj
Naimur Rahman Durjoy, Bangladesch, Cricket
ছবি: Naimur Rahman Durjoy

ডয়চে ভেলে: বাংলাদেশ শততম টেস্টটি খেললো, জিতলোও৷ প্রথম টেস্টের অধিনায়ক ছিলেন আপনি৷ তা সেটা কতটা গর্বের ব্যাপার ছিল?

নাঈমুর রহমান দুর্জয়: এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটা মাইলফলক৷ প্রথম টেস্টে অধিনায়কত্ব করা যে সত্যিই সৌভাগ্যের ব্যাপার৷ কারণ এটা ইতিহাসে থাকবে৷ সেদিক থেকে চিন্তা করলে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি, এ জন্য যে সে সময় আমি ক্যাপ্টেন ছিলাম৷ সেই সঙ্গে আরাকটা জিনিস ছিল – ভারতীয় টিমের অধিনায়ক ছিলেন পশ্চিমবাংলার৷ তিনি সৌরভ গাঙ্গুলি৷ ফলে দু'পার থেকে দু'জন ক্যাপ্টেনই বাঙালি ছিল৷

টেস্টের শুরুর দিনের কথা কি কিছু মনে আছে আপনার?

মনে না থাকার তো কিছু নেই৷ ওখানে প্রতিটি মোমেন্টই আমাদের জন্য নতুন ছিল৷ অনেক ইমোশোন জড়িত ছিল৷ আমরা টেনশনেও ছিলাম৷ কারণ জীবনে প্রথম টেস্ট খেলবো আর লংগার ভার্সনে আমাদের খুব একটা অভিজ্ঞতাও ছিল না৷ আমরা তখন  খুব একটা লংগার ভার্সন খেলিনি৷ শুধু খেলোয়াড় বা টিমই না, সারাদেশই এক ধরনের উত্তেজনার মধ্যে ছিল৷ আমরা যখন মাঠে যাই, তখন দেখি যে তখনকার যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আমাদের আগেই মাঠে গিয়ে গেটে দাঁড়িয়ে আছেন৷ সবাই খুব এক্সসাইটেড ছিল৷ প্রতিটি টেস্টের আগে অফিসিয়াল ছবি তোলা হয়৷ অথচ আমাদের ছবি তোলা হয়নি৷ ফলে আমাদের কোনো অফিসিয়াল ফটোগ্রাফও নেই৷ ডেব্যু হলে প্লেয়ারদের ক্যাপ পরিয়ে দেয়া হয়৷ আমাদের সেটাও দেয়া হয়নি৷ এখন এগুলো দেখি আর মনে হয়, তখন আসলে এ সব ব্যাপারগুলো গোছানো ছিল না৷ ডিসঅর্গানাইজড বলব না, আসলে আমাদের অভিজ্ঞতা ছিল না৷ তখন আমরা সবাই খুব এক্সসাইটেড ছিলাম, তাই এগুলো মিস করে গেছি৷

নাঈমুর রহমান দুর্জয়

আপনি কতটা নার্ভাস ছিলেন?

নার্ভাস বলব না, আসলে ইনএক্সপেরিয়েন্সড৷ তবে খানিকটা নার্ভাস হয়ত ছিলাম৷ প্রথম টেস্ট, টস জিতলে আগে কী করব? টসের সময় একটা ঘটনা ঘটেছিল৷ আগে তো টসের কয়েন ম্যাচ রেফারিরা তুলতেন না৷ আমি কয়েন ছোড়ার পর সৌরভ গাঙ্গুলি বললেন ‘হেড'৷ এবং পরে উনি কয়েন তুলে বললেন যে তিনি জিতে গেছেন৷ আমি তখন ম্যাচ রেফারিকে ডাকলাম৷ তিনি এসে কিন্তু বললেন যে, আসলে আমিই টসে জিতেছি৷ এরকম কিছু ছোট ছোট ঘটনা...৷ আমি নার্ভাস থাকলে তো আর ঐ ঘটনা ঘটত না৷ আমি হয়ত ছেড়ে দিতাম৷

আপনি নিজে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন৷ এটা কি আপনি প্রত্যাশা করেছিলেন?

প্রত্যাশা ছিল না৷ কারণ তখন ইন্ডিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ অনেক স্ট্রং ছিল৷ বলতে গেলে, তখন ইন্ডিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ ছিল৷ তার এগেইনস্টে ৬ উইকেট পাওয়াটা সত্যিই আমি প্রত্যাশা করিনি৷ ভালো বল করার ইচ্ছা ছিল, চেষ্টা ছিল৷ উইকেট পাওয়াটা তো লাকেরও ব্যাপার৷ তারপরও যে উইকেট পেয়েছিলাম, তাতে খুব খুশি হয়েছিলাম৷

সব মিলিয়ে আপনাদের দলীয় পারফরম্যান্স কেমন ছিল?

প্রথম টেস্ট হিসেবে আমি খারাপ বলব না৷ ফাস্ট ইনিংসে তো আমরা ভালোই করেছিলাম৷ সেকেন্ড ইনিংসে ব্যাটিং কল্যাপসটা এখনো হচ্ছে৷ ১৬-১৭ বছর পর এসেও সেকেন্ড ইনিংসটা কেমন যেন ধসে যাচ্ছে৷ ওই সময়কার ইন্ডিয়া টিমের এগেইনস্টে প্রথম টেস্টে ঐ সেকেন্ড ইনিংসটা ছাড়া সবকিছু ভালোই ছিল বলবো৷ 

বাংলাদেশ তো শততম টেস্ট খেলতে যাচ্ছে কলম্বোতে৷ এই ১৬ বছরে বাংলাদেশ কি যথেষ্ট টেস্ট খেলেছে?

আমি মনে করি শততম টেস্টটা আরো অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিল৷ বিভিন্ন সময় আমরা বলেছি টেস্টের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য৷ আমি মনে করি, ১৬ বা ১৭ বছর পর এসে আমরা অবশ্যই কম টেস্ট খেলেছি৷

এই সময়ে বাংলাদেশের যতটা উন্নতি হওয়া উচিত ছিল, ততটা কি হয়েছে?

উন্নতি হয়নি, এটা বলব না৷ তবে উন্নতি হওয়ার আরো জায়গা আছে৷ আমাদের ডোমেস্টিক ক্রিকেটে লংগার ভার্সনকে আরো গুরুত্ব দিতে হবে৷ এটাকে আরো প্রতিযোগীতামূলক করলে আমরা আরো ভালো করবো৷ একটা টেস্ট প্লেয়িং জাতির যে ধরনের কালচার থাকা উচিত, সেটাকে আরো উন্নতি করা৷ প্লেয়ার প্রডিউস করার জন্য আমাদের অ্যাকাডেমিগুলোকে আরো তাগিদ দেয়া৷ আমরা যেহেতু বিভিন্ন দেশে গিয়ে টেস্ট খেলি, টেস্টের উইকেট একটু অন্যরকম হয়৷ ওয়ানডেতে পৃথিবীর যে কোনো দেশে গেলে একই রকম উইকেট পাওয়ার সম্ভবনা থাকে৷ কিন্তু টেস্টে যে দেশে খেলা হয়, তারা নিজেদের মতো উইকেট করার চেষ্টা করে৷ আমাদের বিভিন্ন ধরনের উইকেট বানিয়ে খেলার চেষ্টা করতে হবে এবং আমাদের প্লেয়ারদের স্কিল আরো ডেভেলপ করবে৷

আপনি তো সবসময় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে টেস্টকে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলেন৷ সেটা কি আমরা দিচ্ছি ঠিকমতো?

এখনো না৷

কারণ কী?

আমার কাছে বাণিজ্যিক কারণটাই বেশি বলে মনে হয়৷ টি-টোয়েন্টি বা একদিনের ম্যাচে দর্শকদের আগ্রহ থাকে৷ স্পনসরদেরও আগ্রহ থাকে বেশি৷ যেহেতু আমরা ক্লাব বেসড ক্রিকেট খেলি, সেখানে ফ্র্যানচাইজি বা প্রিমিয়ার লিগ খেলতে গিয়ে টি-টোয়েন্টিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি আমরা৷ কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে যে, লংগার ভার্সন ভালো খেললে তবেই আমরা শর্ট ভার্সন ভালো খেলবো৷ টি-টোয়েন্টি ভালো খেললে কিন্তু লংগার ভার্সন ভালো খেলার স্কোপ নেই৷

আপনি তো ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালকও৷ তা ক্রিকেট নিয়ে বোর্ডের যে দায়িত্ব পালন করার কথা, আপনি একজন বোর্ড পরিচালক হিসেবে কী মনে করেন, বোর্ড কি সে দায়িত্ব পালন করছে?

বোর্ড দায়িত্ব পালন করছে না, সেটা বলব না৷ তবে আরো কিছু এরিয়া আছে....এই যেগুলোর কথা বললাম...৷ আমাদের গ্রাউন্ড, ফেসিলিটি – সবকিছু মিলিয়ে আর একটু জোরে শোরে কাজ করা দরকার৷

ফিরে দেখলে এই ১০০টি টেস্টের মধ্যে কোনটাকে এগিয়ে রাখবেন?

অবশ্যই বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড, সম্প্রতি আমরা যেটা জিতলাম৷

আপনাকে যদি একটি টিম করতে বলা হয়, যাঁরা এই ৯৯টি টেস্টে অংশ নিয়েছে, তাঁদের মধ্যে থেকে৷ আপনি কাদের নেবেন দলে?

এটা আসলে চিন্তার বিষয়৷ হুট করে এমন একটা দল করতে গেলে কেউ বাদ পড়তে পারেন৷ তাই এই মুহূর্তে কারুর নাম বলতে পারবো না৷

এখন যাঁরা ক্রিকেট খেলছেন বা সামনে যাঁরা আসবেন, তাঁদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

আমার পরামর্শ হলো – ক্রিকেট খেলাটা নট অনলি এ গেম৷ এটার সঙ্গে অনেক কিছু জড়িত৷ খেলাটাকে এনজয় যেমন করতে হবে, রেসপেক্টও করতে হবে তোমনই৷ দিন শেষে ক্রিকেট আমাদের সমাজেও অনেক ভূমিকা রাখে৷ ক্রিকেট আমাদের জাতিকে এক করে৷ কাজেই ক্রিকেটের প্যাশনটাকে ধরে রাখতে হবে৷ এটাকে যাঁরা প্রফেশন হিসেবে নিয়েছেন, তাঁদের টাকা আসবে আর যাবে৷ কিন্তু প্যাশনটা যদি থাকে তাহলে এই খেলার যে চরিত্র, সেটা আমরা মেইনটেইন করতে পারবো৷

বন্ধু, দুর্জয়ের সাক্ষাৎকারটি আপনাদের কেমন লাগলো? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য