1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গান্ধীজির আশ্রমকে নতুন রূপ দিতে চান মোদী, বিতর্ক

১০ আগস্ট ২০২১

আমেদাবাদে গান্ধীজির স্মৃতিবিজড়িত সবরমতী আশ্রমকে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত গুজরাট সরকারের। শুরু বিতর্ক।

https://p.dw.com/p/3ymeV
সবরমতী আশ্রমে ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। ছবি: picture-alliance/empics/S. Kilpatrick

সবরমতী আশ্রম। মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর স্বপ্নের, আদর্শ রূপায়ণের স্থান। এখানে থেকেই সাধারণ জীবনযাপন, স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা, হরিজনদের মর্যাদা দেয়া এবং স্বাধীনতার আন্দোলন পরিচালনার কাজ করেছেন গান্ধীজি। এখান থেকেই তিনি ডান্ডি অভিযান করে ব্রিটিশদের লবন আইন ভেঙেছিলেন। গান্ধীজির দীর্ঘদিনের স্মৃতি, কর্মকাণ্ড জড়িয়ে রয়েছে এই আশ্রমকে কেন্দ্র করে। তিনি তাঁর বিখ্যাত আত্মজীবনী লেখার কাজও শুরু করেছিলেন এখান থেকেই।

সেই আশ্রমের হেরিটেজ বাড়িগুলিকে ছেড়ে দিয়ে বাকি অনেকগুলি ভবন ভেঙে দিয়ে অত্যাধুনিক মিউজিয়াম, চওড়া রাস্তা, পার্কিং ও অন্য সুবিধা গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে গুজরাট সরকার। এক হাজার ২০০ কোটি টাকা খরচ করে নতুনভাবে গড়ে তোলা হবে এই আশ্রমকে।

গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান সচিব কে কৈলাশনাথন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর সরাসরি ও কড়া তত্ত্বাবধানে কাজ হচ্ছে। গান্ধীজির জীবন ও ভাবনাকে উপযুক্ত সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানো হবে। গোটা বিশ্ব থেকে মানুষ এখানে আসেন, তাদের কথা মাথায় রেখে পুরো পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।  

যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তাতে সবরমতী আশ্রমে বেশ কিছু পরিবর্তন করা হবে। যেমন, এখন ইনকাম ট্যাক্স অফিসের সামনে গান্ধীজির যে মূর্তি আছে, তা আশ্রমের ভিতরে আনা হবে। আশ্রমের উল্টোদিকে নতুন মিউজিয়াম করা হবে। তৈরি হবে ভিজিটরস সেন্টার, মিউজিয়াম শপ এবং বিশাল পার্কিং। পরিকল্পনা রূপায়ণের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে বিমল প্যাটেলের সংস্থাকে, যারা দিল্লিতে সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পেও আছে।

এখন সবরমতী আশ্রমের ৫৪ একর জমিতে মোট ১৭৭টি নির্মাণ আছে। এর মধ্যে ৬৫টি হেরিটেজ ভবন। সেগুলি বাদ দিয়ে বাকি ১০২টি ভবন ও কাঠামোর অনেকগুলিই ভাঙা হতে পারে।

১৯৩০ সালে গান্ধীজি সবরমতী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, দেশ স্বাধীন না হলে তিনি আশ্রমে আর পা দেবেন না। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্টের পর বেশিদিন আর বাঁচতে পারেননি গান্ধীজি। নাথুরাম গডসের পিস্তলের বুলেট তার প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। তাই তিনি আর সবরমতী আশ্রমে ফিরে আসেননি।

এখন এই সবরমতী আশ্রমকে নতুন রূপ দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে প্রবল বিতর্ক শুরু হয়েছে। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট জানিয়েছেন, কোনোভাবেই সবরমতী আশ্রমের পরিবর্তন করা উচিত নয়। কারণ, এর সঙ্গে ইতিহাস, সংস্কৃতি, গান্ধীজির স্মৃতি জড়িয়ে আছে। সোমবার গেহলট বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত ভয়ংকর ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গান্ধীজি অত্যন্ত সরল জীবনযাপন করতেন। ওখানে থেকে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামকে পরিচালিত করেছেন। মানুষ সেটা দেখতেই আসে। তিনি অবিলম্বে মোদীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন এবং এই পরিকল্পনা বাতিল করতে বলেছেন।

দেশের ১৩০ জন বিশিষ্ট মানুষ একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, সবরমতী আশ্রমকে নতুন রূপ দেয়া বন্ধ করতে হবে।যারা এই বিবৃতিতে সই করেছেন তার মধ্যে আছেন রামচন্দ্র গুহ, রাজমোহন গান্ধী, আনন্দ পট্টবর্ধনরা। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সবরমতীতে বিশ্বের মানুষকে টেনে আনতে নতুন রূপ দেয়ার দরকার নেই। যারা আসবেন, তারা গান্ধীজির জন্যই আসবেন। 

বিশিষ্ট সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''গুজরাটের বিজেপি সরকার কী করতে চাইছে তা নিয়ে আমার সংশয় রয়েছে। এর আগে গান্ধীজির হত্যাকারী নাথুরাম গডসকে দেশপ্রেমিক বলেছিলেন বিজেপি সাংসদ সাধ্বী প্রজ্ঞা। তারপর নিন্দা করা ছাড়া তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এখানে তো মনে হচ্ছে গান্ধীজির সবরমতী আশ্রমের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর নাম জুড়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে।'' 

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, টাইমস অফ ইন্ডিয়া)