1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ছাত্র সংসদ না থাকায় মাস্তানতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়’

সমীর কুমার দে ঢাকা
৯ অক্টোবর ২০১৮

দীর্ঘ প্রায় তিন দশক বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় কী ধরনের ক্ষতি হচ্ছে? এসব নিয়েই ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক৷

https://p.dw.com/p/365z6
ছবি: bdnews24.com

ডয়চে ভেলে :  কী কারণে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন আর ছাত্র সংসদ নির্বাচন  হয় না?

অধ্যাপক ফাহমিদুল হক : উদ্যোগের অভাব রয়েছে৷ আর যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তখন সেই রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের আধিপত্য যেন ক্যাম্পাসে থাকে, সেদিকটাও আছে৷ আর একটা ব্যাপার হলো, এটা শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় না, এটা জাতীয় রাজনীতিরও বিষয়৷ ফলে এখানে আগ্রহের ঘাটতি আছে৷

নব্বইয়ের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তো বহুবার উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু সব উদ্যোগই তো ব্যর্থ হয়েছে৷ ব্যর্থ হলো কেন?

আমার যদ্দুর মনে পড়ে, ৯০-এর দিকে একটা উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল৷ আমি নিজেও তখন ছাত্র ছিলাম৷ ওই ঘোষণার পর তখন ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে৷ তখন বলা হলো, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ক্যাম্পাসে নেই৷ এরপর এটা ধামাচাপাই পড়ে থাকে৷ আলোচনাটা সাম্প্রতিক সময়ে আবার জোরালো হয়েছে৷

ছাত্র সংসদ নির্বাচনটা কেন খুব দরকার?

ক্যাম্পাসে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য এটা খুবই দরকার৷ ছাত্রদের মধ্যে নেতৃত্ব যেন বিকশিত হয়, সেকারণেও দরকার৷ বা ভবিষ্যতের নেতৃত্ব এই ছাত্র সংসদের মাধ্যমে তৈরি হতে পারে৷ পাশাপাশি সবচেয়ে বড় কথা, শিক্ষার্থীদের যে দাবি-দাওয়া, স্বার্থ বা ভাবনা-চিন্তার প্রতিফলন হতে পারে তাদের সংসদ নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে৷ আসলে শিক্ষার্থীদের ভাবনার বা দাবির প্রতিনিধিত্বমূলক একটা সংগঠন থাকা দরকার৷

অতীতে তো ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে, তখন কি ভালো নেতৃত্ব বের হয়েছে?

হ্যাঁ৷ প্রায়ই তো বলতে শুনি, উনি ডাকসুর সাবেক ভিপি বা সাহিত্য সম্পাদক বা অন্য কোনো পদে ছিলেন৷ তাঁরা কিন্তু সমাজে ভালোভাবেই প্রতিষ্ঠিত৷ রাজনৈতিকভাবে যেমন, তেমনি অন্যান্য দিকেও৷ আমি কয়েকটি নামও বলতে পারি৷ যেমন ধরা যাক, লিয়াকত আলী লাকী৷ নাট্য ব্যক্তিত্ব৷ দীর্ঘদিন ধরে তিনি শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন৷ আলী রিয়াজ৷ তিনি আমারও শিক্ষক৷ তিনি অ্যামেরিকার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু শিক্ষকতাই করেন না, বাংলাদেশের নানান রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন এবং তিনি তাঁর কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন৷ সাম্প্রতিক নানা ইস্যুতে তাঁর বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ৷ এমন অনেকের নামই আমরা বলতে পারি৷

ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে দুর্বৃত্তায়ন বা দুর্নীতি কমবে বলে  মনে করেন?

আমার মনে হয় কমবে৷ ছাত্র সংসদ না থাকার কারণে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের আধিপত্য ক্যাম্পাসে বিরাজ করে৷ দীর্ঘদিন ধরে এটা আমরা দেখছি৷ এটা একরকম অগণতান্ত্রিক হয়ে ওঠে৷ তারা ক্যাম্পাসে যা খুশি করতে চায় বা পারে৷ তাদের কোনো জবাবদিহিতা নেই৷ একটি সংগঠনের অবাধ আধিপত্যের কারণে মাস্তানতন্ত্র বা গুন্ডাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়ে যায়৷ আপনারা সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে সেটা দেখতে পাবেন৷ কিন্তু যদি একটা সংসদ থাকত, তাহলে ছাত্রলীগ জনপ্রিয় হলে তাদের যেমন সংসদে আসার সুযোগ থাকত, তেমনি অন্যদেরও এখানে আসার সুযোগ সৃষ্টি হতো৷ তাদের জনপ্রিয়তা, দায়বদ্ধতার কারণে সব দলের প্রতিনিধিত্ব থাকার সুযোগ সৃষ্টি হতো৷ এখানে বাম সংগঠনগুলোও তাদের নেতৃত্বকে পরীক্ষা করার সুযোগ পেতো৷ বড় ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল বা অন্যদেরও সুযোগ সৃষ্টি হতো৷ মূল কথা হলো, ক্যাম্পাসে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হতো৷

ফাহমিদুল হক

ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় না বলে কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে?

ছাত্র সংসদ নির্বাচন নেই বলেই ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই৷ যেমন ধরুন, হলগুলো বা ক্যাম্পাসে এক ছাত্রলীগের দাপটেই সবাই অস্থির৷ তারা দলবেঁধে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেয়৷ রাজনীতিতে যেমন আমরা মাস্তানতন্ত্র দেখি, প্রায় সেইরকমই পরিবেশ ক্যাম্পাসগুলোতে৷

ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে আমাদের রাজনীতিতে কী ধরনের গুণগত পরিবর্তন আসতে পারে?

আমাদের রাজনীতিতে তো একটা অগণতান্ত্রিক পরিবেশ দিনে দিনে বেড়ে উঠছে৷ আগের তুলনায় রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক চর্চার বাইরে অগণতান্ত্রিক চর্চাই বেড়েছে৷ নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে হচ্ছে না৷ একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু হওয়ার মুখে৷ তার মানে, আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে গণতন্ত্রের চর্চা নেই৷ আগামী জাতীয় নির্বাচন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার হবে কিনা সেই নিশ্চয়তা নেই৷ ছাত্র সংসদগুলোতে যদি আমরা ভালো একটা নির্বাচন করতে পারি, যেমন হয় শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে, এখানে তো ভোট কারচুপি বা মারামারি হয় না৷ ছাত্র সংসদ নির্বাচন যদি সেভাবে হয়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তো সব সময় জাতীয় রাজনীতিতে একটা ভূমিকা রেখেছে, ফলে এর প্রভাব আমাদের জাতীয় রাজনীতিতেও পড়বে, এখানে যদি ভালো ভোট হয় তাহলে এর প্রভাব সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়৷

ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ক্ষমতা খর্ব হতে পারে? এমন আশঙ্কা থেকেই কি নির্বাচনটা হচ্ছে না?

এখানে ক্ষমতা খর্ব হওয়ার কিছু নেই৷ এখানে বলতে পারেন, একটু জবাবদিহিতার মুখে তাদের পড়তে হতে পারে৷ যেমন ধরুন, একটা হলে আসন ব্যবস্থা৷ ছাত্র সংসদ যদি বলে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে বণ্টন হতে হবে, তাহলে হল প্রশাসন সেটা করতে বাধ্য হবে৷ ছাত্র সংসদ যদি দাবি তোলে, হলের পরিবেশ ভালো করতে হবে বা অন্য কিছু করতে হবে, তাহলে হল প্রশাসন বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রদের নায্য দাবির মুখে সেটা করতে বাধ্য হবে৷ প্রশাসনের এই জবাবদিহিতাটা দরকার৷

নির্বাচন না হওয়ার জন্য কে দায়ী বলে আপনি মনে করেন?

আমার মনে হয়, জাতীয় রাজনীতির সিদ্ধান্তের একটা দিক আছে, সেটাই বড়৷ আর যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন আর নিজেদের মতো করে চলতে সক্ষম না, অর্থাৎ জাতীয় রাজনীতি না চাইলে তারাও আর পারছে না৷ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তো এখন ক্ষমতাসীন সরকারের কথায়ই উঠ-বস করে৷ স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান কিন্তু নিজেরাই নিজেদের স্বায়ত্বশাসন ধরে রাখেনি বা চর্চা করছে না৷ আর রাজনীতিবিদরাও চাননি৷ তাই আমি মনে করি, সরকার বা রাজনীতিবিদরাই দায়ী৷ তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা উদ্যোগ নিলে এটা যে একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার, আমি সেটা মনে করি না৷

নির্বাচন করতে হলে আগে থেকে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন?

প্রথমত, পরিবেশ তৈরি করার জন্য আগে থেকে একটা টাইম ফ্রেম দিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোকে আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বলা৷ তাদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করা৷ ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের ক্ষমতা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে৷ তবে তারা যেহেতু অনেকদিন ধরে ক্ষমতায় আছে, তাদেরও একটা জনপ্রিয়তা আছে৷ তারা যেহেতু হলগুলো দেখাশোনা করে, আমি মনে করব, তারাও বিষয়টা বুঝবে৷ তাদেরও নেতৃত্বে আসার সুযোগ থাকবে৷ এই সময়টুকুতে তারা আরো কিছু ভালো কাজ করুক, যাতে ছাত্ররা তাদের ভোট দেয়৷ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আগে সবগুলো ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে হবে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি আমরা এমন একটা ঘটনা ঘটতে দেখেছি৷ এভাবে ভোটের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান