জাকার্তায় বায়ুদূষণ মোকাবিলায় উদ্যোগ
৬ নভেম্বর ২০১৯জনসংখ্যার চাপ
জাকার্তা ও তার আশেপাশের শহরগুলি ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প ও নাগরিক পরিষেবার কেন্দ্র হয়ে উঠেছে৷ জনসংখ্যা ও যানবাহনের বেড়ে চলা চাপের কারণে অবশ্যই বায়ুদূষণের মতো নানা সমস্যা দেখা যাচ্ছে৷ তবে শুধু মোটরগাড়ির কারণেই বায়ুদূষণ ঘটছে না৷ শিল্পক্ষেত্রের বর্জ্য ও আবহাওয়াও নেতিবাচক ভূমিকা পালন করছে৷
এয়ার ভিশুয়াল নামের বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ সাইটের তথ্য অনুযায়ী, বায়ুদূষণের মানদণ্ডে জাকার্তা শহর শীর্ষ স্থান দখল করছে৷ এই সমস্যার ভিত্তিতে ‘কোয়ালিশন অফ ক্লিন দ্য ইউনিভার্স' বা ইবুকোটা নামের পরিবেশপন্থি জোট গত জুলাই মাসে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে৷ ‘অ্যাডভোক্যাসি ফর লিগাল এইড' সংগঠনের কর্মকর্তা নেলসন নিকোডেমুস সিমামোরা এ বিষয়ে বলেন, ‘‘যে সব মানুষ ভালো ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং জাকার্তাবাসীদের স্বাস্থ্যের অধিকার নিয়ে চিন্তিত, তাদের প্রতিনিধিরা উদ্যোগ নিয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেছে৷ আমরা ৭টি পক্ষের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করেছি৷’’
প্রশাসনের গাফিলতির অভিযোগ
বিবাদীদের মধ্যে দেশের প্রেসিডেন্ট, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কয়েকজন গভর্নরও রয়েছেন৷ তাঁরা জাকার্তার নাগরিকদের নির্মল বাতাস গ্রহণের অধিকার অবহেলা করছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে৷ বাস্তবে প্রতি বছর জাকার্তার বায়ুর মানের অবনতি ঘটছে৷ গ্রিনপিস সংগঠনের ইন্দোনেশিয়া শাখার বোন্ডান আন্দ্রিয়ানু বলেন, ‘‘বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়ায় বায়ুদূষণের প্রসঙ্গ তুললে বলতে হয়, আমাদের নাগালের মধ্যে বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে৷ জাকার্তা শহরেই সরকারের চারটি বায়ু মনিটরিং স্টেশন রয়েছে৷ তবে দুর্ভাগ্যবশত সেই ডিভাইস পিএম দুই দশমিক পাঁচ দূষণের মাত্রা মনিটর করতে পারে না৷ জাকার্তায় মার্কিন দূতাবাসের মনিটরিং স্টেশন থেকে আমরা পিএম দুই দশমিক পাঁচ দূষণের মাত্রা ডাউনলোড করেছিলাম৷ এয়ার নাউ ওয়েবসাইটেই সেটা করা সম্ভব৷ আমরা লক্ষ্য করলাম, যে ২০১৮ সালে তার আগের বছরের তুলনায় নিম্ন মানের বায়ুর দিনের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে৷ পরিবেশ ও বনসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সূত্রও একই তথ্য দিচ্ছে৷ তাদের সূত্র অনুযায়ী, ২০১৮ সালে জাকার্তা শহরে ১৮৬ দিন অস্বাস্থ্যকর ছিল এবং মাত্র ৩৪ দিন বায়ুর মান স্বাস্থ্যকর ছিল৷’’
স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি
বায়ুদূষণের দুটি অংশ রয়েছে – গ্যাস এবং পার্টিকেল বা কণা৷ গ্যাসের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে৷ তখন অক্সিজেন গ্রহণ করা কঠিন হয়ে পড়ে৷ সেইসঙ্গে শ্বাসযন্ত্রেও যন্ত্রণা হতে পারে৷ পার্টিকেল বা কণার পরিণাম বিপজ্জনক হতে পারে, কারণ এর ফলে ক্যানসার হতে পারে৷ ইন্দোনেশিয়ার ফুসফুস রোগের চিকিৎসক সমিতির প্রধান আগুস দ্বি সুশান্ত বলেন, ‘‘পার্টিকুলেট ম্যাটারের আকারের রকমভেদ হতে পারে৷ আকার অনুযায়ী পিএম উপরের শ্বাসনালীতে প্রবেশ করে নীচের অংশেও চলে যেতে পারে৷ এমনকি রক্তনালী প্রণালীতেও প্রবেশ করতে পারে৷ শ্বাসনালীতে যে কণা প্রবেশ করে, তার মাপ হতে হবে ১০ মাইক্রনের কম, পোশাকি ভাষায় যাকে পিএম টু পয়েন্ট ফাইভ বলা হয়৷ নীচের শ্বাসনালীতে পৌঁছে সেটি রক্তনালীর মাধ্যমে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ এই সব পার্টিকেল খুব যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে৷ তার অনেক উপাদান টক্সিক অথবা ক্ষতিকর হয়৷ তার মধ্যে এমনকি ফ্রি ব়্যাডিকালও থাকে৷ কয়েকটি কণা আবার ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়৷’’
বায়ুদূষণের কারণে সৃষ্ট নানা রোগ প্রতিহত করতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার পরামর্শ দেওয়া হয়৷ অর্থাৎ নিয়মিত ব্যায়াম, যথেষ্ট বিশ্রাম এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করতে হয়৷ পৌর এলাকায় বৃক্ষরোপণের মতো পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্যোগ বায়ুদূষণ কমিয়ে আনতে সহায়ক হতে পারে৷
নতুন প্রজন্মকে ঘিরে আশা
জাকার্তা শহরের পরিবেশ নিয়ে চিন্তিত অনেক সংগঠন এমন পদক্ষেপ নিয়ে থাকে৷ শহরের বায়ুর মানের উন্নতি করতে তারা বৃক্ষরোপণ করে৷ রিভার রেঞ্জার কমিউনিটির প্রতিনিধি সিয়াহিক বলেন, ‘‘আমি শিশুদের আমন্ত্রণ জানাই, যাতে তারা পরিবেশের প্রতি মনোযোগ দেয়৷ তাছাড়া জাকার্তা এখন বিশ্বের বায়ুদূষণ তালিকার শীর্ষে রয়েছে৷ শিশুরা গাছ লাগাতে এলে আমি চাই, তারা যেন পৃথিবী এবং এই শহর বাঁচাতে অংশ নিতে পারে৷’’
কাঁচা বয়স থেকেই পরিবেশ নিয়ে দুশ্চিন্তা শেখানো উচিত, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পৃথিবী সংরক্ষণ করে এবং এই গ্রহের দেখাশোনা করতে পারে৷
ইউসুফ পামুনচাক/এসবি