উপার্জনের ফারাক
১৩ জানুয়ারি ২০১৪মহজোট সরকারের আলাপ-আলোচনায় নারী-পুরুষের বেতনের পার্থক্যটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেয়েছে৷ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কর্মক্ষেত্রে নারীদের জন্য কোটা রাখার৷
সম্প্রতি প্রকাশিত পরিসংখ্যানে পুরুষ ও নারীর বেতনের মধ্যে যে পার্থক্য দেখানো হয়েছে, তা বেশ বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে৷ ‘ইকুয়াল পে ইনিশিয়াটিভ'-এর মতে, মেয়েরা পুরুষদের চেয়ে প্রায় এক চতুর্থাংশ কম বেতন পান জার্মানির মতো একটি দেশেও৷ অন্যদিকে মালিক পক্ষ ঘেঁষা জার্মান অর্থনৈতিক ইন্সটিটিউটের দাবি যে, এই ব্যবধানটা মাত্র এক শতাংশ৷
মেয়েদের জন্য ‘মেয়েলি পেশা'
কর্ম সমাজবিজ্ঞানী ইউটা আলমেনডিংগারকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, কোন পরিসংখ্যানটা আসলে ঠিক? উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘এই ২২ শতাংশের ব্যাপারে আমাদের একটা বিষয় বিবেচনা করতে হবে৷ পরিবারের দেখাশোনা করতে হয় বলে মেয়েদের পেশাগত সময়টা পুরুষদের তুলনায় কম হয়৷ মেয়েরা কাজ করেন অন্য ধরনের৷ যে সব প্রতিষ্ঠানে তাঁরা কাজ করেন, সেগুলি তুলনামূলকভাবে ছোট৷ এই সব কারণে কম আয়ও করেন মেয়েরা৷ ''
সমাজবিজ্ঞানী আলমেনডিংগার জোর দিয়ে বলেন, জীবনের বাস্তবতা থেকে এই পরিসংখ্যানটা এসেছে৷ অর্থাৎ মেয়েরা সাধারণত খণ্ডকালীন কাজ করেন, তাঁদের ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা কম, তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধ বয়সে দারিদ্র্যর কবলেও পড়েন তাঁরা বেশি৷
কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের জন্য কোটা রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ইতোমধ্যেই৷ যেমন বিজ্ঞাপন এজেন্সি থিংক-এ এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷ পরিচালনা পরিষদে রয়েছেন একমাত্র মহিলা কারেন হয়মান৷
আজও মেয়েরা যেন বহিরাগত
কারেন হয়মানের ভাষায়, ‘‘পুরুষ ভরা পুরো ঘরটায় একমাত্র মেয়ে আমি৷ যেন বহিরাগত কেউ৷ অবশ্য এতে অভ্যস্ত হয়ে যায় মানুষ৷''
নারী কোটা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘আগে আমি এটা চাইনি৷ কিন্তু এখন মনে হয় কোটার দরকার আছে৷ কেননা শীর্ষ পদে মেয়েদের আসাটা স্বাভাবিক হওয়া উচিত৷ এইভাবে মেয়েদের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়বে৷''
ক্যারিয়ার সম্পর্কে প্রশ্ন করায় হয়মান বলেন, পেশার ব্যাপারে বেতনটা তাঁর কাছে কখনও বড় ছিল না৷ কাজে আনন্দ পাওয়াটাই ছিল মুখ্য বিষয়৷ তবে নারী পুরুষের সমানাধিকারে ক্ষেত্রে সবসময় সুবিচার লক্ষ্য করা যায় না৷
হয়মান জানান, ‘‘আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ইচ্ছাকৃতভাবে আমার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে৷ এটা পরে আমি বুঝতে পারি৷ অবশ্য এটাও একটা কারণ হতে পারে যে আমি দাবি দাওয়া কম করি৷''
করিৎকর্মা মেয়েরাই টিকে থাকেন
শীর্ষ পদে আসীন নারীরাই শুধু নয়, তথাকথিত পুরুষের পেশায় যে সব মেয়ে কাজ করছেন, তাঁদের টিকে থাকতে হলে বেশি করিৎকর্মা হতে হয়৷ জার্মান দমকল বাহিনীর মাত্র এক শতাংশ কর্মী নারী৷ এঁদেরই একজন তানিয়া ডিটমার ৷ পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায় ছোটখাট৷ তাঁর ওজন ৬০ কিলো, ১.৬৫ মিটার৷ কিন্তু পুরুষদের মতোই নিয়মিত কঠিন ট্রেনিং নিতে হয় তাঁকে৷
পুরুষ ও মেয়েদের জন্য একই পরীক্ষা
তানিয়া বলেন, ‘‘আগুন তো সবার জন্যই গরম৷ রোগীরা সবার জন্যই সমান ভারি৷ কিন্তু দমকল বাহিনীতে কাজ পেতে হলে পুরুষ ও মেয়েদের একই রকম পরীক্ষা দিতে হয়৷''
দমকল বাহিনীতে ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে বেতনের পার্থক্য অবশ্য নেই৷ তাঁরা সবাই সরকারি কর্মচারি৷ তানিয়া নিজে কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার হননি৷ অবশ্য তিনি ‘পুরুষের পেশায়' কাজ করছেন৷ এই বাহিনীর কর্মীদের এমনিতেই ‘পুরু চামড়া' থাকতে হয়৷ তাঁদের কাজটা বেশ কঠিন৷ আগুন নেভানো বা রাস্তাঘাটে গুরুতর আহতের নিয়ে কাজ করা মোটেই সহজ নয়৷ কর্মক্ষেত্রে মিলেমিশেই কাজ করেন পুরুষ ও মেয়েরা৷