বয়স কমানোর সিদ্ধান্ত
২৮ এপ্রিল ২০১৪শিল্পোন্নত দেশগুলোতে গড় আয়ু বাড়তে থাকায় জনসংখ্যার ভারসাম্যে যে পরিবর্তন আসছে, তাতে আগামীতে আরো বেশি সংখ্যক বয়স্ক মানুষকে রাস্তায় কর্মহীন ঘুরে বেড়াতে দেখা যাবে৷ কিন্তু তাঁদের পেনশনের খরচ যোগাবেন যাঁরা, সেই তরুণ কর্মীদের সংখ্যা যাবে কমে৷
এ সমস্যার একটি সমাধান হতে পারে অবসরের বয়সসীমা বাড়িয়ে দেয়া৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নে জার্মানির কমিশনার গ্যুন্টার ও্যটিংগার এমন পরামর্শই দিয়েছেন৷
‘‘আমাদের উচিত অবসরের বয়সসীমা ৭০ বছর পর্যন্ত বাড়ানোর কথা চিন্তা করা৷ মানুষ যাতে আরো বেশি বয়স পর্যন্ত কর্মক্ষম থাকতে পারে, সেজন্য তাঁদের তৈরি করতে হবে৷''
গড় আয়ু বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রকৌশল বা অন্যান্য খাতে দক্ষ কর্মীর অভাবের বিষয়টিও মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি, যার সমাধান হতে পারে অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর মধ্য দিয়ে৷
লন্ডনের কাস বিজনেস স্কুলের পরিচালক ডেভিড ব্লেক গত তিন দশক ধরে পেনশন পলিসি নিয়ে কাজ করছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর গত ১৫০ বছরের ইতিহাসে চোখ রাখলে আমরা দেখতে পাই, প্রতি ১০ বছরে মানুষের গড় আয়ু মোটামুটি আড়াই বছর করে বেড়েছে৷ অথচ অনেক দেশই অবসরের বয়সসীমা সেই ১৯৪০-এর দশকের মতো ৬৫ বছরই রেখেছ৷
যখন এই বয়সসীমা ঠিক করা হয়েছিল, তারপর ইউরোপীয়দের গড় আয়ু ১০ থেকে ১২ বছর বেড়ে গেছে বলে জানান ব্লেক৷
উল্টো পথে জার্মানি
বিশেষজ্ঞরা যাই বলুন না কেন, জার্মান সরকার করছে উল্টোটা৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেলের জোট সরকার ক্ষেত্রবিশেষে অবসরের বয়স ৬৫ থেকে কমিয়ে ৬৩ বছর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ যেসব নাগরিক সরকারের পেনশন তহবিলে ৪৫ বছর ধরে টাকা দিয়ে আসছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে৷
শ্রমমন্ত্রী আন্দ্রেয়া নালেস নেতৃত্বাধীন সামাজিক গণতন্ত্রী দল এই প্রস্তাবের পক্ষে বিশেষভাবে কাজ করে আসছিল৷ এর আগে রক্ষণশীল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রীরাও দাবি জানিয়েছিল, ১৯৯২ সালের আগে যে মায়েদের সন্তানের জন্ম হয়েছে, তাঁদের পেনশনের পরিমাণ বাড়াতে হবে৷
খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রীরা মনে করে, সরকারের বর্তমান পেনশন নীতি এ ধরনের মায়েদের বিপদের মুখে ফেলছে৷ আর যেহেতু জার্মানি অর্থনৈতিকভাবে ভালোই করছে, তাহলে পেনশন ব্যবস্থায় সংস্কার আনা হবে না কেন?
‘দায়িত্বজ্ঞানহীন'
ইউরোপীয় পার্লামেন্টে সবুজ দলের অর্থনীতি বিষয়ক মুখপাত্র স্ভেন গিগোল্ড মনে করেন, যে সংস্কার এখন হচ্ছে তা সঠিক পথে হচ্ছে না৷ অবসরের বয়সের চেয়ে কত টাকা একজন জ্যেষ্ঠ নাগরিক অবসরের পর পাচ্ছেন – সে বিষয়ে আরো বেশি গুরুত্ব দেয়ার পক্ষে তিনি৷
ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘যত দিন যাচ্ছে, অবসরপ্রাপ্ত নাগরিকদের মধ্যে দারিদ্র্য তত বাড়ছে – এটা উদ্বেগের বিষয়৷ অবসরের বয়স কমিয়ে বা তা ৭০ বছর পর্যন্ত বাড়িয়ে এ সমস্যার সমাধান হবে না৷''
আর ইইউ কমিশনার গ্যুন্টার ও্যটিংগার যেহেতু জ্বালানি বিষয়ক কমিশনার, সেহেতু পেনশনের বিষয় নিয়ে তাঁর কথা বলা উচিত হয়নি বলেও মনে করেন সবুজ দলের এই নেতা৷
পেনশন নীতি একটি দেশের নিজস্ব বিষয় হওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশে অবসরের বয়স একেক রকম৷ এ বিষেয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও তেমন কিছু করার সুযোগ নেই৷ যেমন স্লোভাকিয়ায় নারীদের অবসরের বয়স ৫৭ বছর ৬ মাস৷ আবার সুইডেনে কোনো কোনো খাতে ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করা যায়৷ কর্মক্ষম নাগরিকদের ওপর করের বোঝা না বাড়িয়ে কি করে অবসরপ্রাপ্তদের বেশি সুবিধা দেয়া যায়, সেই ভারসাম্য রক্ষাই থাকে পেনশন নীতির মূল উদ্দেশ্য৷
এ অবস্থায় জার্মানি যদি অবসরের বয়স কমিয়ে আনে, তাহলে আশেপাশের দেশগুলোও একই পথ অনুসরণ করতে উৎসাহী হবে বলে ডেভিড ব্লেকের আশঙ্কা৷ তিনি বলেন, ‘‘সামাজিকভাবে দেখলে অবসরের বয়স কমিয়ে আনার এই সিদ্ধান্ত হবে দায়িত্বজ্ঞানহীন৷''