1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘থ্যালাসেমিয়ার প্রকোপ থেকে বাঁচতে সচেতনতা জরুরি’

১৭ জানুয়ারি ২০১২

বাংলাদেশে এইডস-এর চেয়েও বেশি হারে বিস্তার ঘটছে থ্যালাসেমিয়া রোগের৷ অথচ এইডস প্রতিরোধে যতোটা উদ্যোগ দেখা যায়, থ্যালাসেমিয়ার ক্ষেত্রে তেমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে না বলে মনে করেন রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মোর্শেদ জামান৷

https://p.dw.com/p/13kOr
থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুছবি: Afraa Mohamad

থ্যালাসেমিয়া রোগের ধরণ এবং পূর্বলক্ষণ সম্পর্কে রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মোর্শেদ জামান বলেন, ‘‘থ্যালাসেমিয়া হচ্ছে এক ধরণের বংশগত বা জন্মগত রক্তস্বল্পতা৷ এটি রক্তের ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিনের জন্য হয়ে থাকে৷ এটির তিনটি ধরণ রয়েছে৷ তীব্র, মাঝারি এবং মৃদু থ্যালাসেমিয়া৷ তীব্র থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তদের শিশু অবস্থা থেকেই এই রোগের উপসর্গগুলো দেখা যায়৷ শিশু রক্তস্বল্পতায় ভোগে, চেহারায় ফ্যাকাসে ভাব দেখা যায়৷ খাওয়ার রুচি থাকে না৷ খেতে গেলে বমি হয়৷ এমতাবস্থায় শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়৷ আবার রক্ত ভেঙে যাওয়ার ফলে জন্ডিস বা পাণ্ডু রোগ হতে পারে৷ এছাড়া যকৃত ও প্লীহা আকারে বৃদ্ধি পায়৷ একইসাথে রক্ত ভেঙে যাওয়ার ফলে অতিরিক্ত রক্ত তৈরি হতে থাকে এবং অস্থি বা হাড়ে বিকৃতি ঘটে৷ চেহারাতেও রোগের উপসর্গ ফুটে ওঠে৷

বর্তমানে থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রকোপ কতটা - এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. জামান বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সরকারের এ সংক্রান্ত কোন জরিপ নেই৷ তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা - ডাব্লিউএইচও'র হিসাবে, বিশ্বে ৬.৫ শতাংশ মানুষ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত৷ আর বাংলাদেশে ৪ থেকে ৮ শতাংশ মানুষ থ্যালাসেমিয়া ও হিমোগ্লোবিন-ই ডিজঅর্ডার - যা থ্যালাসেমিয়ার কাছাকাছি অবস্থা সেটি বহন করছে৷''

Dr Morshed Zaman, Blut Expert und Arzt von Rajshahi, Bangladesch Datum: 02.05.2009 Bild wurde uns zugeschickt von Herrn Zaman selbst
রাজশাহী বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মোর্শেদ জামানছবি: privat

বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া রোগের ভয়াবহতা কিংবা ঝুঁকি সম্পর্কে তিনি বললেন, ‘‘এটা যেহেতু বংশগত রোগ, তাই ধীরে ধীরে বংশ পরম্পরায় তা ছড়িয়ে পড়ছে৷ ফলে এখন যদি ৪ শতাংশ মানুষ এটি বহন করে এবং সচেতনতার মাত্রা না বাড়ে, তাহলে এটা ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ যেমনটি হয়েছিল সাইপ্রাসে৷ সেখানে ৩৫ শতাংশ মানুষ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছিল৷ তবে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সেখানেও এটার প্রকোপ কমে এসেছে৷ ফলে এখনই থ্যালাসেমিয়া মোকাবিলায় পদক্ষেপ না নিলে সাইপ্রাসের মতো অবস্থা হবে এবং জাতি ধীরে ধীরে দুর্বল-পঙ্গু হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে৷ বাংলাদেশে এইডস এর চেয়েও বেশি হারে থ্যালাসেমিয়ার প্রকোপ রয়েছে৷ এটি গোপনে ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ছে৷ অথচ এইডস এর জন্য যতোটা উদ্যোগ এখানে রয়েছে, থ্যালাসেমিয়া থেকে রক্ষায় তেমন কোন উদ্যোগ এখনও গ্রহণ করা হয়নি৷''

Kind mit der Krankheit Thalassemia
থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশু রক্তস্বল্পতায় ভোগে, চেহারায় ফ্যাকাসে ভাব দেখা যায়, খাওয়ার রুচি থাকে নাছবি: Afraa Mohamad

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ ও প্রতিকারে করণীয় সম্পর্কে ডা. জামান বলেন, ‘‘সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেদের দেহে থ্যালাসেমিয়ার অস্তিত্ব এবং ধরণ সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হতে হবে৷ যদি কেউ আক্রান্ত হয়, তাহলে যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে৷ এছাড়া এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি অন্য একজন অসুস্থ ব্যক্তিকে বিয়ে করলে তাদের সন্তানও জন্মসূত্রে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে৷ তাই বিয়ের পূর্বেই পাত্র-পাত্রীর উচিত নিজেদের রক্ত পরীক্ষা করে এই রোগের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া৷ অথচ বাংলাদেশে সামাজিক অবস্থার কারণে বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করার ব্যাপারটি খুব দুরূহ বিষয়৷ তাই যারা জানে যে, তারা এর জিন বহন করছে, বাচ্চা নেওয়ার আগে তাদের ঠিকমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নেওয়া জরুরি৷ এছাড়া অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা করেও আরোগ্য লাভ সম্ভব৷ তবে এটি খুব ব্যয়বহুল এবং বাংলাদেশে সহজলভ্য নয়৷ তাই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্তদের নিয়মিত রক্ত দান এবং ওষুধ-ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসা করা হয়ে থাকে৷

সাক্ষাৎকার: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য