1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ধর্ম দিয়েও হচ্ছে না, আইন দিয়ে কি হবে?

২২ অক্টোবর ২০২০

বাংলাদেশে গত কয়েকদিনে মাদ্রাসায় যৌন নিপীড়নের বেশকিছু ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে৷ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার এক মাদ্রাসা শিক্ষক গত দুই বছর প্রতিরাতে শিশু ছাত্রদের যৌন নিপীড়নে বাধ্য করতেন বলে স্বীকার করেছেন৷

https://p.dw.com/p/3kHBJ
প্রতীকী ছবিছবি: picture alliance/dpa/P. Pleul

চার শিশু ছাত্রকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় গত সোমবার আহমদিয়া আজিজুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক নাছির উদ্দিনকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়৷ তিনি ঐ কওমি মাদ্রাসার হোস্টেল সুপার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন৷

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, শিশু শিক্ষার্থীদের পরিবারের দারিদ্র্য ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এবং ভয় দেখিয়ে এ ধরনের অপকর্মে বাধ্য করতেন তিনি৷

প্রায় দুই বছর ধরে এই অপকর্ম করলেও এতদিন কেউ ভয়ে মুখ খোলেনি৷ গত রোববার ঐ মাদ্রাসার পাঁচ শিশু শিক্ষার্থী পালিয়ে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের জানালে অভিভাবকরা থানায় মামলা করেন৷ এরপরই ঐ শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়৷

এই ঘটনাটি ঘটেছে ইসলাম ধর্ম শিক্ষা দেয়ার প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসায়৷ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন মাদ্রাসার শিক্ষক৷ আর তার শিকার হয়েছে অল্পবয়সি ছেলে শিক্ষার্থীরা৷

প্রায় একইরকম ঘটনা ঘটেছে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের গির্জাতেও৷ জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ক্যাথলিক গির্জায় যাজকদের হাতে নাবালক ছেলেরা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে৷

বছর দুয়েক আগে ‘জার্মান বিশপস কনফারেন্স’-এর এক জরিপ জানায়, ১৯৪৬ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে অন্তত ৩,৬৭৭ জন নাবালক কমপক্ষে ১,৬৭০ জন যাজক দ্বারা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে৷ অবশ্য বিশেষজ্ঞদের ধারনা, যৌন সহিংসতার খবর প্রকাশ না হওয়ার সংখ্যা সর্বোচ্চ এক লাখও হতে পারে৷

সম্প্রতির জার্মানির ক্যাথেলিক চার্চ জানিয়েছে, যৌন সহিংসতার শিকার ব্যক্তিরা আগামী বছর থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা দাবি করতে পারবেন

এমনকি রোমান ক্যাথলিক চার্চের সদরদপ্তর ভ্যাটিকানের সেমিনারিতেও (যেখানে যাজক হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়) একজন নাবালকের যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠেছে৷ প্রথমবারের মতো গত ১৪ অক্টোবর ভ্যাটিকানের ক্রিমিনাল ট্রাইবুনালে এই বিষয়ে একটি মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে৷ অভিযোগ উঠেছে, পোপ ফ্রান্সিসসহ গির্জা কর্তৃপক্ষকে নিপীড়নের বিষয়টি আগে জানানো হলেও তারা ব্যবস্থা নেননি৷ অবশেষে গত চার-পাঁচ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাজকদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠা শুরু করলে পোপ ফ্রান্সিস বিষয়টি স্বীকার করে নেন৷ এবং ভবিষ্যতে যেন এসব না ঘটে সেজন্য কিছু উদ্যোগ নেয়া শুরু করেছেন৷

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এমন যৌন নিপীড়নের ঘটনা শোনা যায় হিন্দু ও বৌদ্ধদের মন্দিরগুলোতেও৷

এসব খবর মানুষের এই ধারনাকে নিশ্চিত করে যে, ধর্মীয় শিক্ষা এসব অপরাধ থামাতে পারে না৷

তাহলে?

তাহলে আইন দিয়ে এসব নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে৷ পাশাপাশি প্রয়োজন অভিভাবকদের সচেতনতা৷

Deutsche Welle Süd-Ost-Asien Mohammad Zahidul Haque
জাহিদুল হক, ডয়চে ভেলেছবি: DW

সাধারণত দরিদ্র মা-বাবারা সন্তানদের আবাসিক মাদ্রাসায় পড়তে পাঠান৷ কম খরচে থাকা-খাওয়ার নিশ্চয়তার পাশাপাশি সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে তাদের সেখানে পাঠানো হয়৷ এই বাবা-মাদের অনেকেই সন্তানদের মাদ্রাসায় পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকেন৷ ফলে নিয়মিত খবর নেয়ার প্রয়োজন মনে করেননা তারা৷ এই সুযোগটিই নিয়ে থাকেন মাদ্রাসার শিক্ষক ও হোস্টেল সুপাররা৷

সম্প্রতি বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান যোগ করা হয়েছে৷ মাদ্রাসায় ঘটা অপরাধগুলোও এই আইনের আওতায় পড়বে৷ এর আগে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন৷ এখন আইনে পরিবর্তন আনায় অপরাধ কমবে কিনা, সেটা সময়ই বলে দেবে৷

তবে মাদ্রাসায় যৌন নিপীড়ন কমাতে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে৷ আবাসিক মাদ্রাসায় নিজের সন্তান কেমন আছে, সেটা নিজেকেই খবর নিতে হবে৷ যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলো কীভাবে ঘটতে পারে, সে সম্পর্কে সন্তানকে ধারনা দিতে হবে৷ এমন ঘটনা ঘটলে তারা যেন সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষ ও বাবা-মাকে জানায় সেই শিক্ষাটাও দিতে হবে৷