ধর্ম দিয়েও হচ্ছে না, আইন দিয়ে কি হবে?
২২ অক্টোবর ২০২০চার শিশু ছাত্রকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় গত সোমবার আহমদিয়া আজিজুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক নাছির উদ্দিনকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়৷ তিনি ঐ কওমি মাদ্রাসার হোস্টেল সুপার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করতেন৷
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, শিশু শিক্ষার্থীদের পরিবারের দারিদ্র্য ও অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এবং ভয় দেখিয়ে এ ধরনের অপকর্মে বাধ্য করতেন তিনি৷
প্রায় দুই বছর ধরে এই অপকর্ম করলেও এতদিন কেউ ভয়ে মুখ খোলেনি৷ গত রোববার ঐ মাদ্রাসার পাঁচ শিশু শিক্ষার্থী পালিয়ে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের জানালে অভিভাবকরা থানায় মামলা করেন৷ এরপরই ঐ শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়৷
এই ঘটনাটি ঘটেছে ইসলাম ধর্ম শিক্ষা দেয়ার প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসায়৷ ঘটনাটি ঘটিয়েছেন মাদ্রাসার শিক্ষক৷ আর তার শিকার হয়েছে অল্পবয়সি ছেলে শিক্ষার্থীরা৷
প্রায় একইরকম ঘটনা ঘটেছে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের গির্জাতেও৷ জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ক্যাথলিক গির্জায় যাজকদের হাতে নাবালক ছেলেরা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে৷
বছর দুয়েক আগে ‘জার্মান বিশপস কনফারেন্স’-এর এক জরিপ জানায়, ১৯৪৬ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে অন্তত ৩,৬৭৭ জন নাবালক কমপক্ষে ১,৬৭০ জন যাজক দ্বারা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে৷ অবশ্য বিশেষজ্ঞদের ধারনা, যৌন সহিংসতার খবর প্রকাশ না হওয়ার সংখ্যা সর্বোচ্চ এক লাখও হতে পারে৷
সম্প্রতির জার্মানির ক্যাথেলিক চার্চ জানিয়েছে, যৌন সহিংসতার শিকার ব্যক্তিরা আগামী বছর থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা দাবি করতে পারবেন৷
এমনকি রোমান ক্যাথলিক চার্চের সদরদপ্তর ভ্যাটিকানের সেমিনারিতেও (যেখানে যাজক হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়) একজন নাবালকের যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার অভিযোগ উঠেছে৷ প্রথমবারের মতো গত ১৪ অক্টোবর ভ্যাটিকানের ক্রিমিনাল ট্রাইবুনালে এই বিষয়ে একটি মামলার কার্যক্রম শুরু হয়েছে৷ অভিযোগ উঠেছে, পোপ ফ্রান্সিসসহ গির্জা কর্তৃপক্ষকে নিপীড়নের বিষয়টি আগে জানানো হলেও তারা ব্যবস্থা নেননি৷ অবশেষে গত চার-পাঁচ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যাজকদের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠা শুরু করলে পোপ ফ্রান্সিস বিষয়টি স্বীকার করে নেন৷ এবং ভবিষ্যতে যেন এসব না ঘটে সেজন্য কিছু উদ্যোগ নেয়া শুরু করেছেন৷
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এমন যৌন নিপীড়নের ঘটনা শোনা যায় হিন্দু ও বৌদ্ধদের মন্দিরগুলোতেও৷
এসব খবর মানুষের এই ধারনাকে নিশ্চিত করে যে, ধর্মীয় শিক্ষা এসব অপরাধ থামাতে পারে না৷
তাহলে?
তাহলে আইন দিয়ে এসব নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে৷ পাশাপাশি প্রয়োজন অভিভাবকদের সচেতনতা৷
সাধারণত দরিদ্র মা-বাবারা সন্তানদের আবাসিক মাদ্রাসায় পড়তে পাঠান৷ কম খরচে থাকা-খাওয়ার নিশ্চয়তার পাশাপাশি সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করতে তাদের সেখানে পাঠানো হয়৷ এই বাবা-মাদের অনেকেই সন্তানদের মাদ্রাসায় পাঠিয়ে নিশ্চিন্ত থাকেন৷ ফলে নিয়মিত খবর নেয়ার প্রয়োজন মনে করেননা তারা৷ এই সুযোগটিই নিয়ে থাকেন মাদ্রাসার শিক্ষক ও হোস্টেল সুপাররা৷
সম্প্রতি বাংলাদেশে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান যোগ করা হয়েছে৷ মাদ্রাসায় ঘটা অপরাধগুলোও এই আইনের আওতায় পড়বে৷ এর আগে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল যাবজ্জীবন৷ এখন আইনে পরিবর্তন আনায় অপরাধ কমবে কিনা, সেটা সময়ই বলে দেবে৷
তবে মাদ্রাসায় যৌন নিপীড়ন কমাতে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে৷ আবাসিক মাদ্রাসায় নিজের সন্তান কেমন আছে, সেটা নিজেকেই খবর নিতে হবে৷ যৌন নিপীড়নের ঘটনাগুলো কীভাবে ঘটতে পারে, সে সম্পর্কে সন্তানকে ধারনা দিতে হবে৷ এমন ঘটনা ঘটলে তারা যেন সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষ ও বাবা-মাকে জানায় সেই শিক্ষাটাও দিতে হবে৷