নগ্ন অভিনেত্রী এবং জার্মান অশ্লীলতা আইন
৬ ডিসেম্বর ২০১৮আন্টিয়ে ম্যোনিং উম হিমেলে ভিলেন (স্বর্গের দোহাই) নামের জনপ্রিয় জার্মান টিভি শো-তে স্ট্রিপার থেকে নানে পরিণত হওয়া এক চরিত্রে অভিনয় করেন৷ অনেক সাক্ষাৎকারেই একাধিকবার তিনি বলেছেন, নগ্ন হতে তাঁর ভালো লাগে৷
২০১৮ সালের জুনে বাভারিয়ার গ্রামীণ এলাকার এক পার্কিং এরিয়ায় তিন ব্যক্তির সামনে তিনি নগ্ন হন৷ স্বচ্ছ কাপড় পরা ম্যোনিং এক পর্যায়ে তাঁর স্কার্ট তুলে গোপনাঙ্গ প্রদর্শন করেন৷ এ সময় তাঁর পরনে কোনো অন্তর্বাসও ছিল না৷
তবে ম্যোনিং জানতেন না, তিন ব্যক্তির একজন ট্রাকচালক হলেও বাকি দুজন ছিলেন ছদ্মবেশে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা৷ তাঁদের একজন গোপনে পুরো ঘটনা ভিডিও করেন এবং ম্যোনিং-এর বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ আনেন৷
আদালত অশ্লীলতার অভিযোগ খারিজ করে দিলেও অভব্য আচরণের দায়ে ম্যোনিংকে ৩০০ ইউরো (প্রায় ৩০ হাজার টাকা) জরিমানা করেছে৷
রায়ের পর ম্যোনিং বলেন, ‘‘আমি বিশ্বাস করতে পারছি না নারী হিসেবে শরীর প্রদর্শন করাও একটা অপরাধ৷''
আইনে অস্পষ্টতা
জার্মান পেনাল কোডের ১৮৩ এ অনুযায়ী, অশ্লীল ব্যবহার একটি অপরাধ৷ এর সংজ্ঞা হিসেবে বলা হয়েছে, ‘প্রকাশ্যে যৌন আচরণ এবং এর মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে কাউকে আঘাত করা'৷ অপরাধের সাজা জরিমানা এবং এক বছরের কারাদণ্ডও হতে পারে৷
কিন্তু কোন ধরনের কর্মকাণ্ড এই আইনের আওতায় পড়ে, তা নিয়ে রয়েছে অস্পষ্টতা৷
আইনজীবী স্টেফেন লিন্ডবার্গ বলেন, ‘‘আইনে কোনটা অশ্লীল আচরণ আর কোনটা নয়, তা নির্ধারণ খুবই বিতর্কের বিষয়৷ প্রকাশ্যে চুমু খেলে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হয় না৷ এমনকি বুন্ডেসলিগার ম্যাচ চলাকালে কেউ নগ্ন হয়ে মাঠে ঢুকে পড়লেও তাঁর বিরুদ্ধে এই আইনে অভিযোগ দায়ের করা হয় না৷''
এর ফলে ম্যোনিংয়ের ক্ষেত্রে কিসের ভিত্তিতে এই অভিযোগ দায়ের হলো এমন প্রশ্ন উঠেছে৷ প্রকাশ্যে গোপনাঙ্গ প্রদর্শন রুখতে সাধারণত কাজে লাগানো হয় ১৮৩ ধারা৷ কিন্তু সে আইন ম্যোনিংয়ের বিরুদ্ধে কাজে লাগাতে পারেনি পুলিশ, কারণ, সে ধারায় শুধু পুরুষদের কথাই বলা হয়েছে৷
পেনাল কোডের এই ধারায় বলা আছে, ‘‘প্রদর্শনের মাধ্যমে একজন পুরুষ অন্য কাউকে হয়রানি করলে তাঁকে জরিমানা বা এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেয়া হবে৷''
লিন্ডবার্গ বলছেন, ‘‘আমার ধারণা, তিনি (ম্যোনিং) পেনাল কোড ১৮৩ আর ১৮৩ এ-র গ্যাঁড়াকলে পড়ে গেছেন৷ তিনি সামান্য স্কার্ট তুলেছেন আর একটু শরীর দুলিয়েছেন৷ কোনো যৌন আচরণ না করায় এটা অশ্লীল নয়৷ বরং প্রদর্শন করার অন্য ধারাটিতে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা যেতো, কিন্তু সেটি শুধু পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য৷''
এই দুই ধারাকেই ‘ত্রুটিপূর্ণ' বলে উল্লেখ করেন লিন্ডবার্গ৷ লিঙ্গের ওপর ভিত্তি করে এমন আইনকে তিনি ‘হাস্যকর' বলেও অভিহিত করেন৷
তিনি বলেন, ‘‘আজ অথবা কাল, আইনের ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে এই দুই ধারা৷ শিগগিরই এমন প্রশ্নও উঠবে, যাঁরা নারী বা পুরুষ কোনোটাই নন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই আইন কিভাবে প্রযোজ্য হবে৷''
কার্লা ব্লাইকার/এডিকে