বার্লিন ও নগ্নতা
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭প্রথমেই খেয়াল রাখা দরকার,বার্লিনে নগ্নতা মানেই কিন্তু যৌনতা নয়– অন্তত বার্তা হিসেবে নয়৷ অপরদিকে নগ্নতা যেখানে, সেখানে কি যৌনতা অল্পস্বল্প উঁকি মারে না? ডয়চে ভেলের কলামনিস্ট গেরো শ্লিষ-এর দার্শনিক প্রশ্ন৷
‘টপলেস'
ঠিক ঐ নামেই বার্লিনের কেন্দ্রে একটি মিউজিক ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হয়৷ শহরের বহু ওপরে ‘স্কাই লাইভ' ক্লাবে গরমে ঠান্ডা হবার মতো মিউজিক বাজান ‘ব্রিটিশ অ্যান্ড আইরিশ মডার্ন মিউজিক ইনস্টিটিউট'-এর শিল্পীরা৷ তবে শিল্পী কিংবা শ্রোতাদের মধ্যে ‘টপলেস' অবস্থায় কেউ নেই, নামটাই শুধু টপলেস ও সেটা এই কারণে যে, একটি বহুতল ভবনের ন্যাড়া ছাদের ওপর জলসা, শামিয়ানা পর্যন্ত নেই৷
‘নগ্ন প্রচার'
টিম রেনার এককালে বার্লিনের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সচিব ছিলেন৷ আজ তিনি জার্মান সংসদে আসন পাবার জন্য ভোটে নামছেন৷ তিনি তাঁর একটি নির্বাচনি প্রচার ভিডিওতে নিজেকে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় দেখিয়েছেন৷ কাজটা নিঃসন্দেহে সাহসের, কেননা, তাঁর নির্বাচনি এলাকা শার্লটেনবুর্গ-ভিলমার্সডর্ফের মানুষজন অতটা ‘মডার্ন' কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থাকতে পারে৷ রেনার বলেছেন, তিনি ‘সুইং' ভোটার, অর্থাৎ অনিশ্চিত ভোটারদের দলে টানার চেষ্টা করছেন৷
ন্যুডিজম
সাবেক পূর্ব জার্মানির ক্ষেত্রে নগ্নতা একটা পুরাতন ধারা, যা কমিউনিস্ট আমল থেকে চলে আসছে – যদিও এই এফকেকে অর্থাৎ ‘ফ্রাইক্যোর্পারকুলটুর' বা ‘মুক্ত শরীর সংস্কৃতি', এক কথায় নগ্ন অবস্থায় সৈকতে সময় কাটানো, তা সে জলেই হোক আর সূর্যস্নান করতে করতেই হোক, এই বস্তুটিতে সাবেক পশ্চিম জার্মানি সাবেক পূর্ব জার্মানির ধারেকাছেও আসতে পারতো না৷ সেই কারণেই হয়তো বামদলের প্রবীণ নেতা, ৬৯ বছর বয়সি গ্রেগর গিজি জার্মানিতে নগ্নতার সংস্কৃতি বজায় রাখা নিয়ে আন্দোলন করছেন৷
নগ্নতার ভক্ত
বার্লিনে সে ধরণের মানুষেরও কোনো কমতি নেই৷ সম্প্রতি বার্লিন আন্ডারগ্রাউন্ডের চার নম্বর আর এক নম্বর ট্রামগুলিতে এক পুরোপুরি নগ্ন যাত্রীকে নিঃশব্দে কামরা থেকে কামরায় যেতে দেখা গেছে৷
যাঁরা নগ্ন সন্তরণে আগ্রহী, তাঁরা ‘নাক্টবাডেন.ডিএ' গোত্রীয় ওয়েবসাইটগুলি ঘেঁটে দেখতে পারেন, কেননা সেখানে বলে দেওয়া আছে, রাজধানীর চারপাশের হ্রদগুলিতে সেরা নিউডিস্ট সৈকতগুলি কোথায়৷ লেক ভানজে থেকে লেক হেলেনজে অবধি নগ্ন সন্তরণের সুযোগ আছে – শুধু গাড়ি কিংবা ট্রামে করে সেখানে গেলেই হলো৷
নগ্ন নৃত্য
বার্লিন হলো পার্টির শহর৷ এখানে ‘ব্যার্গহাইন' টেকনো মিউজিক নাইট ক্লাবে নাচতে গিয়ে হঠাৎ কোনো পেশিবহুল নগ্ন নর্তককে দেখতে পাওয়াটা আশ্চর্যের কিছু নয়৷
বলতে কি, বার্লিনের নাইট লাইফে নগ্নতা একটি বড় উপাদান৷ ‘পর্নসেপচুয়াল' নামের একটি পার্টিতে ঢোকার জন্য মাঝরাতেও মাইল খানেক লম্বা লাইন পড়ে কেন? কারণ, সেখানে লেদার, ফেটিশ বা কোনো কিছুই না পরে নাচানাচিতে কোনো বাধা নেই৷
বার্লিন মনোরঞ্জনের শহর, তথাকথিত ‘রোরিং টোয়েন্টিস' বা গত শতাব্দীর বিশের দশক থেকেই এখানে নাচ-গান-নগ্নতা চলে আসছে৷ হালে পৌরকর্তারা বার্লিনের জন্য একটি নতুন বিজ্ঞাপনি প্রচার অভিযান চালাচ্ছেন, যার স্লোগান হলো, ‘‘স্বাধীনতার রাজধানী৷'' আর নগ্নতা কি এক ধরণের স্বাধীনতা নয়?
গেরো শ্লিষ/এসি/এসিবি