নাগরিকত্ব আইন:দুদিনে মৃত ৯ প্রতিবাদী, বিক্ষোভ বাড়ছে
২০ ডিসেম্বর ২০১৯নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং এনআরসি নিয়ে প্রতিবাদে উত্তাল উত্তর প্রদেশে শুক্রবার ছ-জনের মৃত্যু হল এই নিয়ে বুধ ও বৃহস্পতিবার সারা দেশে মারা গেলেন ন-জন, তার মধ্যে সাতজনই উত্তর প্রদেশে। আর নাগরিকত্ব নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে মারা গেলেন ১৪ জন।
বস্তুত দেশজুড়ে বিক্ষোভ কমেনি, বরং বাড়ছে। শুক্রবার সবথেকে বেশি হিংসা হয়েছে উত্তর প্রদেশে। দু-জন প্রতিবাদী মারা গিয়েছেন বিজনৌরে, একজন করে ফিরোজাবাদ, সম্ভল, মিরাট ও কানপুরে। উত্তর প্রদেশের ডিআইজি ও পি সিং দাবি করেছেন, ''পুলিশের গুলিতে কোনও প্রতিবাদীর মৃত্যু হয়নি। কারণ, পুলিশ কোনও গুলিই চালায়নি।'' রাজ্যের তেরোটি জেলায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিক্ষোভ হয়েছে। বৃহস্পতিবার মেঙ্গালুরুতে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন ২ প্রতিবাদী। আর লখনউতে ১। আহতের সংখ্যা বহু।
শুক্রবার পুরনো দিল্লির দরিয়াগঞ্জ পুলিশ থানার সামনে একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা এদিন সকাল থেকেই উত্তাল ছিল দিল্লির জামা মসজিদ চত্বর। নমাজের পর সেখান থেকে মিছিল করে প্রতিবাদীদের যাওয়ার কথা ছিল ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত। যদিও মিছিলের ছাড়পত্র দেয়নি পুলিশ। এরই মধ্যে বেলা এগারোটা নাগাদ শোনা যায় ভিম আর্মির (আম্বেডকরপন্থী নিম্নবর্গ এবং দলিতদের সংগঠন) প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ যাচ্ছেন জামা মসজিদে। কিছু দিন আগেই উত্তরপ্রদেশেবিক্ষোভ দেখানোর সময় যোগী আদিত্যনাথের সরকার গ্রেফতার করেছিল তাঁকে। অভিযোগ, জেলে প্রবল পুলিশি অত্যাচারের মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে। এই মুহূর্তে ভারতে দলিত নেতা হিসেবে একেবারে প্রথম সারিতে চন্দ্রশেখর।
চন্দ্রশেখরের আসার খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসে পুলিশ প্রশাসনও। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চন্দ্রশেখর যাতে জামা মসজিদ পর্যন্ত পৌঁছতেই না পারেন তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে জামা মসজিদে পৌঁছে যান চন্দ্রশেখর। প্রায় ২০ মিনিট সেখানে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ দেখান তিনি। তাঁর এক হাতে ছিল আম্বেডকরের পোস্টার, অন্য হাতে সংবিধানের ভূমিকা। যা সমবেত জনগণের সামনে পাঠ করে শোনান তিনি। এরপর সেখান থেকে ইন্ডিয়া গেটের উদ্দেশে রওনা হন দলিত নেতা। মসজিদের বাইরেই তাঁকে আটক করে পুলিশ। চন্দ্রশেখরকে ঘিরে এ দিন জামা মসজিদে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। গোটা অঞ্চল ছিল লোকে লোকারণ্য। বিকেলে প্রতিবাদ সভা হওয়ার কথা জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। যন্তরমন্তরে লাগাতার প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে।
প্রতিদিনের মতো এ দিনও প্রতিবাদীদের আটকাতে সকাল থেকে দিল্লির মেট্রো স্টেশনগুলি বন্ধ করতে থাকে পুলিশ। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭টি স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতি ঘণ্টায় বন্ধ স্টেশনের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দিল্লির বহু জায়গায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা।
শুধু রাজধানী নয়, এ দিনও প্রতিবাদ বিক্ষোভ লাগাতার চলছে কলকাতায়। পর পর মিছিলের পর এ দিন সাংবাদিক বৈঠক করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে তাঁর দাবি, দেশ জুড়ে এই চরম বিক্ষোভের মধ্যে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ফিরিয়ে নিক মোদী-শাহ। নইলে উত্তেজনা কমবে না। পাশাপাশি বিক্ষোভকারীদের কাছে শান্তিপূর্ণ ভাবে প্রতিবাদ দেখানোর আর্জি জানান তিনি। অন্য দিকে বামপন্থী সংগঠনগুলি এ দিনও দেশ জুড়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি জারি রেখেছে। এ দিন নতুন করে সংঘর্ষের খবর এসেছে উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদ, কানপুর ও হাপুর থেকে।
বৃহস্পতিবার মেঙ্গালুরুতে পুলিশ যে ভাবে গুলি চালিয়েছে এ দিনও তা নিয়েও বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন প্রতিবাদীরা। পাশাপাশি উঠে আসছে লখনউয়ের ঘটনা। সেখানে অবশ্য প্রতিবাদীরাও বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের গাড়ি এবং সরকারি সম্পত্তিতে আগুন লাগিয়ে দেন। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় এক প্রতিবাদীর। শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ প্রতিবাদীদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সরকারি ক্ষতিপূরণ করার কথা বলেছেন।
যদিও বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, এ সমস্ত হুঁশিয়ারিকে তাঁরা আদৌ গুরুত্ব দিতে নারাজ। সরকার আইন ফেরত না নেওয়া পর্যন্ত লড়াই চলতে থাকবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই লড়াইয়ে বিরোধীপক্ষ ক্রমশ একত্রিত হচ্ছে। সংসদে যে সব দল আইনের পক্ষে রায় দিয়েছিল, তারাও এখন প্রতিবাদীদের পক্ষে ঘুরতে শুরু করেছে।
এসজি/জিএইচ (এনডিটিভি, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার পত্রিকা)