নির্বাচনের পথেই এগোচ্ছে সরকার?
২০ জুন ২০১৮বুধবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘অক্টোবরে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হবে৷ নির্বাচনকালীন সরকারের আকার ছোট হবে৷ তবে বিষয়টি পুরোপুরি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক৷ সে নির্বাচনে অনেক দলই অংশ নেবে৷ বিএনপি না এলেও সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ বিএনপি জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে যে কেন সংশয় প্রকাশ করছে, তা আমার বোধগম্য নয়৷ কারণ, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোতে তো বিএনপি অংশ নিচ্ছে৷ কুমিল্লায় জিতেছে, খুলনায় অংশ নিয়েছে, গাজীপুরে অংশ নিচ্ছে৷ বরিশাল এবং রাজশাহীতেও অংশ নিবে৷ সেখানে তাদের প্রার্থী আছে৷ এই সমস্ত নির্বাচনে যদি তারা অংশ নিতে পারে, তবে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে কোথায় তাদের ভয়, সে বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়৷''
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘স্থানীয় নির্বাচনে সরকারের প্রভাব থাকলেও থাকতে পারে, তবে জাতীয় নির্বাচনে তো সরকারের কোনো প্রভাবই থাকবে না৷ তারপরেও নির্বাচনে অংশ নিতে তাদের কেন সংশয়, সেটা তাদেরকেই জিজ্ঞাসা করুন৷ আর আন্দোলন করে কোনো কিছু করার শক্তি-সামর্থ্য বিএনপির নেই৷''
বিএনপি'র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশরারফ হোসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কথার জবাবে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের দাবি হলো নির্বাচনকালীন একটি নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার৷ এখন আমরা দেখি তারা কী করে৷ আমাদের আরো দাবি হলো: সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্বাচন, নির্বাচনের সময় সেনা মোতায়েন৷ এগুলো সব মিলিয়ে নির্বাচন করতে হবে৷ সে (ওবায়দুল কাদের) হয়তো এককভাবে একটা কথা বলেছে৷ আমরা দেখি বাস্তবে কী হয়৷ যখন গঠন হবে, তখন আমরা দেখবো৷ আর ছোট-বড় কোনো কথা নয়, কথা হলো নির্বাচরকালীন সরকার নিরপেক্ষ হতে হবে৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন৷ এর মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন হয় না৷ আর জাতীয় সংসদ নির্বাচন সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচন, সরকার পরিবর্তনের জন্য নির্বাচন৷ তাই দুই নির্বাচন কোনোভাবেই একই মানদণ্ডে বিচার করা যায় না৷ তাই জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোনো রাজনৈতিক দলের অধীনে হলে এটা প্রভাবমুক্ত হবে না৷ নিরপেক্ষ হবে না৷ সুষ্ঠু হবে না৷ এটা ২০১৪ সালে শেখ হাসিনা সরকার সারা বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছে৷ আমাদের নতুন করে বলতে হবে না৷''
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসে৷ ওই নির্বাচন বিএনপি-জামায়াত জোট বর্জন করে৷ তাদের দাবি ছিল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন৷ আর ওই নির্বাচন হয় দলীয় সরকারের অধীনে৷ এর আগে আদালতের রায়ের ভিত্তিতে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়৷
বর্তমন আওয়ামী লীগ সকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০১৯ সালের জানুযারি মাসে৷ আর মেয়াদের মধ্যেই সরকার নির্বাচন দিতে চায়৷ তাই নির্বাচন হওয়ার কথা চলতি বছরের ডিসেম্বরে৷
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নির্বাচনকালীন সরকারের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের অবস্থান আগের মতোই (২০১৪ সাল) আছে৷ এটার এক্তিয়ার পুরোপুরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর৷ এখানে যদি দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হয়, সেটা প্রধানমন্ত্রীই সিদ্ধান্ত নেবেন৷''
তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হবে৷ আকার ছোট হবে৷ সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীই সিদ্ধান্ত নেবেন৷ এবং তিনিই নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন৷''
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আরো বলেন, ‘‘বিএনপি যা-ই দাবি করুক না কেন, সরকার সংবিধানের বাইরে একচুলও হাঁটবে না৷''