পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন
৭ মে ২০১৮তবে হাইকোর্ট অবশেষে জানিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ব্যাপারে আর হস্তক্ষেপ করবে না৷ একথা স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার তীব্র সমালোচনাও করেছে কলকাতা হাইকোর্ট৷ প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে কমিশন জানিয়েছিল, রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট হবে তিন দফায়, ১, ৩ এবং ৫ মে৷ আপত্তি তুলে আদালতে যায় বিরোধীরা৷ তারা বলেছিল, ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ভারতে ছুটির দিন এবং নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য সময় পাওয়া যাচ্ছে অত্যন্ত কম৷ এরপর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন জেলায় বিরোধী প্রার্থীদের ওপর ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের আক্রমণ এবং একের পর এক রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে শুরু করে৷ বিরোধীরা নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তার অভাবের অভিযোগ তুলে ফের আদালতে যায়৷ কলকাতা হাইকোর্ট পুরনো বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে কমিশনকে নতুন দিন ঘোষণার আদেশ দেয়৷ এরপর বিস্ময়করভাবে তিনদিনের নির্বাচনকে শুধু ১৪ মে, অর্থাৎ মাত্র একদিনে অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেয় নির্বাচন কমিশন৷ স্বভাবতই এক দিনে গোটা রাজ্যে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত নিরাপত্তা পরিকাঠামো আদৌ রয়েছে কিনা, সে নিয়ে ফের প্রশ্ন তোলে বিরোধীরা এবং আবারও আদালতের হস্তক্ষেপ চায়৷
কিন্তু ১৪ মে নির্বাচন করার বিজ্ঞপ্তি ফের বাতিল করার যে দাবি তুলেছিল বিরোধীরা, তা শেষ পর্যন্ত খারিজ করে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট এবং জানায়, পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে আর কোনও হস্তক্ষেপ করবে না আদালত৷ এ দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের এবং তাদেরকেই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে৷
বলা বাহুল্য যে, নির্বাচনের কমিশনের আচরণে বিরোধীরা এখনও সন্তুষ্ট, বা আশ্বস্ত নয়৷ কারণ, নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়ে কমিশন এখনও কিছু বলছে না৷এর আগে মনোয়ন জমা দেয়ার সময়েও ব্যাপক বাধার মুখে পড়ে বিরোধীরা৷ এক পর্যায়ে ই-মেল মারফত মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার সুযোগ চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল সিপিএম৷
সব মিলিয়ে কমিশনের দুর্বল আচরণের জন্য বিরোধীরা রাজ্য সরকারকেই দূষছে৷ সিপিআইএম নেতা, প্রাক্তন সাংসদ সুজন চক্রবর্তী যেমন ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘নির্বাচনের নামে কার্যত প্রহসন হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে৷ কারণ, কমিশন রাজ্য সরকারের হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলাচ্ছে৷ প্রথমে সরকার চাইলো তিন দফায় নির্বাচন, কমিশন সায় দিলো৷ তারপর সরকার এখন চাইছে একদিনে নির্বাচন, কমিশন তাতেও রাজি৷’’ তবে এতে বিস্মিত নন সুজন চক্রবর্তী৷ কারণ, তাঁদের পর্যবেক্ষণ, কেবল রাজ্য নির্বাচন কমিশন নয়, রাজ্য মানবাধিকার কমিশন, রাজ্য মহিলা কমিশনের মতো সবক'টি স্বাধীন, স্বনিয়ন্ত্রিত সংস্থাকেই নিজের আয়ত্বে আনতে এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই তৎপর৷ এবং নির্বাচন নিয়েও সরকারের যথেচ্ছাচার চলে৷ এর আগে যে কারণে নির্বাচন করানোর দাবিতে খোদ রাজ্য নির্বাচন কমিশনকেই আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়েছিল৷ আর এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩৩ শতাংশ আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেছে শাসকদল, যা অভূতপূর্ব! কটাক্ষ সুজন চক্রবর্তীর৷
কিন্তু এবার আদালত হাত গুটিয়ে নেওয়ার পর বিরোধীরা কী করবেন? ডয়চে ভেলের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে কার্যত হতাশ শোনালো পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যকে৷ তিনি বললেন, ‘‘এরপর সমমনস্ক বিরোধীদের একজোট হয়ে লড়তে হবে, এছাড়া আর কিছু করার নেই৷’’ এবং নিরাপত্তার প্রশ্নে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সব নিরাপত্তাই শাসকদলের জন্য, বিরোধীরা কোনও নিরাপত্তা যে পাবে না, তা এখন থেকেই স্পষ্ট৷’’
এই পরিস্থিতিতে ১৪ মে'র নির্বাচন যথেষ্ট উত্তেজনাপ্রবণ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা, যদি না প্রশাসন রাশ টেনে রাখতে পারে৷