‘পার্সেন্টেজের’ প্রস্তাব, দুর্নীতি ঠেকাবে কে?
৬ জুন ২০২০এই অভিযোগ আইজিপিকে জানানোর পর ছয় দিনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি৷ এ নিয়ে পুলিশ বিভাগেও আলোচনা চলছে৷
পুলিশ কমিশনার ৩০ মে আইজিপিকে পাঠানো চিঠিতে বলেছেন, ‘‘ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (লজিস্টিকস) ইমাম হোসেন একজন দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা৷ ডিএমপির বিভিন্ন কেনাকাটায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে৷ তদুপরি তিনি ডিএমপির কেনাকাটায় স্বয়ং পুলিশ কমিশনারের নিকট পার্সেন্টেজ গ্রহণের প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন৷ ফলে ওই কর্মকর্তাকে ডিএমপিতে কর্মরত রাখা সমীচিন নয় মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে৷''
তিনি চিঠিতে যুগ্ম কমিশনার ইমাম হোসেনকে ডিএমপি থেকে বদলি এবং তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করেন৷
এ নিয়ে পুলিশ কমিশনারের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ আর অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা ইমাম হোসেনও মন্তব্য করতে অপরাগতা প্রকাশ করেন৷ তবে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা জানান, ‘‘প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেরই নানা রকম অ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ ইস্যুজ থাকে৷ এসকল ইস্যুজ যথাযথ অ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ এবং প্রফেশনাল ওয়েতেই অ্যাড্রেস করা হয়ে থাকে৷ যে বিষয়টি উঠে এসেছে এটিও একটি অ্যাডমিনিষ্ট্রেটিভ ইস্যু৷ এবং এখনো কোনো করেসপন্ডেন্স পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে এসে পৌঁছায়নি৷ পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে এ বিষয়টি পৌঁছানোর পরে এবং রিসিভ হওয়ার পরে অবশ্যই যথাযথ গুরুত্বের সাথে এবং যথা নিয়মে এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে৷’’
সিদ্ধান্ত এখন আইজিপির হাতে
এই বিষয় নিয়ে এখন পুলিশে তোলপাড় চলছে৷ আলোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে৷ তবে ইমাম হোসেনের বিরুদ্ধে এখনও কোনো ব্যবস্থা দৃশ্যমান হয়নি৷ তিনি ডিএমপিতেই কর্মরত আছেন৷ ব্যবস্থা নেয়া হলে তার প্রক্রিয়া কী হতে পারে এমন প্রশ্নে পুলিশের সাবেক আইজি মো. নূরুল হুদা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘যেহেতু উচ্চ পর্যায়ে দুর্নীতির অভিযোগ তাই এখন আইজিপি মহোদয় সদর দপ্তরের সিকিউরিটি সেল দিয়ে তদন্ত করাতে পারেন৷ তদন্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া যায়৷ এটাই ভালো৷ ডিএমপিও এর তদন্ত করতে পারত, তবে উচ্চ পর্যায়ের ঘটনা হওয়ায় তা বিব্রতকর হতে পারত৷ তদন্তকারীরা ঠিকমত কাজ নাও করতে পারতেন৷ আর যদি তাকে সাময়িক প্রত্যাহার করতে হয় তাহলে তাও আইজিপিকে করতে হবে৷ এই ক্ষমতা পুলিশ কমিশনারের হাতে নাই৷ আইজিপি মন্ত্রণালয়ের মতমত নিয়ে তাকে অ্যাকটিভ ডিউটি থেকে প্রত্যাহার করতে পারেন৷’’
পুলিশে দুর্নীতি কত গভীরে?
নূরুল হুদা জানান, ‘‘এই ঘটনা থেকে বোঝা যায় যে পুলিশের সব পর্যায়েই দুর্নীতি আছে৷ পুলিশের উচ্চ পর্যায়ে এই দুর্নীতির অভিযোগ বলে দেয় অবক্ষয় অনেক গভীরে চলে এসেছে৷ তিনি হয়তো চিন্তাও করতে পারেন না যে আর কেউ থাকতে পারেন যিনি দুর্নীতি করতে পারেন না৷ সবাইকে তার মত ভাবেন৷ তাই যুগ্ম কমিশনার হয়ে কমিশনারকে পার্সেন্টেজ-এর প্রস্তাব দেয়ার মত দু:সাহস দেখাতে পেরেছেন৷’’
তিনি জানান, ‘‘পুলিশের যাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয় তাদের ৯০ ভাগই হলেন ইন্সপেক্টর বা নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা৷ এই ব্যবস্থা পুলিশ সদর দপ্তর নেয়৷ কিন্তু যারা প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যবস্থা নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ সেগুলো তেমন প্রকাশ হয় না৷’’
আর টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘নিম্ন পর্যায়ে দুর্নীতি বিকশিত হয় তখনই যখন উচ্চ পর্যায়ে তার সুরক্ষা দেয়া হয়৷ যখন উচ্চ পর্যায়ে অংশীদারিত্ব থাকে৷ পুলিশে তার ব্যতিক্রম নয়৷ এখানে সব পর্যায়ে দুর্নীতি আছে৷ আমাদের খানা জরিপে বার বার বাংলাদেশে দুর্নীতিতে শীর্ষ স্থান দখল করেছে পুলিশ৷ আর এর কোনো পরিবর্তনও হচ্ছে না৷’’
তার মতে, ‘‘পুলিশের সবাই যে দুর্নীতিবাজ তা নয়৷ পুলিশেও সৎ এবং দুর্নীতিমুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন৷ কিন্তু তারা কোনঠাসা হয়ে আছেন৷ তারা কাজের পরিবেশ পাচ্ছেন না৷ তারা তাদের সততার জন্য পুরস্কৃত না হয়ে তিরস্কৃত হন৷ উল্টো যারা অসৎ, দুর্নীতিবাজ, ক্ষমতার অপব্যহার করেন তাদের অনেক সময় সুরক্ষা দেয়া হয়৷’’
টিআবির প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘‘এই ঘটনাটা আলোচিত হচ্ছে এই কারণে যে পুলিশের ভিতরে এক কর্মকর্তা আরেক কর্মকর্তাকে ঘুস অফার করেছেন আর তা গ্রহণ করা হয় না এটা একটা বিরল ঘটনা৷’’ পুলিশের কোনো পর্যায়েই আর দুর্নীতি বাকি নেই বলে মনে করেন তিনি৷
দুর্নীতির শাস্তি বদলি?
যুগ্ম কমিশনার ইমাম হোসেনের বিরুদ্ধে পুলিশ কমিশার মোহা. শফিকুল ইসলাম কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বা তদন্তের আয়োজন করেননি৷ শুধু বদলির অনুরোধ জানিয়েছেন৷ ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘কমিশনার সাহেবকে তার অধস্তন কর্মকর্তা ঘুস অফার করেছেন৷ তিনি তা গ্রহণ না করে আইজিপি মহোদয়কে জানিয়েছেন এটা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য৷ কিন্তু শুধু বদলির সুপারিশ কতটা যৌক্তিক তা ভাবা দরকার৷ তিনি তাকে রাখতে চান না এটা ঠিক আছে৷ কিন্তু তার দুর্নীতির তদন্ত হতে হবে৷ শাস্তি হতে হবে৷’’
নূরুল হুদা বলেন, ‘‘পুলিশে আইন আছে যেকোনো পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেয়া যায়৷ চাকরি থেকে বের করে দেয়া যায়৷ আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করা দরকার৷’’