মনমোহন সিং-এর জাপান সফর
২৮ মে ২০১৩টোকিও-নতুন দিল্লি সম্পর্কের মেরুদণ্ড রাজনীতি, অর্থনীতি ও এনার্জি নিরাপত্তা৷ দু’দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মধ্যে একটা সামঞ্জস্য এনে ব্যাপক অর্থনৈতিক সহযোগিতা বা পার্টনারশিপের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো, যা হবে এশিয়ার স্থায়ী স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের অঙ্গ৷ চলতি সফরে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং সেই বার্তাই দেবেন জাপানি নেতৃত্বকে৷
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ কর্মসূচির শীর্ষে আছে পশ্চিম ভারতের নির্ধারিত পণ্য চলাচলকারী করিডর এবং দিল্লি-মুম্বই শিল্প করিডর৷ নিরাপত্তা ক্ষেত্রে বিশেষ করে সমুদ্রপথে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ভারত-জাপান বিশেষ সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নেবে৷ দু’দেশের নৌবাহিনীর মধ্যে যৌথ মহড়া তার অন্যতম৷ কথা হবে জাপানে তৈরি জলে-স্থলে চলার উপযোগী বিমান বেচাকেনার বিষয়ে৷ জাপান মোট ১৫টি এই ধরনের উভচর বিমান বিক্রি করতে আগ্রহী ভারতকে৷ আগে জাপান শুধু প্রযুক্তি ও যন্ত্রাংশ বিক্রি করে এসেছে৷
বিশ্লেষকদের মতে, ভারত-জাপান প্রকৃত স্ট্র্যাটিজিক পার্টনারশিপ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের অনুঘটক হতে পারে৷ ভারতের সঙ্গে টোকিও-র বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতা এবং সামরিক পার্টনারশিপে চীনের পররাষ্ট্র নীতির কাছে ভারতকে থাকতে হবে না নতজানু হয়ে৷ জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ভারত-বন্ধু৷ আশা করা যায়, বেসামরিক পরমাণু সহযোগিতার রাজনৈতিক অন্তরায় দূর করতে সক্ষম হবেন তিনি৷ চীনকে সামনে রেখে এতদিন ভারতও জাপানের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছিল ধীর গতিতে৷
হালের লাদাখ সীমান্তে চীনেরবিতর্কিত অনুপ্রবেশের ঘটনার পর ভারত আর সময় নষ্ট করতে চাইছে না৷ বিকল্প সমর্থন জোগাড় করতে নেমে পড়েছে জোরেসোরে৷ জাপানও তার চীন নীতির কিছু নেতিবাচক দিক নিয়ে বিব্রত৷ জাপানি ভূখণ্ডের ওপর চীনের দাবি এবং সেই দাবি পূরণে সামরিক শক্তি প্রদর্শন৷ এর অভিঘাতে দিল্লি-টোকিও আরও কাছে আসতে চায় ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষায়৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এশিয়ার ওপর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে ভারত বা জাপানকে সমকক্ষ মনে করে না চীন৷ চীনা প্রবাদ, একই জঙ্গলে দুই সিংহ থাকতে পারে না৷ জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভারত ও জাপানের স্থায়ী সদস্যপদে তাই চীনের আপত্তি৷
জাপানের পর প্রধানমন্ত্রী যাবেন থাইল্যান্ডে৷ আশিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দেশের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য৷ ভারতের সঙ্গে প্রাচীন সাংস্কৃতিক এ ধর্মীয় বন্ধনে আবদ্ধ৷ সমুদ্রবর্তী দেশ হিসেবে ভারত ও থাইল্যান্ডের সমুদ্রপথ নিরাপত্তার স্বার্থ অভিন্ন৷ দু’দেশের মধ্যে আছে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা৷ সেই সহযোগিতাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবার বিষয়ে থাই নেতৃত্বের সঙ্গে মত বিনিময় হবে ড. মনমোহন সিং-এর৷