গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক
২১ মে ২০১৩রবিবার এবং সোমবার চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কোচিয়াং-এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর দু'বার বৈঠক হয়৷ প্রথমবার বেসরকারিভাবে এবং সোমবার প্রতিনিধিস্তরে৷ প্রত্যাশা অনুযায়ী দিল্লি প্রথমে গত ১৫ই এপ্রিল লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘনের ঘটনার দিকে চীনা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে এর স্থায়ী মীমাংসার প্রশ্ন উত্থাপন করলে সেই ধরাবাঁধা গতে বলা হয় যে, সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে চলতি ‘মেকানিজম'-কে উন্নত করা হবে৷ দু'দেশের প্রতিনিধিস্তরে আলোচনা চলবে, যেটা বলে আসা হচ্ছে ১৯৯৩ সাল থেকে৷ ১৫ দফা বৈঠক হবার পরও এবারেও সেই একই কথা৷
মনে করা হয়েছিল এবারে হয়ত সীমান্ত জট কাটাতে একটা সুনির্দিষ্ট সূত্র উঠে আসবে৷ ইতিবাচক পদক্ষেপের কথা বলা হবে চীনা নেতৃত্বের দিক থেকে৷ তা হয়নি৷ তাই বিরোধেয় ইস্যু একইভাবে ঝুলে রইলো অনির্দিষ্টকালের জন্য৷ একটাই সদর্থক ইঙ্গিত, বিতর্কিত সীমান্তের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া অবধি উভয় দেশ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করবে না ভবিষ্যতে৷
দ্বিতীয় কণ্টকিত ইস্যু চীনের দিকে ব্রম্মপুত্র নদের ওপর চীনের চার-পাঁচটি বাধ নির্মাণ৷ প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং এ বিষয়ে ভারতের উদ্বেগের কথা জানালে চীনের তরফে আশ্বাস দেয়া হয় যে, এতে ভারতের উদ্বিগ্ন হবার কারণ নেই, যেহেতু চীন ব্রম্মপুত্রের জল ধরে রাখছে না, বহমান রাখছে৷ কাজেই ভাটির দিকে আসামের মতো ভারতের রাজ্যগুলিতে কৃষির জলের অবাব হবে না৷ ভারতকে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্যউপাত্ত আগেই দেয়া হয়েছে ভবিষ্যতে জলপ্রবাহ সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য দেয়া হবে৷ বলা বাহল্য, এই নিয়ে আলোচনা চলবে৷ অর্থাৎ, বস্তুতপক্ষে এই ইস্যুতেও কোনো বাস্তব অগ্রগতি হয়নি৷
চীনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক ঘাটতি এবং ভারতীয় পণ্যের জন্য চীনের বাজার আরো বেশি খুলে দেবার দাবি উঠলে, চীনের তরফে কোনো উচ্চবাচ্য করা হয়নি৷ উল্টে ভারতের কাছ থেকে অবকাঠামো ক্ষেত্রে চীনের আরো বেশি অংশগ্রহণের প্রস্তাব দেয়া হয়৷ যেমন কৌশলগত অর্থনৈতিক সংলাপের অধীনে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, চীন ও অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সঙ্গে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সংযোগ বাড়ানোর অবকাঠামো গড়ে তোলা৷ তাই সরকারি ভাষায় এই বৈঠককে ফলপ্রসূ আখ্যা দেয়া হলেও বিশ্লষকদের মতে শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়া আসল যোগফল ‘শুন্য'৷
চীনের প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের বিরুদ্ধে ভারতের তিব্বতি যুব ও ছাত্র সংগঠনগুলি দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ বিক্ষোভ দেখায় তিব্বত ইস্যু নিয়ে৷ দিল্লির চীনা দূতাবাসের সামনে, লি কোচিয়াং যে হোটেলে উঠেছেন তার সামনে, প্রধানমন্ত্রীর ড. সিং-এর বাসভবনের সামনে এবং অন্যত্র৷ তিব্বতি ছাত্রদের হাতের ব্যানারে লেখা ‘চীন তিব্বত ছাড়ো' অথবা ‘১১৭ জন তিব্বতির আত্মদহনের জন্য দায়ী লি কোচিয়াং'৷ স্লোগান ওঠে তিব্বতিদের একাদশ ধর্মগুরু পাঞ্চেন লামাকে মুক্তি দাও ইত্যাদি ইস্য নিয়েও৷
বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ দিল্লির প্রায় অর্ধেক এলাকায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়৷ বিশেষ বিশেষ জায়গায় যানবাহন চলাচলে কড়াকড়ি করে৷ এছাড়া, কয়েকটি মেট্রো স্টেশন দুপুর পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়৷ আটক করা হয় কয়েকজন তিব্বতি যুবককে৷