শুভ নববর্ষ
১৪ এপ্রিল ২০১৪বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের – ‘‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর!/তোরা সব জয়ধ্বনি কর!/ঐ নূতনের কেতন ওড়ে কাল-বোশেখীর ঝড়/তোরা সব জয়ধ্বনি কর...৷ – এই দৃপ্তকণ্ঠ উচ্চারণের মধ্য দিয়েই সোমবার বাংলা ১৪২১ সালের প্রথম দিবসের সূচনা করেছে বাঙালিরা৷ একই সঙ্গে বিশ্বকবির – ‘‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো'' গেয়ে তাঁরা স্বাগত জানিয়েছে নতুন বছরকে৷ রমনা বটমূলে নতুন বছরের সূর্য উঁকি দিতেই সমবেত কণ্ঠে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়েছে বাঙালি৷ পুরনো বছরের জরা, দুঃখ, পাপ, তাপকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে শপথ নিয়েছে তারা৷
মঙ্গল শোভাযাত্রার ‘‘জাগ্রত করো উদ্যত করো নির্ভয় করো হে'' – এই বাণী সব প্রাণের ভয় দূর করে বাঙালির চিত্তকে যেন করেছে ভয়শূণ্য৷ এ উত্সবে মিলেছে সব প্রাণ, সব ধর্ম, সব বর্ণ৷ তাই এবারের শোভাযাত্রায় স্থান পেয়েছে হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের দুঃসময়ের কাণ্ডারির প্রতীক হিসেবে ‘গাজী ও বাঘ'; সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে লক্ষ্মী পেঁচা, শিশু হরিণ, মা ও শিশু, হাঁস এবং মাছের ঝাঁক; লোক ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে বিড়ালের মুখে চিংড়ি, শখের হাঁড়িসহ মোট ১৩টি বড় ভাস্কর্য৷ এছাড়াও ময়ূর, বাঘের দুইটি বড় মুখোশ, ১০টা ছোট পাখি, প্রায় এক হাজার কাগজে কাটা ছোট মুখোশ, ১০০টি বড় মুখোশ ৷
বৈশাখ উদযাপন পরিষদের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন বলেন, ‘‘মঙ্গল শোভাযাত্রার ২৬ বছরে পদার্পণ ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে এবারের আয়োজন অন্যবারের চেয়ে দ্বিগুণ৷''
কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বাংলা নববর্ষ বাঙালির সার্বজনীন উত্সব৷ এই উত্সবে এক হয়ে যান সবাই৷ ধর্ম, বর্ণ বা গোত্রের কোনো ভেদাভেদ থাকে না৷ বাঙালির আবহমান সংস্কৃতি আর ঐতিহ্য মিশে আসে এই বাংলা বর্ষবরণের সঙ্গে৷ এই উত্সব বাঙালিকে তার আত্ম পরিচয়ের সন্ধান দেয়৷ আর এ কারণেই এই বাংলা বর্ষবরণ উত্সব সবাইকে এক করে৷ এক জায়গায় নিয়ে আসে৷ শক্তি যোগায়৷'' তিনি বলেন, এই উত্সবের রঙ পবিত্র৷ এই উত্সব বাঙালিকে পরিশুদ্ধ করে৷ করে জরামুক্ত৷ এছাড়া বাংলা নববর্ষ অশুভকে বিদায় দিয়ে শুভ এবং কল্যাণের দিকে আহ্বান জানায়৷''
এদিকে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাঁর বিশেষ বাণীতে বলেছেন, ‘‘অতীতের সব গ্লানি ও বিভেদ ভুলে বাংলা নববর্ষ জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে আমাদের ঐক্য আরও সুদৃঢ় করবে এবং বয়ে আনবে অফুরন্ত আনন্দের বার্তা৷'' তিনি বলেন, বাঙালির জীবনে বাংলা নববর্ষের আবেদন চিরন্তন ও সার্বজনীন৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেছেন, ‘‘নববর্ষ সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা ও দেশবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার শক্তি যোগাবে৷'' তিনি আশা করেন, ‘‘জরা ও গ্লানি মুছে দিয়ে বাঙালির জীবনে ১৪২১ সাল সুখ, সমৃদ্ধি ও অনাবিল আনন্দ বয়ে আনবে৷''
তিনি বলেন, ‘‘বাঙালির সার্বজনীন উত্সব – বাংলা নববর্ষ৷ আমরা নববর্ষকে আবাহন করি প্রাণের স্পন্দনে, গানে-কবিতায়, আবেগের উত্তাপে৷''