রাজউক ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে ‘মাস্তানি’র অভিযোগ
২৫ নভেম্বর ২০১৯আসকের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেছেন, ‘‘আমরা এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং-এর বিরুদ্ধে কথা বলি বলেই উদ্দেশ্যমূলকভাবে আসক অফিসে অভিযান চালানো হয়েছে৷’’
গত ১৪ নভেম্বর রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তারের নেতৃত্বে আসকের লালমাটিয়া অফিসে অভিযান চালায়৷ লালমাটিয়ার ওই পাঁচতলা ভবনটির দু'টি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে গত দুই বছর ধরে অফিস পরিচালনা করে আসছে আসক৷
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমারত নির্মাণ আইন ৩৫২-এর ৩(ক) ধারায় আসককে দুই লাখ টাকা জরিমানা এবং দুই মাসের মধ্যে অসিফ ছাড়ার নির্দেশ দেন৷
আসকের দাবি, ‘‘ওই আইন আসকের জন্য প্রযোজ্য নয়, কারণ, আসক কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়৷ এটি অলাভজনক, সেবামূলক একটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান৷ এটা জানানোর পরও ম্যাজিষ্ট্রেট তার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন৷ জরিমানা আদায় করে অফিস ছাড়ার মুচলেকা নেন৷ কিন্তু আদেশের কোনো কপি দেননি তখন৷’’
ওই অভিযান ও আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে এরই মধ্যে আসকের পক্ষে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়েছে৷ দু’-এক দিনের মধ্যে শুনানি হতে পারে৷ আসকের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রিটে আমরা প্রথমত, ভ্রাম্যমাণ আদালতের কয়েকটি ধারা বাতিল চেয়েছি৷ দ্বিতীয়ত, ওই দিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের আচরন ও আদেশের প্রতিকার চেয়েছি৷ এবং জরিমানার টাকা ফেরত ও অফিস যাতে থাকে সেই আবেদন করেছি৷’’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘ওইদিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসকের অফিসে গিয়ে মাস্তানি করেছেন৷ গুন্ডার মতো আচরণ করেছেন৷ আমাদের মনে হয়েছে উদ্দেশ্যমূলভাবে আসক অফিসে অভিযান চালানো হয়৷ আসককে সিঙ্গেল আউট করা হয়েছে৷ ওই এলাকায় আরো অনেক অফিস থাকলেও সেখানে অভিযান চালানো হয়নি৷ অভিযানের উদ্দেশ্যই ছিল আসক অফিসকে ওখান থেকে তুলে দেয়া৷ সে উদ্দেশ্য না থাকলে আসককে নোটিশ করা যেতো৷ কিন্তু তা না করে হঠাৎ গিয়েই ‘এই আপনাদের কী কী কাগজপত্র আছে দেখান’ বলে কোনো কথা না শুনেই জরিমানা করা হয়৷ দুই মাসের মধ্যে চলে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘আইনে কোথাও বলা নাই আবাসিক এলাকায় অফিস থাকতে পারবে না৷ বলা হয়েছে বাণিজ্যিক অফিস বা শিল্প কারখানা থাকতে পারবে না৷’’
এ প্রসঙ্গে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘‘ওইদিন প্রথমে আমাদের অফিসকে পুলিশ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়৷ কিন্তু ম্যাজিষ্ট্রেট চলে যান৷ আমাদের স্টাফদের তখন বের হতে দেয়া হয়নি৷ এরপর সন্ধ্যার পর আবার ম্যাজিস্ট্রেট এসে দুর্ব্যবহার করেন৷ আমাদের কোনো কথা না শুনেই দুই লাখ টাকা জরিমানা করে৷ আমরা কি টাকা নিয়ে বসে থাকি? আমাদের কোনো সময়ও দেয়া হয়নি৷ এর কারণ কী? নিশ্চয়ই এর উদ্দেশ্য আছে৷ আমরা এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং-এর বিরুদ্ধে কথা বলি, বিবৃতি দিই৷ সে কারণেই এই অভিযান৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘লালমাটয়ায় তো অনেক বাণিজ্যিক অফিস আছে৷ সেখানে কেন অভিযান হয় না? অথচ একটি মানবাধিকার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এই আচরন! আমাদের সাখে যে আচরণ করা হয়েছে তা কোনো আদালতের আচরণ নয়৷’’
রাজউকের অভিযান পরিচালনাকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেসমিন আক্তার আসকের অভিযোগ অস্বীকার করে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ওই দিনের অভিযান ছিল আমাদের নিয়মিত অভিযানের অংশ৷ ওইদিন আমরা লালমাটিয়া এলাকায় আরো কয়েকটি বাড়িতে অভিযান চালিয়েছি৷ জরিমানা করেছি৷ আসককে আলাদাভাবে বিবেচনা করা হয়নি৷ আর আসককে জরিমানা এবং ২ মাসের মধ্যে অফিস সরানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে আবাসিক ভবনের অনাবাসিক ব্যবহার না করার আইনে৷ আইনে আবাসিক ভবনের অনাবাসিক ব্যবহার করা যাবেনা বলা আছে৷’’
তিনি দাবি করেন, ‘‘আমরা কিছু কিছু বাড়ি বা এলাকায় অভিযান চালাই৷ সব এলাকায় নয়৷ কারণ, আমাদের উদ্দেশ্য হলো একটু একটু করে সবাইকে সচেতন করা৷ ভ্রাম্যমাণ আদালতের সব নিয়ম মেনেই অভিযান চালিয়েছি৷ আর আৎক্ষণিকভাবে আমরা আদেশের কপি না দেয়ার কারণ হলো, আমাদের অনেক লেখা বাকি থাকে৷ পরে তারা আবেদন করে কপি নিয়েছেন৷’’