বিজ্ঞান গবেষণায় ব্রেক্সিটের প্রভাব
১৭ আগস্ট ২০১৭ইংল্যান্ডের কভেন্ট্রি শহরের বাসিন্দারা ইউরোপের সঙ্গে না থাকার পক্ষে ভোট দিয়েছেন৷ তবে সেখানে থাকা দু'টি বিশ্ববিদ্যালয় ইউরোপপন্থি৷
বিশ্ববিদ্যালয় থাকায় শহরের সব জায়গায় শিক্ষার্থীদের দেখা যায়৷ শহরের বাসিন্দারা ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দেয়ায় তরুণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ৷ যেমন এক তরুণ বলছেন, ‘‘ভোটদাতাদের অধিকাংশই পুরনো প্রজন্মের হওয়ায় ব্যাপারটি হতাশাজনক৷ কারণ এর প্রভাব তো পড়বে তরুণদের ওপর৷'' আরেক তরুণ মনে করছেন, ‘‘গবেষণা, প্রযুক্তি – এ সবের জন্য ইউরোপের সঙ্গে থাকতে পারলে ভালো হতো৷''
বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর প্ল্যান্ট প্রোডাকশন'-এ কাজ করেন জুলিয়া রাইট৷ ইউরোপের অন্যতম সেরা এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান পরিবেশবান্ধব চাষাবাদ পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে৷ এই প্রতিষ্ঠানের বাজেটের এক-চতুর্থাংশ আসে ব্রাসেলস থেকে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫টি ইউরোপীয় দেশের সঙ্গে কাজ করেছি৷ এ বছর ইইউ থেকে প্রায় দেড় মিলিয়ন ইউরো অর্থ সহায়তা আসবে৷ প্রতিবছরই এর পরিমাণ বাড়ছে৷ আমরা যা করছি, তা ইউরোপের স্বার্থেই করছি৷ আমার মনে হয়, খাদ্য উৎপাদন ও চাষাবাদ খাতে একসঙ্গে কাজ করাটা জরুরি৷''
ইউরোপের মধ্যে চলাচলের স্বাধীনতা না থাকলে এই ধরণের গবেষণা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করেন কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ও ব্যবস্থাপকরা৷
উপ-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক রিচার্ড ড্যাশউড বলেন, ‘‘জ্বালানি, খাদ্য, পানি ও নিরাপত্তা খাতে আমরা এখন যে ধরণের চ্যালেঞ্জের মুখে আছি তা সবগুলোই বৈশ্বিক৷ একা সেসবের সমাধান করা সম্ভব নয়৷ আমাদের একটি বড় সম্প্রদায়ের হয়ে কাজ করতে হবে৷ ইউরোপই একমাত্র জায়গা যেখানে অনেক দেশ একসঙ্গে কাজ করতে পারে৷ এরকম সুযোগ বিশ্বের আর কোথাও নেই৷''
বিশ্ববিদ্যালয় দু'টি হয়ত ইউরোপপন্থি, কিন্তু কভেন্ট্রির বেশিরভাগ বাসিন্দা ব্রাসেলস থেকে যা পাচ্ছেন তাতে খুশি নন৷ এক বাসিন্দা বলছেন, ‘‘কভেন্ট্রির মানুষ চায় নিয়ন্ত্রণ তাদের কাছে থাকুক৷ তাদের মনে হচ্ছে, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গেছে, তারা চায় সরকার আবার সেটা ফিরে পাক, বিশেষ করে অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রে৷'' আরেক বাসিন্দা মনে করছেন, ‘‘অনেক শিক্ষার্থী আসার কারণে স্থানীয় অর্থনীতির ভালো হলেও এটাও সত্য যে, এখানে যারা চাকরি করছে তাদের অবস্থার উন্নতি হয়নি, উলটে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে৷''
বিশ্ববিদ্যালয়ের কারণে স্থানীয় গাড়ি শিল্পে নুতন গতির সঞ্চার হয়েছে৷
কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন জস্টিনস ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হচ্ছেন৷ এক্ষেত্রে চীনের দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি৷ তাঁর ধারণা, সে দেশে তাঁর হাইড্রোজেন চালিত বাহনের বাজার রয়েছে৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা চীনের বাজারের জন্য খুবই উপযোগী৷ বড় শহরে চলাচলের জন্য ছোট বাহন অনেকদিন ধরেই খোঁজা হচ্ছে৷ বিশেষ করে যেসব শহরে বায়ুদূষণ একটি সমস্যা৷''
যদিও তাঁরা ইইউর কাছ থেকে সম্প্রতি বড় অংকের একটি তহবিল পেয়েছেন, কিন্তু তবুও অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করাটা কঠিন হয়ে উঠছে৷ তবে চীনের সঙ্গে সহযোগিতাও সহজ নয়৷
তাই গবেষকরা আশা করছেন যে, ইউরোপের সঙ্গে প্রতীকী এবং বাস্তবেও যেন যোগাযোগ বহাল থাকে৷ ড: জুলিয়া রাইট বলেন, ‘‘আমরা সবাইকে জানাতে চাই যে, আমাদের প্রতিষ্ঠান ইউরোপপন্থি৷ আমাদের এখানে যাঁরা আসেন তাঁরা সেটা জানেন৷ আর যাঁরা কাজ করেন তাঁরাও এর সঙ্গে একমত, বলে মনে হয়৷''
ইউরোপের অন্য ক্যাম্পাসগুলোতে নিজেদের কয়েকজন গবেষককে পাঠানোর চিন্তা করছে কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়৷ অন্য ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও ভবিষ্যতে সেই পথ অনুসরণ করতে পারে৷
বির্গিট মাস/জেডএইচ