‘বিএসটিআই খাবারের মেয়াদ ঠিক করে আন্দাজে’
১৯ জুলাই ২০১৯দেশের নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এসব কথা বলছে আর তা একরকম মেনেও নিয়েছে বাংলাদেশে খাদ্যের মান নিয়ন্ত্রণের একমাত্র বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশনের(বিএসটিআই) আর খাদ্য গবেষণার একমাত্র সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ(বিসিএসআইআর) জানিয়েছে, তারা শুধু গবেষণা করে তবে সেক্ষেত্রেও তারা বিএসটিআই নির্ধারিত মানই অনুসরণ করে৷
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য( আইন) মাহবুব কবীর বলেন,‘‘আমাদের খাদ্যের এখন যে মান বিএসটিআই নির্ধারণ করে দিয়েছে তা আর চলে না৷ কিন্তু তারা সেটা নিয়ে বসে আছে৷ স্ট্যান্ডার্ড সেট করার তাদের নিজস্ব কোনো সক্ষমতাও নেই৷ তাদের কোনো গবেষণাও নেই৷ তারা যে সব খাদ্যের ব্যবহারের মেয়াদ বেধে দেয় তা করে আন্দাজে, কোনো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে করে না৷''
তিনি আরো বলেন,‘‘আসলে আমাদের আইনে সমস্যা আছে৷ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান৷ কোনো সমন্বয় নেই৷ আমরা চাইলেও নতুন মান আরোপ করতে পারি না৷ দুধে যে এন্টিবায়োটিক ও হেভি মেটাল পাওয়া যাচ্ছে এর দায়তো লাইভস্টকের৷ আমরা কি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছি?''
খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বাজারে ছাড়ার আগে বিএসটিআই এর অনুমোদন নেয়৷ আর সেই মান বজায় থাকে কিনা তা মনিটরিং করার দায়িত্বও তাদের৷ তবে বাংলাদেশে সব মিলিয়ে ১৮১টি পণ্যের বিএসটিআই এর অনুমোদন লাগে৷ এর মধ্যে কৃষি ও খাদ্যপণ্য ৭৬টি৷
বিএসটিআই এর পরিচালক (মান) সাজ্জাদুল বারী বলেন,‘‘আমরা পণ্যের মান ঠিক করি বিশেষজ্ঞ কমিটির মতামতের ভিত্তিতে৷ তারা বাইরের৷ মান ঠিক করতে আমাদের ছয়টি বিশেষজ্ঞ কমিটি এবং তাদের অধীনে ৭৩টি সাবকমিটি আছে৷ কমিটি যে মান নির্ধারণ করেন তা চূড়ান্ত অনুমোদন দেন বিএসটিআই-এর মহাপরিচালক৷''
এন্টিবায়োটিক প্রসঙ্গে জনাব বারী বলেন,‘‘এখন দুধে এন্টিবায়োটিক নিয়ে যে কথা হচ্ছে তা আমাদের মানের অন্তর্ভুক্ত নয়৷ আমরা নয়টি বিষয় দেখি৷ বিশ্বের অনেক দেশ আছে যারা ৫০ টি বিষয় দেখে৷ আবার ভারত দেখে ছয়টি৷ আমাদের বিশেষজ্ঞরা যদি আমাদের বলতেন আমরাও এন্টিবায়োটিক অন্তর্ভুক্ত করতে পারতাম৷ আমরা খাদ্য বা পণ্য নিয়ে গবেষণার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নই৷ তাই গবেষণা আমরা করি না৷''
বিসিএসআইআর খাদ্যের মান নিয়ে গবেষণা ছাড়াও নানা ধরনের নতুন খাদ্যপণ্য আবিষ্কারের কাজও করে৷ নির্ধারিত ফি দিয়ে এই প্রতিষ্ঠান থেকে যে কেউ তাদের উৎপাদিত খাদ্যপণ্যের মান যাচাই করিয়ে নিতে পারে৷ সাধারণভাবে মান যাচাইয়ের ক্ষেত্রে তারা বিএসটিআই এর স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে৷ তবে তার বাইরেও আর কোনো উপাদান আছে কিনা তারা তারা জানায়৷
বিসিএসআইআর-এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘আমরা মান নিয়ন্ত্রণ করি না৷ আমরা গবেষণা করি৷ তথ্য দেই৷ আমরা নিজেরাও বাজার থেকে পণ্য নিয়ে তার মান পরীক্ষা করে সরকারকে জানাই৷'
এখন প্রশ্ন হলো যারা ভোগ্যপণ্য উৎপাদন করেন তারা কিভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করেন? তাদের উৎপাদন কেন্দ্রে কী ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে৷
মিল্ক ভিটার উপ-মহাব্যবস্থাপক (মাননিয়ন্ত্রণ) রেহানা রহমান বলেন,‘‘দুধ এবং দুগ্ধজাত পণ্যের জন্য আমাদের নিজস্ব মান নিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরি আছে৷ আমরা বিএসটিআই এর নির্ধারিত মান অনুসরণ করে তা নিশ্চিত করি৷ আমরা আমাদের সমবায়ভুক্ত খামারি ছাড়া আর কারো কাছ থেকে দুধ কিনি না৷ খামারে গরুর খাদ্য, চিকিৎসা সবই মান অনুযায়ী করতে হয়৷''
তিনি আরো বলেন,‘‘আমাদের আলাদা গবেষণা সেলও আছে৷ সেখানে দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য নিয়ে গবেষণা হয়৷'‘
ব্র্যাকের ডেইরি এন্ড ফুড এন্টারপ্রাইজের ডাইরেক্টর মো. আনিসুর রহমান বলেন,‘‘আমরা মূলত নানা ধরনের দুধ এবং দুগ্ধজাত পন্য উৎপাদন করি এর মধ্যে পাস্তুরিত দুধ অন্যতম৷ আমাদের নিজস্ব ল্যাব ও মাননিয়নত্রণ ব্যবস্থা আছে৷ দুধ কেনার সময় আমরা একবার পরীক্ষা করে কিনি৷ ফ্রিজিং গাড়িতে করে ফ্যাক্টরিতে আনার পর আবার পরীক্ষা করি৷ এরপর বাজারজাত করার আগে শেষ পরীক্ষা করা হয়৷ আমরা দোকানদারকে দেওয়া পর্যন্ত মানের দায়িত্ব নেব ৷ কিন্তু এরপর না৷''
তিনি বলেন,‘‘আমরা বিএসটিআই-আর মান অনুসরণ করি৷ নিজস্ব ল্যাবরেটরি ছাড়াও বাইরের থেকে আমাদের পণ্যও মাঝে মধ্যে পরীক্ষা করাই৷ সিঙ্গাপুর থেকেও মান পরীক্ষা করাই আমরা৷''