জার্মানিতে ব্যাপক যৌন নিপীড়ন
৬ জানুয়ারি ২০১৬এমনটি এতদিন এশিয়া বা আফ্রিকার অনগ্রসর কিংবা উন্নয়নশীল দেশগুলোতেই শোনা যেত৷ ধর্ষণ, নিপীড়নের পর কোনো হিন্দু বা মুসলিম ধর্মগুরুকে সব কিছুর জন্য নারীদের ‘উত্তেজক' পোশাক কিংবা ‘অশালীন' চলাফেরাকে দায়ী করে বক্তব্য রাখতে দেখা গেছে৷ তেমন বক্তব্যের প্রতিবাদও হয়েছে৷ এবার ঠিক সেরকমই হচ্ছে জার্মানিতে৷
২০১৫ সালের শেষ রজনীতে সারা জার্মানি যখন নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর আনন্দে মাতোয়ারা, তখন অন্তত তিনটি শহরে ব্যাপক যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে৷ কোলন, হামবুর্গ আর স্টুটগার্ট – এই তিন শহরে যৌন লালসা মেটাতে নারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল একটি সংঘবদ্ধ চক্র৷ সবচেয়ে বড় চক্রটি সক্রিয় ছিল কোলনে৷ শহরের কেন্দ্রীয় রেল স্টেশনকে ঘিরে সেদিন হাজার খানেক লোক নারীদের রীতিমতো নাজেহাল করেছে৷ মৌখিক এবং শারীরিকভাবে তারা নারীদের এমন নিপীড়ন করেছে, জার্মানিতে যা এক কথায় অভূতপূর্ব৷
কোলনের মেয়র হেনরিয়েটে রেকার এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় আনার আশ্বাস দিলেও, এ মুহূর্তে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে তাঁর অন্য একটি বক্তব্য৷ যৌন নিপীড়ন থেকে বাঁচার জন্য নারীদের সব সময় খুব সতর্ক থাকতে বলেছেন তিনি৷ তাঁর পরামর্শ, নিজেকে নিরাপদ রাখতে পুরুষদের থেকে নারীদের অন্তত এক হাত দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে৷
হেনরিয়েটে রেকার নিজেও নারী৷ প্রথম নারী হিসেবে কোলনের মেয়র হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই এমন অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি তিনি৷ পরিস্থিতি সামাল দিতে যতটা বুদ্ধিমত্তা ও আন্তরিক প্রয়াস তাঁর কাছ থেকে আশা করা হয়েছিল, হেনরিয়েটা ততটা পারছেন বলে অনেকেরই মনে হচ্ছে না৷ নিজে নারী হয়েও কোলনের মেয়র নারীদেরই নিরাপদে থাকার উপায় বাৎলে দেয়ায় জনমনে ক্ষোভ এবং অসন্তোষই দানা বাঁধছে৷ নারী হয়ে এমন কথা হেনরিয়েটা রেকার কীভাবে বলতে পারলেন তা ভেবেই পাচ্ছেন না অনেকে৷
তবে মেয়রের এমন মন্তব্যের কারণে অবশ্য পুলিশি তদন্ত থেমে থাকছে না৷ বরং চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টোমাস ডেমেজিয়ের এবং জার্মান রাজনৈতিক অঙ্গনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বই ঘটনার তদন্ত দ্রুত শেষ করে, দোষীদের চিহ্নিত করে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর জোর দাবি জানিয়েছেন৷
যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন এমন নারীদের অনেকেই তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা পুলিশকে জানাচ্ছেন৷ কোলন পুলিশের কাছে এ পর্যন্ত সরাসরি অভিযোগ দায়ের করেছেন ৯০ জন৷ সংবাদমাধ্যমেও উঠে আসছে পৈশাচিক নিপীড়নের বর্ণনা৷ কেউ জানিয়েছেন, তাঁর নিতম্ব, স্তন হয়ে সমস্ত শরীরে কিছু বিকৃত মানসিকতার মানুষ কিভাবে অবিরাম হাত চালিয়েছে সেই কথা৷ কয়েকজন জানিয়েছেন, তাঁদের অন্তর্বাসও ছিড়ে ফেলা হয়েছে!
ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে সেদিন৷ কোলনে এ অভিযোগে মামলাও করেছেন এক নারী৷
কারা হঠাৎ এমন কাণ্ড ঘটালো? নিশ্চিত করে এখনো কিছু বলতে পারেনি পুলিশ৷ তবে প্রত্যক্ষদর্শী এবং আক্রান্ত নারীদের অনেকেই জানিয়েছেন, বর্বরের মতো নারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া মানুষগুলোর বেশিরভাগেরই চেহারা আরব এবং পূর্ব আফ্রিকা থেকে আগতদের মতো৷
এসিবি/ডিজি (এপি, এএফপি)
জার্মানিতে এমন ঘটনা আপনি বিশ্বাস করতে পারেন? জানান আপনার মতামত, নীচের ঘরে৷