সুন্দরবন নিয়ে প্রশ্ন করলেন অ্যাল গোর
২০ জানুয়ারি ২০১৭ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে সুন্দরবন নিয়ে প্রশ্ন করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং পরিবেশ আন্দোলনকর্মী অ্যাল গোর৷ বৈঠকে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা জানান যে, তাঁর সরকার ২০০০ সালে বড়পুকুরিয়ায় একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ শুরু করে৷ বলেন, ইতিমধ্যেই সেখানে দু'টি ‘সাব-ক্রিটিক্যাল' প্ল্যান্ট নির্মাণ করা হয়েছে এবং বর্তমানে তৃতীয় একটি কয়লাভিত্তিক বিদুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে৷ এরপরও ঘনবসতিপূর্ণ এই জেলায় পরিবেশের ওপর নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়েনি৷ তিনি বলেন, সেখানে ফসল হচ্ছে, প্রচুর গাছপালা রয়েছে, এমনকি আমের ফলনও খুব ভালো হচ্ছে৷ প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্ন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় নির্মিত এই কেন্দ্র নিয়ে কেউ কখনও কিছু বলেননি৷ কিন্তু এখন সুন্দরবন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে৷
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে অবশ্য একমত নন দিনাজপুরের ফুলবাড়িয়ার স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিক অমর চাঁদগুপ্ত অপু৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আশেপাশের ৫-৬টি গ্রাম দেবে গেছে৷ অনেক মানুষকে এলাকা ছাড়তে হয়েছে৷ এখন আবার নতুন করে আন্দোলন শুরু হচ্ছে৷ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাইয়ের কারণে আশেপাশের মাঠে সেভাবে কোনো আবাদ হচ্ছে না৷ এমনকি ঐ বিদ্যুৎকেন্দ্রের পানি যে নদীতে পড়ছে, সেখানে এখন কোনো মাছ পাওয়া যায় না৷ আশোপাশের এলাকায় গাছপালার চেহারা যেমন থাকার কথা তেমন নেই৷''
সরকারের পাওয়ার সেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বড়পুকুরিয়ায় পুরনো আমলের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়েছে৷ এতে করে যে ফল পাওয়া গেছে আমরা তাতে সন্তুষ্ট৷ তাছাড়া রামপালে ব্যবহার করা হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং এটা সুন্দরবন থেকে অনেক দূরে৷ ফলে রামপাল প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা নেই৷'' গ্রাম দেবে যাওয়া ও নদীতে মাছ না থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটা কোল্ড মাইনের কারণে হতে পারে৷ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে এটা হয়নি৷ অনেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কোল্ড মাইনকে একসঙ্গে গুলিয়ে ফেলছেন, ফলে বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে৷''
সুইজারল্যান্ডের ডাভোসের কংগ্রেস সেন্টারে গত বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘লিডিং দ্য ফাইট এগেইনস্ট ক্লাইমেট চেঞ্জ' (জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্ব প্রদান) শীর্ষক প্লেনারি সেশনে আলোচনার এক পর্যায়ে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রসঙ্গটি টানেন শেখ হাসিনার পাশে বসা অ্যাল গোর৷ অনুষ্ঠানে অ্যাল গোর বলেন, ‘‘গত বছর পর্যন্ত বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত সৌরশক্তির প্যানেল স্থাপনকারী দেশ ছিল৷ কিন্তু এখন সেই গতি ধীর হয়ে গেছে৷ এখন সেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সর্বশেষ আশ্রয়স্থল সুন্দরবনে পরিবেশ দূষণকারী একটি নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে৷ হাজার হাজার মানুষ এর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে৷
অ্যাল গোরের এই মন্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিশ্বের সব জায়গাতেই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে৷ আমরা এটা সুন্দরবন থেকে অনেক দূরে নির্মাণ করছি৷ শুধু তা-ই নয়, পরিবেশ যাতে আক্রান্ত না হয়, সে জন্য আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছি৷ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সুপার ক্রিটিক্যাল, খুবই আধুনিক৷ পরিবেশ রক্ষায় আমরা সব ধরনের উদ্যোগ নিয়েছি৷'' শেখ হাসিনা এরপর অ্যাল গোরকে বাংলাদেশ ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ‘‘আমি আপনাকে নিজে ঐ জায়গায় নিয়ে যাবো৷ আপনি নিজের চোখে সব দেখবেন এবং আমি বলছি, সেখানে আচ্ছাদিত (কাভার্ড) নৌ-যানে করে কয়লা বহন করা হবে, খোলা নৌ-যানে নয়৷''
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ডাভোসে প্রধানমন্ত্রী রামপাল নিয়ে যা বলেছেন, তাতে মনে হচ্ছে সরকার অস্বীকৃতির সংস্কৃতিতে ভুগছে, যা আত্মঘাতী৷ রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতির বাস্তবতাটি সবার কাছে পরিষ্কার৷ বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণিত৷ সরকারের উচিত ছিল সত্যকে স্বীকার করে এই প্রকল্প থেকে সরে আসা৷''
তাঁর কথায়, ‘‘বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যে তথ্য দিয়েছেন. তা সঠিক নয়৷ বারবার কেন ভুল তথ্য দেয়া হচ্ছে তা আসলে আমার বোধগম্য নয়৷ শুধু আমরাই এটা বলছি না৷ সব ইঞ্জিনিয়ার ও দেশের সাধারণ মানুষও একই কথা বলছেন৷ সবাই মিলে রামপালের এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলনও করছেন৷''
বন্ধু, রামপাল নিয়ে আপনার ভাবনা কী? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷