1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভারতে সাম্প্রদায়িকতা আছে, গণতন্ত্রও আছে

১২ মে ২০২০

করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মোদী সরকারের লেজে-গোবরে অবস্থা৷ সোমবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে তা আরো স্পষ্ট হলো৷

https://p.dw.com/p/3c5oN
২৬ ফেব্রুয়ারির এই ছবিতে মুসলমানদের দিল্লির একটি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা ত্যাগ করতে দেখা যাচ্ছে ছবি: Reuters/A. Abidi

তবে মোদীর বিরুদ্ধে বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদেরও সোচ্চার হতে দেখে বোঝা গেল ভারতে এখনো গণতন্ত্র জোরদার আছে৷

সাংবাদিক বলে যে কোনো খবরের তথ্য এবং বিশ্লেষণ আমাকে সমানভাবে টানে৷ বিশ্লেষণে তুলনামূলক বিশ্লেষণেরও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা রয়েছে৷ বাংলাদেশের নাগরিক বলে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, আফগানিস্তান, এমনকি মালদ্বীপের খবর নিয়ে ভাবতে বসলেও বাংলাদেশের সঙ্গে একটা তুলনা আপনাআপনি মাথায় চলে আসে৷

সোমবার লকডাউন নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে যে ভিডিও কনফারেন্স করলেন তার খুঁটিনাটি পড়তে গিয়েও আমার মাথায় কিছু তুলনামূলক আলোচনা শুরু হয়েছে৷ কিছু প্রশ্নও জেগেছে মনে৷ সবচেয়ে বড় প্রশ্নটা হলো, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের খুব বড় কোনো নেতাও কি এভাবে মুখ খুলতে পারবেন? মুখ খুললে ‘চাকরি’ থাকবে? বাংলাদেশে কবে সেই পরিস্থিতি ছিল?

আগের চারটির মতো সোমবারের ভিডিও বৈঠকেও মোদী যে তুমুল বিরোধিতার মুখে পড়বেন তা প্রত্যাশিতই ছিল৷ জার্মানির মতো দেশে, আঙ্গেলা ম্যার্কেলের মতো চ্যান্সেলরও তো লকডাউন প্রশ্নে ১৬ রাজ্যের চাপের কাছে ‘নতি স্বীকার’ করতে বাধ্য হয়েছেন, সেখানে ভারতের মতো দেশের মুখ্যমন্ত্রীরা গত দু মাসে ভাঙতে ভাঙতে প্রায় গুড়িয়ে যাওয়া অর্থনীতির প্রসঙ্গ তুলে বিরোধিতা করবেন না? কেন্দ্র থেকে বিজেপি সরকার যে কোনো সিদ্ধান্ত দিলে বিরোধীরা তা মেনে নেবে?

বিশেষ করে বিরোধী দল বা জোট শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা যে ‘জ্বী হুজুর, জ্বী হুজুর’ বলে মোদীর সব কথা মেনে নেবেন না তা বোঝা যাচ্ছিলো৷

মোটামুটি জানাই ছিল যে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের প্রাপ্য ৬১ হাজার কোটি টাকা এই সুযোগে চাইবেন৷ তবে মমতা চাইলেই যে মোদী তা সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেবেন না, তা-ও জানা ছিল৷ 

কারণ, এসব ক্ষেত্রে ভারতের রাজনীতি মোটাদাগে বাংলাদেশের মতোই৷ বাংলাদেশেও তো যুগ যুগ ধরে বিরোধী দলের সাংসদ বা মেয়রের প্রাপ্য অনুদান বা বরাদ্দ জোটে না, কিন্তু সরকারি দলের সাংসদ বা মেয়র অর্থস্রোতে ভাসতে ভাসতে উন্নয়নের পাশাপাশ দুর্নীতিও করতে পারেন৷ বৈষম্যটা দিন দিন শুধু বাড়ছে, এই যা!

মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে মোদীর বৈঠকে বিরোধী দল বা জোট শাসিত রাজ্যের দিক থেকে যে বিরোধিতা এসেছে, তা আমাকে খুব একটা নাড়া দেয়নি৷ বিরোধীরা তো বিরোধিতা করবেনই৷ বাংলাদেশের সংসদে যে সেই অর্থে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নেই, থাকলেও বিরোধিতা করে লাভ হতো কিনা সেটা অবশ্য অন্য প্রশ্ন৷

কথা হলো, বিরোধিতা যদি যৌক্তিক এবং প্রকৃত অর্থে কল্যাণকর হয়, তাহলে সবারই উচিত ‘যো হুকুম জাহাপনা’ না বলে ভিন্নমত স্পষ্ট ভাষায় জানানো৷

কেন্দ্রীয় সরকার যখন বলবে, যেভাবে বলবে, তখন সেভাবেই লকডাউন তোলা সম্ভব নয়, উচিতও নয়- এই বক্তব্যটা খুব যৌক্তিক এবং সংশ্লিষ্ট রাজ্যের নাগরিকদের জন্য দৃশ্যত কল্যাণকর ছিল৷ ভারতে গণতন্ত্র আছে বলে এই যৌক্তিক বক্তব্য

 সব মুখ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর দিকে সরাসরি তাকিয়েই তুলে ধরতে পেরেছেন৷ এবং কথাটা শুধু বিরোধী দলের নেতারাই বলেননি৷ হরিয়ানার বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীও সোজাসাপ্টা বলেছেন, কোন রাজ্যের কোথায় গ্রিন জোন, কোথায় রেড জোন হবে, তা রাজ্য ঠিক করবে, কেন্দ্র তা ঠিক করতে পারে না৷ 

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী, আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল আর বিজেপি শাসিত কর্ণাটক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এক সুরে বলেছেন, একটা জেলাকে পুরোপুরি লকডাউন না করে নির্দিষ্ট অংশকে করলে ভালো হয় কিনা, তা ভেবে দেখা দরকার৷

যৌক্তিক দাবি সরকারি দল এবং বিরোধীদলের তরফ থেকে উঠেছে বলেই নরেন্দ্র মোদী বাধ্য হয়ে লকডাউন প্রশ্নে কোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কী বক্তব্য, কী পরামর্শ তা আগামী ১৫ ই মে-র মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে বলেছেন৷

Ashish Chakraborty
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/T. Mehedi

এমনকি রোববার কেন্দ্র যে একতরফাভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, মাত্র একদিন পর সেই বিষয়েও সরাসরি আপত্তি জানানো হয়েছে৷ তেলেঙ্গানা ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘এখন তো নয়ই, এমনকি আগামী ৩১ মে পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন চালু করার কোনো দরকার নেই৷’’

গণতন্ত্রের সৌন্দর্য এখানেই৷

তাই বলে ভারতে কি আমরা খুব সুন্দর, একেবারে আদর্শ গণতন্ত্র দেখছি? মোটেই না৷ ভোটের গণতন্ত্রের অনেক দুর্বলতা ফুটে উঠছে সেখানেও৷

ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বারবার৷ এমন নয় যে, সাংবিধানিকভাবে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ বলে সে দেশে আগে সাম্প্রদায়িকতা ছিল না৷ সাম্প্রদায়িকতা অবশ্যই ছিল৷ তবে ধর্ম নিয়ে ‘প্রকাশ্যে কদর্য রাজনীতি’ একটা সময় পর্যন্ত দেখা যায়নি বললেই চলে৷ 

ভারতে সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়তো আরেকদিন করা যাবে৷ তবে একটা কথা আজ অবশ্যই বলে রাখা যায়৷ ‘অহিংস রাজনীতির জনক’ মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর দেশ ভারত এখন নরেন্দ্র মোদী আর বিজেপির দেশ৷ গান্ধী সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা রুখতে নোয়াখালী পর্যন্ত গিয়েছিলেন, মোদী দিল্লির দাঙ্গার সময়ও নীরব, নিষ্ক্রিয় থাকেন৷ সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সরব হয়ে প্রাণ দিতে হয়েছিল মহাত্মা গান্ধীকে৷ নরেন্দ্র মোদী দিল্লির দাঙ্গার সময়ও নীরবে, নিরাপদে ভোটের হিসাব কষেন!

৪ মার্চের ছবিঘরটি দেখুন...