1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্প: কতটা উন্নয়ন, কতটা ভোটের কৌশল?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৭ জানুয়ারি ২০২১

দুর্নীতি, সংখ্যালঘু, বেকারত্ব— পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে অনেক ইস্যু৷ তবে তৃণমূল সব কিছুর সামনে নিয়ে আসতে চাইছে উন্নয়নকে৷ আর উন্নয়ন বললেই চলে আসছে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্পের কথা৷

https://p.dw.com/p/3ndyd
দুর্নীতি, সংখ্যালঘু, বেকারত্ব— পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে অনেক ইস্যু৷ তবে তৃণমূল সব কিছুর সামনে নিয়ে আসতে চাইছে উন্নয়নকে৷ আর উন্নয়ন বললেই চলে আসছে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্পের কথা৷
ছবি: Payel Samanta/DW

বাম আমলেও দেখা গেছে পশ্চিমবঙ্গে ‘পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি’ বেশ জনপ্রিয় ছিল৷ অর্থাৎ বিনামূল্যে মানুষকে কিছু পাইয়ে দিলে মানুষ ভোট দেবে৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর আমলে ফ্রি-তে পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতি প্রায় শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ সেসবের জন্যেই মুখ্যমন্ত্রীর একগুচ্ছ কর্মসূচি চালু হয়েছে৷ কিন্তু তৃণমূল তা মানতে নারাজ৷ তাদের মতে, উন্নয়ন মাথায় রেখেই মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্ত৷

নির্বাচনের মুখে উন্নয়নে জোর দিতে ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচি নিয়েছে রাজ্য সরকার৷ সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জোর গলায় দাবি করেছেন, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে উন্নয়নমূলক কাজে মোট ২০২১২ কোটি টাকা খরচ করেছে রাজ্য সরকার৷ ইতিমধ্যে দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে এ পর্যন্ত খাদ্যসাথী প্রকল্পে ৭ লক্ষ ১৪ হাজার আবেদন জমা পড়েছে৷ এর মধ্যে ৩লক্ষ ১৮ হাজার মানুষ এই সুবিধা পাচ্ছেন৷ স্বাস্থ্যসাথীর জন্য আবেদন করেছেন ৪২ লক্ষ পরিবার৷ তার মধ্যে ২৭ লক্ষ ১৩ হাজার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে এই কার্ড৷ সম্প্রতি ‘চোখের আলো' প্রকল্পে আগামী পাঁচ বছরে রাজ্যজুড়ে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ছাত্রছাত্রী, বয়স্কের বিনামূল্যে চশমাসহ ছানি অপারেশন করা হবে৷ এমনকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভোটের আগে একাধিক জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক করে বার্তা দিচ্ছেন দ্রুত শেষ করতে হবে থমকে থাকা উন্নয়নের কাজ৷

অধ্যাপক নন্দ

পশ্চিমবঙ্গ সরকার গত ১০ বছরে অনেক প্রকল্প রূপায়ণ করেছে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, নায্য মূল্যের ওষুধের দোকান, মিশন নির্মল বাংলা৷ এছাড়াও রয়েছে রূপশ্রী, শিশুসাথী, পথসাথী, গতিধারা, সবলা, লোকপ্রসার, শিক্ষাশ্রী, খেলাশ্রী, সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ, যুবশ্রী, শিশু আলয়, গীতাঞ্জলির মতো বিভিন্ন প্রকল্প৷

বিরোধীরা অবশ্য তৃণমূল কংগ্রেসের এই উদ্যোগকে গুরুত্ব দিতে রাজি নয়৷ তাদের দাবি, শুধু দুর্নীতি করেছে মমতা সরকার৷ তার প্রায়শ্চিত্ত করতেই ভোটের আগে এত উদ্যোগ৷ বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘তৃণমূলের কোনো মানবিক মুখ নেই৷ ওরা কেবল রাজনৈতিক সুবিধার জন্য কাজ করে৷ রাজ্যের ওপর ধারের বোঝা বাড়তে বাড়তে এখন ৪লক্ষ ৯০হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা এর পরের সরকারকে বয়ে বেড়াতে হবে৷” 

কন্যাশ্রী, মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্প আন্তর্জাতিক স্তরে সমাদৃত ও সম্মানিত হয়েছে৷ সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাল্যবিবাহ রোধ করতে প্রায় ৪৪ লক্ষ কিশোরীকে কন্যাশ্রী প্রকল্পটির অধীনে আনা হয়েছে৷ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ১১-১৮ বছর বয়সি ১২.৭২ লক্ষ কিশোরী সবলা প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছে৷ খাদ্যসাথী প্রকল্পে আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারকে ২ টাকা কিলো চাল ও গম দেওয়ার ফলে রাজ্যের প্রায় ৮.৬৬ কোটি উপকৃত হয়েছে বলে তৃণমূল সরকারের দাবি৷রাজ্য সরকারের তথ্য অনুযায়ী, সবুজসাথী প্রকল্পে নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ৭০ লক্ষ পড়ুয়া বিনামূল্যে সাইকেল পেয়েছে৷ গতিধারা প্রকল্পে ১৩৩৯৩ জন কর্মহীন তরুণ-তরুণী ১২৫ কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে পেয়েছেন৷ শিশুসাথী প্রকল্পের অধীনে মোট ১২,০০০ শিশু চিকিৎসা পেয়েছে৷ রাজ্যের ২৯৮৭৪৫টি আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবার গীতাঞ্জলি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির সুবিধা পেয়েছে৷ লোকশিল্পের পুনরুজ্জীবনের জন্য এক লক্ষ ৯৪ হাজার লোকশিল্পীকে ভাতা, পেনশন দেওয়া হচ্ছে৷

নির্বেদ রায়

রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক বিমল শঙ্কর বাম আমলের দান-খয়রাতির প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘‘পাইয়ে দেওয়ার রাজনীতিকে মানুষ সন্দেহ করে৷ ফ্রিতে পেতে পেতে মানুষের দাবি ক্রমশ বাড়তে থাকে, পরে না পেলেই তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে৷ সরকার যদি এতটাই উন্নয়ন করে থাকে তাহলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষকে ভোটকেন্দ্র থেকে দূরে রাখতে হয়েছিল কেন? লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ১৮ টি আসন পায় কী করে?” 

এ প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা নির্বেদ রায় বলেন, ‘‘আজ ভারতের অর্থনীতির যা অবস্থা তার পরিপ্রেক্ষিতে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকল্পগুলির মাধ্যমে অসাধারণ৷ উন্নয়নের কথা যখন ভাবা হয়েছে, তখন ভোটের কথা ভাবা হয়নি৷ বিরোধীরা এক পয়সার কাজও করেনি৷ শুধু ভোটের নামে বাজার গরম করছে৷ এটা মানুষকে প্রভাবিত করবে না৷ প্রায় ষাটটি প্রকল্প কোনো না কোনোভাবে মানুষের কাছে পৌঁছেছে৷” 

এই প্রকল্পগুলি তৃণমূলের ঝুলিতে কতটা ভোট টানতে পারবে? অধ্যাপক নন্দ  বলেন, ‘‘শেষ পাঁচ-ছ মাস ধরে হঠাৎ করে সরকারকে সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে৷ তার মানে এর আগে পরিষেবা মানুষের কাছে সেইভাবে পৌঁছে দেওয়া যায়নি৷ আজ কেন ভোটের আগে দুয়ারে সরকার বা পাড়ায় পাড়ায় সরকার, চোখের আলো-র কথা ভাবতে হচ্ছে? মানুষের মধ্যে এই প্রশ্নটা থেকে যাবে৷ তাছাড়া দুর্নীতি, কাটমানির মতো ইস্যু তো আছেই৷’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান