‘মূর্তি' অপসারণে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস
১২ এপ্রিল ২০১৭প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার অনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি ঘোষণা করেন মঙ্গলবার৷ গণভবনে হেফাজাতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁর সামনেই এই ঘোষণা দেন তিনি৷ আল্লামা শাহ আহমদ শফী কওমি মাদ্রাসাগুলোরও নিয়ন্ত্রক৷
প্রধানমন্ত্রী সেখানে বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের সামনে সম্প্রতি স্থাপন করা থেমিসের মূর্তি আমিও পছন্দ করিনি৷ থেমিসের মূর্তিতে আবার শাড়ি পরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এই মূর্তি স্থাপনের বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আমি কথা এগিয়েছি৷ দেখি কী করা যায়৷''
সুপ্রিম কোর্টের মূল ফটকের সামনে গত ডিসেম্বরে এই ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়৷ গ্রিক দেবী থেমিসের আদলে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেছেন ভাস্কর মৃণাল হক৷ ভাস্কর্যটির ডান হাতে একটি তলোয়ার আর বাম হাতে দাঁড়িপাল্লা নিয়ে দাঁড়ানো নারী৷ এই ভাস্কর্য স্থাপনের পর থেকেই হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন ইসলামি সংগঠন তা অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছে৷ প্রধানমন্ত্রীর মঙ্গলাবারের বক্তব্য তাঁদের দাবির প্রতি সমর্থনই প্রকাশ করেছে৷
হেফাজতে ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী ওই মূর্তি সরিয়ে ফেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, ‘আমার ওপর আস্থা রাখেন, ভরসা রাখেন৷' আমরাও মনে করি, তিনি মূর্তি সরিয়ে ফেলবেন৷ তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, একটি মূর্তিকে কেন্দ্র করে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সুযোগ দেওয়া ঠিক হবে না৷''
২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম ঢাকার শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়েছিল এই সরকারের বিরুদ্ধে৷ পরে সংঘর্ষ এবং পুলিশি অভিযানের মুখে হেফাজতের কর্মসূচি পণ্ড হয়৷ হেফাজতের অনেক নেতার কিরুদ্ধে মামলাও হয়৷ কিন্তু এখন পরিস্থিতি অনেক পাল্টে গেছে৷ সরকার ও হেফাজত এখন অনেক কাছকাছি৷
মাওলানা আজিজুল হক বলেন, ‘‘সরকারের বিরুদ্ধে আমাদের কোনো আন্দোলন ছিল না৷ আমাদের আন্দালন ছিল নাস্তিকদের বিরুদ্ধে৷ সরকারকে কেউ ভুল বুঝিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে লাগিয়েছিল৷ কিন্তু সরকার তার ভুল বুঝতে পেরেছে৷ ভুল স্বীকার করেছে৷ বর্তমান সরকার উপলব্ধি করেছে, মুসলামনদের স্বার্থের বিরুদ্ধে কোনো কাজ করা ঠিক হবে না৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরা পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধেরও দাবি জানিয়েছি৷ তবে এ নিয়ে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী কিছু বলেননি৷ মঙ্গল শোভাযাত্রা হারাম৷ এটা বন্ধ না করলে আমরা এর বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেব৷''
এদিকে কওমী শিক্ষাব্যস্থার সরকারি স্বীকৃতিতেও হেফাজত খুশি৷ কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ক্লাস দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেওয়া হয়েছে৷ এসব এখন হেফাজত এবং সরকারকে বৈরিতার সম্পর্কের অবসান ঘটিয়ে কাছাকাছি নিয়ে গেছে৷
রজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শাপলা চত্ত্বরের ঘটনার পর বর্তমান সময়কে বিশ্লেষণ করলে এটা স্পষ্ট যে, সরকার হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে একটি সমঝোতায় গেছে৷ সরকার একটি সহাবস্থান তৈরি করেছে হেফাজতের সঙ্গে৷ সরকার চাইছে হেফাজতকে কাছে রেখে আগামী নির্বাচনে তাদের বিশাল নেটওয়ার্ককে কাজে লাগাতে৷''
তিনি বলেন, ‘‘আর এ কারণে এরই মধ্যে সরকার হেফাজতকে অনেক ছাড় দিয়েছে৷ সর্বশেষ কওমি শিক্ষাব্যবস্থার স্বীকৃতি এবং সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে গ্রিক ভাস্কর্য সরানোর প্রতিশ্রুতি তারই অংশ৷''
আওয়ামী লীগের সঙ্গে হেফাজতের কথিত এই সমঝোতা কি দেশের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে?