যুক্তরাষ্ট্রে শুক্রবারের আন্দোলন
৩১ আগস্ট ২০১৯সুইডেনের ১৬ বছর বয়সী গ্রেটা টুনব্যার্গ ২০১৮ সালের আগস্টে এই জলবায়ু আন্দোলন শুরু করেছিলনে৷ যুক্তরাষ্ট্রের অনেকেই এ বিষয়ে অবহিত না হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন৷
ওয়াশিংটন ডিসিতে বৃষ্টিস্নাত এক শুক্রবারে কিশোরদের ছোট্ট একটি দল ওয়াশিংটন স্মৃতিস্তম্ভের পাশে একটি ফোয়ারা পাদদেশ বসেছিল৷ এ সময় ১৬ বছরের মাদলিন গ্রাহাম তার আন্দোলনকারীদের তৈরি করছিলেন৷ পুলিশ সেখান থেকে তাদের চলে বলেছিল৷ কিন্তু গ্রাহাম পুলিশকে বলে, তার চারপাশে পাঁচজনের মত আন্দোলনকারী আছে এবং তারা ঠিক জায়গাতেই অবস্থান করছেন৷ ‘‘আমাদের এখানে থাকার অধিকার আছে,'' জোর দিয়ে বলেন তিনি৷ পরে এই গ্রুপটি ১০ জনের দলে পরিণত হয়৷
গ্রাহাম বলেন, যদি আমরা ২০ জনের বেশি লোক পাই তবে আমাদের অনুমতি নেওয়ার দরকার হবে, আর সেই লোকসংখ্যা আমাদের নেই৷ আমাদের দুটি ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়তে হবে৷
গ্রাহামের পরিবারও বিশ্বাস করে কিশোরদের এই জলবায়ু আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রে পরিবর্তন এনে দিতে পারে৷ আর গ্রাহাম বলেন, ‘‘কোনো রাজনীতিবিদ আমাদের অবমূল্যায়ন করলেও দীর্ঘদিনের জন্য তা করতে পারবেন না৷''
কোনো এক শুক্রবারের প্রতিবাদের বিষয় ছিল ব্রাজিলের আমাজনের অগ্নিকাণ্ড৷ এক বছর আগে ব্রাজিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা ক্যারোলিনা শ্যাফারও ওই আন্দোলনে অংশ নেন৷ তার হাতে থাকা একটি পোস্টারে লেখা ছিল, ‘যারা বন পোড়াচ্ছেন তাদের থামাতে আমাদের সহায়তা করুন'৷
নিউইয়র্ক সিটিতে জলবায়ু নিয়ো কয়েক ঘণ্টা ধর্মঘটে অংশ নিয়েছিলেন আলেকজান্দ্রিয়া ভিলেনসর৷ ২০১৮ সালের নভেম্বরে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ভ্রমণে গিয়ে প্যারাডাইস দাবানলের অভিজ্ঞতা পেয়েছিলেন তিনি৷ ‘‘ধোঁয়াটি এতই খারাপ ছিল যে আমাকে খুব দ্রুত নিউইয়র্কে ফিরে যেতে হয়েছিল৷ এরপর আমি জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে দাবানলের মধ্যে সম্পর্ক সমন্ধে জানতে পারি এবং এটি আমাকে ক্ষুদ্ধ করে তোলে৷''
২০১৮ সালের ডিসেম্বরে প্রথম জলবায়ু ধর্মঘটে যান ভিলেসনর, এখনো এই আন্দোলন থেকে সরে আসেননি৷ তিনি ২০১৯ সালের মে মাসে বিশ্ব জলবায়ু ধর্মঘটের সময় নিউইয়র্কে প্রতিবাদকারীদের সংগঠিত করেন৷ যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অন্যান্য দেশে জলবায়ু নিয়ে যারা আন্দোলন করছেন তাদের সঙ্গে সমন্বয়ে দায়িত্বও পালন করেন তিনি৷ এছাড়া ‘আর্থ আপরাইজিং' নামে একটি সংস্থাও পরিচালনা করেন। নিজের কাজ নিয়ে তার ভাষ্য, ‘‘আমি পর্যাপ্ত খাবার এবং পাঁচ ঘণ্টা ঘুমাতে পারলে অনেক কিছু করতে পারি৷''
ওয়াশিংটন ডিসির ১৭ বছর বয়সী উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী জেরোম ফস্টার বলেছেন, তিনি দুই বছর আগে জলবায়ু ইস্যুতে আগ্রহী হওয়ার পর থেকে আরও যুবককে এই কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে দেখেছেন৷ কিন্তু এই কর্মকাণ্ডে জনগণের অংশগ্রহণের হার যথেষ্ট নয় বলে মনে করে সে৷
আন্দোলনে অংশ নেওয়া অনেক শিক্ষার্থীই মনে করেন, কিশোরদের এই জলবায়ু আন্দোলন ইউরোপের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তেমন বড় কিছু নয়৷ কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তেমন গ্রহণযোগ্য বিষয়ই না৷ এজন্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রকৃত খবর বেশি বেশি করে জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে, এজন্য তারা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ৷
আগামী ২০ সেপ্টেম্বরে ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক' কর্মসূচি আয়োজনের তৎপরাতা চালাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা৷ বিশ্ব নেতারা আগামী ২৩ সেপ্টেম্বরের জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে পৌঁছানোর আগের শুক্রবার তারা এই কর্মসূচির আয়োজন করবেন৷
কারলা ব্লিকার/এসআই