রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য শিলাইদহ
২৯ মে ২০১১শিলাইদহ পর্বে কবি লিখেছেন সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালি, ক্ষণিকার অসংখ্য কবিতা৷ লিখেছেন অর্ধশতাধিক ছোটগল্প আর প্রিয় ভ্রাতুষ্পুত্রীকে অনন্য পত্রগুচ্ছ৷ ‘পদ্মা' বোটে ভেসে বেড়িয়েছেন পদ্মা নদীর ওপর৷
পদ্মা নদীর পাড়ে আজকের কুষ্টিয়ার অন্তর্গত শিলাইদহ গ্রাম৷ নীলকর সাহেব শেলীর নাম অনুসারে প্রতিষ্ঠিত শিলাইদহ কাছারি বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পৈত্রিক জমিদারি দেখাশোনার কাজে প্রথম আসেন ১৮৯১ সালে বাবা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্দেশে৷ এর আগেও তিনি সেজ ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর ও নতুন বউঠাকরুন কাদম্বরী দেবির সঙ্গে শিলাইদহে আসেন, তার বর্ণনা আমরা পাই ‘‘ছেলেবেলা'' গ্রন্থে৷ ৩০ বছর বয়সে জমিদারির পুরো দায়িত্ব নেবার পর তাঁকে অনেকবারই আসতে হয়েছে এ দেশে৷
নওগাঁয় নাগর নদীর তীরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কালিগ্রাম পরগনায় ১৮৯১ সালে প্রথম এলেও সিরাজগঞ্জে করতোয়া নদীর সংযোগ খালের পাড়ে দাদা প্রিন্স দারকানাথ ঠাকুরের ১৩ টাকা ১০ আনায় কেনা শাহাজাহাদপুর কাছারি বাড়িতে যান ১৮৯০ সালে৷ প্রজাপ্রিয় রবীন্দ্রনাথ শাহজাহাদপুর কাছারি বাড়িতে শেষবারের মতো আসেন ১৮৯৬ সালে আর শিলাইদহে ১৯০১ সালে৷ পতিসরে কাছারি বাড়ি থেকে তিনি অসুস্থ অবস্থায় শেষ বিদায় নেন ১৯৩৭ সালের ২৭ জুলাই৷
জমিদার রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময়ই ব্যয় করেছেন সাহিত্য চর্চা আর প্রজাদের কল্যাণে৷ গবেষকদের অনেকেই মনে করেন, কবিখ্যাতির কারণে প্রজাদের কল্যাণে তার নেয়া পদক্ষেপগুলোর খবর জনসমক্ষে তেমন ভাবে আসেনি৷
প্রত্নতত্ত্ব ও যাদুঘর অধিদপ্তর শিলাইদহ কুঠিবাড়ির রং লাল থেকে সাদা করায় প্রথম দর্শনে খানিকটা হতাশ হন রবীন্দ্র ভক্তদের অনেকেই৷ কিন্তু দ্বিতল ভবনের কক্ষ গুলোতে সংরক্ষিত কবির ব্যবহার করা জিনিসপত্র দেখার পর সে হতাশার অনেকটাই কেটে যায় তাদের৷ ১৯১৩ সালে নোবেল সাহিত্য পুরস্কার পাবার খবরটি যে পত্রিকায় ছাপা হয় তার সংরক্ষিত একটি কপির পাশাপাশি রবি ঠাকুরের নানা ধরনের ফটো আর তাঁর আকাঁ ছবি ভক্তদের নিয়ে যায় কবির সেই সোনালি দিনগুলোর কাছাকাছি৷ রবি ঠাকুরের কবিতা বাঙালিদের বিশ্বব্যাপী পরিচিত করলেও তাঁর জনকল্যাণমূলক কাজের কথা খোদ বাঙালিরাই জানে না তেমন ভাবে, এ দাবি রবীন্দ্র গবেষকদের৷
রবীন্দ্র গবেষক প্রফেসর নাছিমউদ্দিন মালিথার এ বক্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করেন এমন গবেষকদের অনেকেই মনে করেন, শুধুমাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে গবেষণার জন্য বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগী হতে হবে৷
কুঠিবাড়ির চারিদিকে শুধু গাছ আর গাছ কিন্তু তারপরেও অনেক দূর থেকেই নজরে আসে ইন্দো-ইউরোপীয় স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত এই বাড়িটি৷ পাকা পুকুর পাড়ে বকুল ফুলের গাছ তলায় খানিকটা বসলে পদ্মার শীতল বাতাসে নিমেষেই জুড়িয়ে যাবে মন-প্রাণ-শরীর৷ পদ্মাবক্ষে ভ্রমণের সময় যারা কবিকে দেখেছেন তাদের কেউ কেউ এখনো বেঁচে আছেন৷ তাঁদেরই একজন কসবা গ্রামের ১০৫ বছর বয়সের নজর আলী৷
প্রজারাও জমিদার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কতটা ভালবাসতেন তারও একটি উদাহরণ দেন নজর আলী
প্রজাদের কল্যাণে শিলাইদহে রবি ঠাকুর যে দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রটি স্থাপন করেন শুধু সেটিই নয় সময়ের ব্যবধান আর অবহেলার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে কাছারি বাড়িসহ অনেক কিছুই৷ ৮৪ বছর বয়সের মো: সিরাজুল ইসলামও রবীন্দ্রনাথকে দেখেছেন কাছে থেকে৷
প্রতিবেদন: হাসিবুর রহমান বিলু, বগুড়া
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক