‘রাজনীতির গতি প্রকৃতির নিয়ন্ত্রণ বিএনপির হাতে নেই'
৩ মার্চ ২০১৮বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এখন কারাগারে৷ ইতিমধ্যে একটি মামলায় ৫ বছরের সাজাও হয়েছে৷ অপর একটি মামলার বিচার কাজ শেষ পর্যায়ে৷ সব মিলিয়ে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এখন ৩৪টি মামলা৷
এর মধ্যে ৫টি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও আছে৷ ফলে সহসাই খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে এমনটি মনে হচ্ছে না৷ কোনো কোনো রাজনীতি বিশ্লেষক মনে করেন, খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগকে মাঠে পরাজিত করার শক্তি বিএনপির নেই৷ ফলে কিছু বিশৃঙ্খলা হলেও শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দল যেভাবে চাইবে সেভাবেই নিয়ন্ত্রিত হবে সামনের সময়ে রাজনীতির গতি প্রকৃতি৷
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. একরাম উল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সামনে দিনে রাজনীতির গতি প্রকৃতির নিয়ন্ত্রণ এখন আর বিএনপির হাতে নেই৷ খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে তারেক রহমানকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে৷ তিনি খানিকটা স্বৈরতান্ত্রিক৷ ফলে অনেক সিনিয়র নেতা সরাসরি কিছু না বললেও তার সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হবেন৷ তবে এই মুহুর্তে শাসক দলকে বিট করে জনগনকে উদ্বুদ্ধ করার শক্তিও তাদের নেই৷ সাধারণ মানুষের মধ্যে হয়ত কিছু ক্ষোভ আছে, কিন্তু সেটা রাজপথে নামার মতো নয়৷ আবার বিএনপি যেভাবে কর্মসূচী নিয়ে এগুচ্ছে তাতে জনগন উদ্বুর্দ্ধ হয়ে রাজপথে নামবে সেটাও মনে হচ্ছে না৷ ফলে শাসক দলের উপর চাপ সৃষ্টি করার মতো কোন অবস্থা এখন নেই৷ শাসক দল যেভাবে চাচ্ছে সেভাবেই তারা সামনের দিকে এগুচ্ছে৷ ফলে সামনে নতুন কিছু মিলবে তা মনে হয় না৷''
উচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেলের সদস্য এ্যাডভোকেট সগির আহমেদ লিয়ন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩৪টি মামলা বিচারাধীন৷'' এখন যে মামলায় তিনি কারাগারে আছেন সেই মামলাটির নিম্ন আদালতের নথির অপেক্ষায় আছেন তারা৷
তিনি বলেন, ‘‘আমরা আশা করছি, আগামী দু'একদিনের মধ্যেই নিম্ন আদালতের রায়ের কপি উচ্চ আদালতে পৌঁছে যাবে।''
নথি আসার পরই আমরা রায় পাব বলে আশাবাদী৷ তিনি বলেন, ‘‘খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্যানেল সবগুলো মামলা নিয়েই কাজ করছে৷ যে ৫টি মামলায় এখনো তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে, সেগুলো নিয়েও আমরা কাজ করছি৷''
এদিকে বিভিন্ন স্থানে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন যেভাবে ভোট চাইছেন, তা আইনের লঙ্ঘন বলে দাবি করেছেন সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ৷
প্রধানমন্ত্রীর খুলনা সফরের দিন শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বক্তব্যে এই দাবি করে তিন বলেন, ইতোপূর্বে প্রধানমন্ত্রী সিলেট ও রাজশাহী সফরের সময় জনসভায় নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়া নিয়ে নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানিয়েছিল বিএনপি৷ তবে ইসি বলছে, তফসিল ঘোষণার আগে তাদের করার কিছু নেই৷
মওদুদ বলেন যে, যেহেতু তারা জানেন, নির্বাচন কমিশনের বিধিতে আছে, তফসিল ঘোষণার পরে উন্নয়নের কোনো ওয়াদা করতে পারবেন না, সেজন্য তারা এই সময়ে সেই সুযোগ নিচ্ছেন৷ এটা অনৈতিক এবং বেআইনি৷
বিপরীতে বিএনপিকে সমাবেশই করতে না দেওয়ার অভিযোগও করেন মওদুদ৷ তিনি বলেন, ‘‘বিরোধী দলকে তালাবদ্ধ করে রাখা, গৃহবন্দি করে রাখা, জেলখানায় রাখা, কোনো সভা-সমাবেশ করতে না দেওয়া এমনকি ঘরোয়া বৈঠক করতেও না দেওয়া- এটা চলতে পারে না। বাংলাদেশের মানুষ আগামী নির্বাচনে এর জবাব দেবে৷''
ইসির ‘নিষ্ক্রিয়' ভুমিকার সমালোচনা করে মওদুদ বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন বলছে, তাদের কিছু করার নেই। তাদের (ইসি) তো শক্তি নাই, সাহস নাই৷ তারা তো নিরপেক্ষ না৷ তাহলে তো তারা সরকারের একটি তল্পিবাহক প্রতিষ্ঠান৷ সেজন্য তারা এই কথা বলেন৷ আজকে যদি ভারতে হত, তাহলে ভারতের চিফ ইলেকশন কমিশনার ব্যবস্থা নিতেন৷ ইসিকে বলব, হয় তাদেরকে বন্ধ করেন, না হয় আমাদেরও অনুমতি দেন, যাতে আমরাও ধানের শীষে ভোট চাইতে পারি৷''
ড. একরাম উল্লাহ’র সঙ্গে আপনি কি একমত? লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷