রাজ্যপাল-সরকারের বিরোধে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন
২৬ ডিসেম্বর ২০২৩রাজভবন মনে করছে, সমাবর্তন বেআইনি। তাহলে ডিগ্রিপ্রাপ্তদের কী হবে?
রাজ্য সরকার বনাম রাজ্যপাল বিরোধের জেরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরপড়ুয়ারা রীতিমতো বিপাকে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনের একদিন আগে রাজ্যপাল অস্থায়ী উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউকে পদ থেকে সরিয়ে দেন। তিনিই বুদ্ধদেবকে নিয়োগ করেছিলেন। তারপরই রাজ্য শিক্ষা দপ্তর বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেয়, উপাচার্য হিসাবে এই সমাবর্তন করতে পারবেন বুদ্ধদেব সাউ।
উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা চলছে। সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছে, রাজ্যপাল কোনো অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করতে পারবেন না। রাজ্য সরকারের বিজ্ঞপ্তিতে সেই কথাও আছে।
উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি রাজভবন ও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে দুইটি চিঠি পেয়েছিলেন। তিনি বিষয়টি বিশ্ববিদ্য়ালয়ের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক সংস্থা ইউনিভার্সিটি কোর্টকে দেন। কোর্ট তাকে সমাবর্তন করতে বলে।
সমাবর্তনও নির্ধারিত দিনে হয়। তবে রাজ্যপাল সেখানে যাননি। প্রধান অতিথি হিসাবে থাকার কথা ছিল ইউজিসির চেয়ারম্যান এম জগদেশ কুমারের। তিনিও সমাবর্তনে আসেননি। মঞ্চে ছিলেন বিতর্কিত উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ। তিনি সমাবর্তন শুরু ও শেষের ঘোষণা দেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কোর্টের কথা মেনে তিনি পড়ুয়াদের ডিগ্রি সার্টিফিকেট দেননি। সেটা দিয়েছেন সহ-উপাচার্য অমিতাভ দত্ত। কিন্তু সেই সার্টিফিকেটে বুদ্ধদেবের সই আছে। সাড়ে চার হাজার পড়ুয়া এই সার্টিফিকেট নেন।
আর এখানেই বিতর্ক দেখা দিয়েছে। রাজভবন মনে করছে, এই সার্টিফিকেট বৈধ হয়। কারণ, রাজ্যপাল সমাবর্তনের আগে উপাচার্যকে সরিয়ে দিয়েছিলেন। তাই তিনি এই সার্টিফিকেটে সই করতে পারেন না। ফলে ওই সার্টিফিকেট আইনত বৈধ নয়। কিন্তু শিক্ষা দপ্তর বলছে, যেহেতু তারা আবার উপাচার্যকে পদে বহাল করেছিল, তাই এতে আইনি কোনো বাধ নেই।
সূত্র জানাচ্ছে, রাজভবন এখন আইনি পরামর্শ নিচ্ছে। দরকার হলে, রাজ্যপাল আদালতে যেতে পারেন।
প্রচুর পড়ুয়া ও অবিভাবকরা ইতিমধ্যেই রাজভবনে ফোন করে জানতে চেয়েছেন, এই সার্টিফিকেট বৈধ কি না। এই সার্টিফিকেট ব্যবহার করে তারা বিপদে পড়বেন কিনা। রাজ্যপাল একটি কমিটি করে দিয়েছেন বিষয়টা দেখার জন্য।
এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, কে ঠিক, রাজ্যপাল না রাজ্য সরকার? সমাবর্তনের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের কী ভূমিকা আছে? রাজ্যপাল উপাচার্যকে অপসারিত করার পর তারা কি তাকে আবার পদে বসাতে পারে? সমাবর্তন হয়ে যাওয়ার পর রাজ্যপাল কি আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন? রাজ্য সরকার ও রাজ্যপালের মধ্যে লড়াইয়ে যে এত পড়ুয়া বিপাকে পড়েছে, তার দায় কে নেবে?
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
যাদবপুরের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু বলেছেন, ''পড়ুয়াদের ভবিষ্যতে যাতে কোনো অসুবিধায় পড়তে না হয়, সেজন্যই কোর্ট বলেছিল সহ উপাচার্য সার্টিফিকেট দেবেন। সেইমতো তিনিই সার্টিফিকেট দিয়েছেন।''
উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ বলেছেন, ''পরে কী হবে তা বলা যায় না। হাইকোর্ট আছে, সুপ্রিম কোর্ট আছে। তাই যা হওয়ার হবে। আইন অনুযায়ী হবে।''
কেন এই সংঘাত?
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ''এই সংঘাত শুধু পশ্চিমবঙ্গে হচ্ছে না, ভারতে অনেকগুলি বিরোধী শাসিত রাজ্যে হচ্ছে। কেরালা, তামিলনাড়ুতেও এই সংঘাত তীব্র হয়েছে। পাঞ্জাবেও হচ্ছে। এই রাজ্যগুলিতে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে একটা সংঘাত হচ্ছে এবং অন্য বিষয় নিয়েও রাজ্য সরকার রাজ্যপালের মধ্যে সংঘাত হচ্ছে।''
শুভাশিসের মতে, ''দেখে মনে হচ্ছে, বিজেপি বিস্ববিদ্যালয়গুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। কিন্তু রাজ্য সরকারগুলি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছে। তাদের কথা না শুনে রাজ্যপাল কি একতরফা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন? এ নিয়ে অনেক মামলাই সুপ্রিম কোর্টে আছে। সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারে। তবে এখন যা হচ্ছে, তাতে প্রচুর প্রশ্ন উঠছে। পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।''
শুভাশিস জানিয়েছেন, ''সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, বিদেশে পড়ুয়াদের যাওয়া অনেক বেড়ে গেছে। এরকম হতে থাকলে তা আরো বাড়তে পারে। এই প্রবণতা কিন্তু সবসময় ভালো নয়।''
জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এএনআই)