সাক্ষাৎকার: ন্যাটো প্রধান ইয়েন্স স্টলটেনব্যার্গ
২৭ জুন ২০১৮ডয়চে ভেলে: বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকা অ্যান্টি-অ্যামেরিকান মনোভাব কি ন্যাটোর ইমেজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে, বিশেষত জোটটি যখন নিজেই অ্যামেরিকার নেতৃত্বে চলছে বলে দাবি করে থাকে?
ইয়েন্স স্টলটেনব্যার্গ: আমরা এ ধরনের মনোভাব ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় দেখেছি৷ আর পরে ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের পরও মানুষের মধ্যে এই মনোভাব দেখা গেছে৷ ইউরোপের বন্ধু দেশগুলোর সাথে অ্যামেরিকার কিছু বিষয়ে মতপার্থক্য রয়েছে, যেমন- বাণিজ্য, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ইরানকে পারমাণবিকভাবে নিরস্ত্রীকরণের চুক্তি ইত্যাদি৷ আবার পাশাপাশি আমরা এটাও দেখেছি ন্যাটো তার মূল কাজ- নিজেদের প্রতিরক্ষা এবং একে অপরকে রক্ষার বিষয়টিতে সবাইকে জোটবদ্ধ করতে পারছে৷ আমরা দেখছি অ্যামেরিকা স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের পর প্রথমবারের মতো ইউরোপে তাদের উপস্থিতি ব্যাপক হারে বাড়িয়েছে৷
বর্তমান জরিপ দেখাচ্ছে ইউরোপের সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, যা এক দশক আগেও ছিল না৷ নতুন একটি সমীক্ষা বলছে, জার্মানরা সন্ত্রাসবাদ এবং রাজনৈতিক উগ্রতাবাদ নিয়ে খুব ভীত৷ আপনি ইউরোপীয়দের মধ্যে ন্যাটোর প্রতি কেমন সমর্থন দেখতে পান?
আমরা মনে করি ইউরোপ ও অ্যামেরিকা জুড়ে ন্যাটোর প্রতি সমর্থন বাড়ছে৷ আর এটাও ঠিক যে নতুন চ্যালেঞ্জ ও হুমকির মুখে ন্যাটোর যৌক্তিকতা দিনদিন বাড়ছে৷
অ্যামেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাটোকে একটি অচল সংগঠন বলেছেন৷ সাম্প্রতিক এক বক্তৃতায় তিনি দাবি করেছেন, অ্যামেরিকা ন্যাটোর খরচের প্রায় পুরোটাই দেয়৷ আপনি ট্রাম্পের সমালোচনাকে কীভাবে দেখেন?
এটা সত্যি ডোনাল্ড ট্রাম্প ন্যাটোকে অচল সংগঠন বলেছিলেন, কিন্তু সেটা তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে৷ কিন্তু পরে যখন আমি তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে হোয়াইট হাউজে গেলাম তখন তিনি বলেছেন, ন্যাটো আর অচল সংগঠন নেই৷ বাস্তব হলো তিনি ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক সংহতি আরও জোরদার করতে চান এবং ইউরোপের নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী করাও তার লক্ষ্য৷ তিনি কিছুটা বুঝতে পেরেছেন ইউরোপের মিত্ররা প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বাড়াচ্ছে এবং ন্যাটোও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিপুল ভূমিকা রাখছে৷
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নতুন পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে অগ্রগতির কথা বলেছেন৷ তিনি বলেছেন, পশ্চিমারা রাশিয়াকে ‘ধারণ' করতে ব্যর্থ হয়েছে৷ আপনি কি মনে করেন, যেসব অস্ত্রের কথা তিনি বলছেন তা সত্যি রয়েছে?
রাশিয়ার অস্ত্র নিয়ে সুনির্দিষ্ট কী ধরনের গোয়েন্দা তথ্য আছে সেটির বর্ণনায় আমি যাব না৷ কিন্তু মস্কো তার সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে৷ তারা প্রচলিত যুদ্ধাস্ত্রের পাশাপাশি পরমাণু অস্ত্র তৈরিতেও বিনিয়োগ করছে৷ এর ফলে সম্ভাব্য সঙ্কটে যে তারা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবে না, সেই নিশ্চয়তার হার কমে যাচ্ছে৷ এ বিষয়টি উপেক্ষা করার মতো শক্তি থাকা খু্বই গুরুত্বপূর্ণ৷ ন্যাটো এর সাথে তাল মিলিয়েই যৌথ সামরিক শক্তি আরও বাড়ানোর প্রতি জোর দিয়েছে৷ আমরা সামরিক বাহিনীকে সদাপ্রস্তুত রাখার ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছি, আর জোট এলাকার পূর্বপাশে সেনা নিয়োগ অব্যাহত রেখেছি৷ বিশেষ করে বাল্টিক সাগরের তীরবর্তী দেশগুলো, পোল্যান্ড এবং কৃষ্ণসাগর এলাকায়৷ আমরা যে-কোনো সম্ভাব্য প্রতিপক্ষকে জানিয়ে দিতে চাই, নিজেদের মিত্রপক্ষের যে কাউকে যে-কোনো সময় আমরা নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুত রয়েছি৷ এর মূল কারণ কিন্তু উস্কানি দিয়ে সংঘাত তৈরি করা নয়, বরং শান্তি বজায় রাখা৷
তাহলে পুটিন যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে তার বিরুদ্ধে আপনাদের কোনও সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেই?
আমরা ট্যাংকের বদলে ট্যাংক, মিসাইলের পালটা মিসাইল, কিংবা পরমাণু অস্ত্রের বিপরীতে পরমাণু অস্ত্র- ঠিক এভাবে জবাব দিচ্ছি না৷ কিন্তু আমরা এটা নিশ্চিত করতে চাই যে, ন্যাটো পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াতে সক্ষম৷ যখন সে দেখবে রাশিয়া ক্রমাগত আধুনিক যুদ্ধাস্ত্র তৈরি করছে এবং তার প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি আক্রমণ চালাচ্ছে৷ আমরা এটা জর্জিয়ায় দেখেছি, ইউক্রেনে দেখেছি৷ মলদোভার সরকারের অনুমতি ছাড়াই সেখানে মস্কোর সৈন্য রয়েছে৷ এই ধরনটা দীর্ঘদিন ধরে ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছে এবং এখন প্রত্যুত্তর দেওয়ার সময়৷ আমরা নতুন স্নায়ুযুদ্ধ চাই না৷ অস্ত্রের লড়াই কিংবা রাশিয়াকে একঘরে করতে চাই না৷ রাশিয়া আমাদের প্রতিবেশী, রাশিয়া সেখানেই থাকবে৷ আর তাই, ন্যাটো এটিকে একটি ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা হিসেবে দেখছে৷ সমন্বিতভাবে যে কৌশলকে আমরা ‘প্রতিরক্ষা ও সংলাপ' বলে ডাকি৷
ইউক্রেন ও জর্জিয়ার নাম উল্লেখ করেছেন৷ আপনি কী মনে করেন তাদের ন্যাটোতে যোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে?
ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক জোটে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে আমরা তাদের আকাঙ্খাকে সম্মান করি৷ ন্যাটোর জোটভুক্ত ২৯টি সদস্য রাষ্ট্র একসাথে এই দুটি দেশের সদস্যপদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবে৷ এটা এরকম নয় বাইরে থেকে যে কেউ ইচ্ছা হলেই ভেটো দিবে বা ইচ্ছা মতো নাক গলাবে৷ এটা কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য নয় যে, রাশিয়ার মতো বড় শক্তিগুলো তাদের প্রভাব বিস্তার করে ঠিক নিজের প্রতিবেশী দেশগুলোকে জবরদস্তি করে বলাবে কী তাদের বলা উচিত, আর কী নয়!
জানা নেম্তসোভা/এইচআই