রেয়ালে আবার জিদান
৩০ মে ২০১৩একটি বেসরকারি বেতারকেন্দ্রের সাক্ষাৎকারে খবরটা ফাঁস করেন পেরেস৷ যুগপৎ এ-ও জানান, মুরিনিও-র পরে কে রেয়ালের কোচ হতে চলেছেন, সেটা তিনিও জানেন না৷
জিদানের সঙ্গে রেয়ালের সম্পর্ক বহুদিনের, এমনকি সে সম্পর্ক আত্মিক এবং প্রায় পারিবারিক বলে অনেকে দাবি করেন৷ ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল অবধি জিদান গ্যালাকটিকোদের একজন হয়ে রেয়ালে খেলেছেন৷ ২০০১ সালে তিনি রেয়ালে ফেরেন পেরেস-এর বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে৷ তবে সে ফেরা বিশেষ সুখের ফেরা হয়নি, কেননা মুরিনিও-র সঙ্গে জিদানের ঠিক বনেনি৷
কাজেই রেয়ালে মুরিনিও-র যুগ যে শেষ হতে চলেছে, ঢাকঢোল পিটিয়ে জিদানকে ‘‘নতুন স্পোর্টিং প্রকল্পের'' নেতৃত্ব প্রদান করাটা তারই নিদর্শন বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে৷ কোচ পদে মুরিনিও-র উত্তরসুরী হিসেবে রেয়ালের চোখ ছিল বর্তমানে প্যারি সাঁ-জার্মার কোচ কার্লো আন্সেলত্তির উপর৷ ওদিকে সোমবার বায়ার্নের বিদায়ী কোচ ইয়ুপ হাইনকেসও পরোক্ষভাবে জানিয়েছেন যে, তিনি কোচ হিসেবে রেয়ালে ফিরতে ইচ্ছুক৷
এমনকি ডর্টমুন্ডের কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ সম্পর্কেও পেরেসকে প্রশ্ন করা হয়৷ পেরেস একটা মজার কথা বলেন: ‘‘ক্লপকে আমি পছন্দ করি৷ ভালো কোচ৷ কিন্তু ডর্টমুন্ডের প্লেয়াররা আমাদের প্লেয়ারদের চেয়ে কম বয়সের৷ ক্লপের স্টাইল আমাদের এখানে কতটা সফল হবে, সে বিষয়ে আমার সন্দেহ আছে৷''
মুরিনিও-কে অত্যধিক ক্ষমতা দেওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেছেন পেরেস৷ অন্যদিকে ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো কি সাবি আলন্সোকে রাখার জন্য আরো বেশি অর্থদান করতে রাজি রেয়াল মাদ্রিদ – অর্থাৎ তাদের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেস৷ ব্রাজিলের উঠতি তারকা নাইমার যে বার্সেলোনায় যাচ্ছে, তা-তে তিনি দুঃখিত নন৷ যদিও রেয়াল নাইমারকে বেশি অঙ্কের অফার দিয়েছিল৷ নাইমার তো কম কথা, সুযোগ পেলে খোদ লিওনেস মেসিকে চুক্তিবদ্ধ করতে রাজি ছিলেন পেরেস৷
পেরেস নিজেও যে খুব খারাপ খেলোয়াড় নন, অন্তত খেলাধুলার রাজনীতিতে, তার প্রমাণ, তিনি ক্লাবের স্ট্যাটিউট বদলে নিজের জন্য একটি কায়েমি বন্দোবস্ত করছেন এবং সে প্রচেষ্টায় প্রায় সফল হয়ে উঠতে চলেছেন বলেই মনে হচ্ছে৷ পেরেস যে নতুন নিয়ম চালু করেছেন, তা-তে ক্লাবের প্রেসিডেন্ট হতে গেলে অন্তত ২০ বছর ক্লাবের সদস্য থাকা চাই, এবং সেই সঙ্গে এতটা সম্পত্তি থাকা চাই যে, সংকট পড়লে ক্লাবের বাৎসরিক বাজেটের অন্তত ১৫ শতাংশ যেন প্রার্থীর নিজের সম্পত্তি দিয়েই টেনে দেওয়া চলে! পেরেসের এই নতুন নিয়মের ফল হয়েছে: পেরেস ছাড়া আর কেউ তেসরা জুনের ডেডলাইনের আগে এই যোগ্যতা দেখাতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে না৷
এই অবস্থায় ফুটবলের রাজপুত্তুর জিনেদিন জিদান এসে যে রেয়ালকে কোন ফুটবল স্বপ্নরাজ্যের পথ দেখাবেন, সেটা বোঝা মুশকিল৷ জিদান নিজে যেভাবে একদিন মার্সাই-এর অলিগলি থেকে উঠে এসেছিলেন এক মাথা কোঁকড়া চুল আর দু'পায়ে ফুটবলের ম্যাজিক নিয়ে – ঠিক সেভাবেই আজও নাইমার, মার্কো রয়েস কি লেভানডোভস্কিরা উঠে আসছে কে জানে কোন দেশ, কোন মাঠ থেকে৷ জহুরি জহর চেনে, এই নীতিতে তিনি যদি তাঁর নিজের উত্তরসুরীদের চিনে নিতে পারেন, তবেই হয়তো রেয়াল আবার একদিন – নিজগুণে – গ্যালাকটিকো হবে৷
এসি/ডিজি (ডিপিএ)