1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘আরও প্রশ্রয় দিলে হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে’

সমীর কুমার দে ঢাকা
২ এপ্রিল ২০২১

শিশু-কিশোরদের রাজনৈতিক মাঠে নামিয়ে হেফাজত ইসলামবিরোধী কাজ করছে বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি একথা বলেন৷

https://p.dw.com/p/3rX8G
মিছবাহুর রহমান চৌধুরী, চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটছবি: DW

তার মতে, এখনো হেফাজতকে নিয়ন্ত্রণ কঠিন নয়, যদি সরকার ইচ্ছা করে৷ তবে সরকার আরো বিলম্ব করলে বা আরো প্রশ্রয় দিলে এক সময় কঠিন হয়ে যাবে৷

ডয়চে ভেলে : মোদিকে বলা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক নেতা, কিন্তু যারা তার সফরের বিরোধিতা করেছেন তারাও কি সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছেন?  

মিছবাহুর রহমান চৌধুরী : যারা মোদির সফরের বিরোধিতা করেছেন, বিশেষ করে আমি কওমি আলেমদের ব্যাপারে বলব, তাদের পূর্বসূরিরা বা তারাও সবাই সাম্প্রদায়িক না৷ যেমন ধরেন তারা দেওবন্দকে অনুসরণ করেন৷ এটা ভারতে৷ দেওবন্দের যখন একশত বার্ষিকী পালন করা হল, তখন ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে প্রধান অতিথি করা হয়েছিল৷ এটা ১৯৮১-৮২ সালের ঘটনা৷ এছাড়া তাদের যারা মুরুব্বি মাওলানা হোসাইন আহমেদ মাদানী তো বিখ্যাত হাদিস বিশারদ ছিলেন৷ তিনি জহরলাল নেহেরু, সরদার প্যাটেলদের সঙ্গে একই মঞ্চে অনেক বক্তৃতা করেছেন৷ কিন্তু এখন যারা মোদি বিরোধী বলে কাজ করছেন তারা একটা সাম্প্রদায়িক ও ফ্যাসিস্ট দলের খপ্পরে পড়ে গেছেন৷ এই দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেনি কখনও৷ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীকে, নিজেদের ছাত্র সংগঠন দিয়ে সশস্ত্র ক্যাডার তৈরি করে তারা সহযোগিতা করেছেন৷ এখন যে ক'জন কওমি আলেম মাঠে বক্তৃতা বিবৃতি দিচ্ছেন এটা অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে দলটির খপ্পরে তারা পড়েছেন যে কোন আঁতাতের ভিত্তিতে তারা সাম্প্রদায়িক কর্মকাণ্ড করছেন৷

মিছবাহুর রহমান চৌধুরী

ভারতেও তো বিপুল সংখ্যক মুসলমান রয়েছে৷ এখানে মোদির সফরের বিরোধিতা করলে কি তাদের  বিপদ হতে পারে?

তাদের উদ্দেশ্য তো মোদি নয়৷ তাদের উদ্দেশ্য হল বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করা৷ তাদের উদ্দেশ্য হল বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করা৷ তাদের উদ্দেশ্য হল দেশে একটা বিশৃঙ্খলা করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা৷ গত কয়েকদিনে যারা ভাঙচুর, জ্বালাও পোড়াও করলেন তাদের গত ছয় মাসের বক্তৃতা বিবৃতি একত্রিত করেন তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন তাদের লক্ষ্য কী ছিল৷

হেফাজত তো অরাজনৈতিক ধর্মীয় সংগঠন৷ তাদের কি  রাজনৈতিক পক্ষ বা প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা ঠিক হচ্ছে?

হেফাজতের সবাই তো বিভিন্ন নামে রাজনীতি করেন৷ আহমদ শফির ইন্তেকালের পর যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার ব্যাপারে তো অনলাইন বা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আসছে তিনি জামায়াতের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন৷ তাদের পরামর্শেই তিনি বিভিন্ন কর্মসূচি দিচ্ছেন৷ এ কারণে আমি আগেই আপনাকে বলছি, জামায়াতে ইসলামী নামক ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দলের খপ্পরে তারা পড়েছেন৷

আহমদ শফির মৃত্যুর পর হেফাজত কি আগের আদর্শ থেকে সরে এসেছে?

আহমদ শফি সাহেব যখন হেফাজত প্রতিষ্ঠা করেন তখন আদর্শ ছিল যেসব ব্লগার আল্লাহ ও রাসুলের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেন এদের বিরুদ্ধে হবে তাদের আন্দোলন৷ ইসলামের মূল নীতির যারা বিরোধিতা করবেন তাদের বিরুদ্ধেই হবে এদের আন্দোলন৷ এটাতে উনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন৷ যখন উনি আন্দোলন করলেন তখন উনি দেখলেন শেখ হাসিনা সরকার আলেমদের ব্যাপারে শ্রদ্ধাশীল৷ আলেমদের জন্য তিনি কল্যাণকর কাজ করেছেন৷ এক শতাব্দীব্যাপী তাদের শিক্ষা সনদের কোন স্বীকৃতি ছিল না৷ প্রধানমন্ত্রী এই শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি দিয়েছেন৷ সারা বাংলাদেশের ৮৫ হাজার মসজিদকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আওতায় এনে সেখানে কোরআন শিক্ষার ব্যাবস্থা করে ইমামদের সম্মানি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন৷ ৫৬০টি জেলা-উপজেলায় মসজিদ তৈরি করে আলেমদের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করেছেন৷ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রত্যেকটি প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি স্কুলের জন্য ধর্মীয় শিক্ষক নিয়োগ দেবেন৷ এইসব তারা বানচাল করে দিতে চাচ্ছেন৷ এই রহস্যটাই আমি বুঝতে পারি না কেন তারা এই কাজ করতে চাচ্ছেন৷

হেফাজতের দাবির সঙ্গে বাম রাজনৈতিক দলগুলোর দাবি মিলে যাচ্ছে৷ আওয়ামী লীগের বিপক্ষে কি সবাই একতাবদ্ধ হচ্ছেন?

অনেকেই হবেন৷ যারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চান তারা নিজেদের আদর্শ বিসর্জন দিয়ে হলেও মিলে যাওয়ার একটা প্রক্রিয়া নিচ্ছেন এটাই আমরা শুনতে পাচ্ছি৷

কওমি মাদ্রাসাগুলোকে কি রাজনৈতিকরণ করা হচ্ছে?  

এইটা খুবই দুঃখজনক৷ যে কোন আন্দোলনে তারা শিশু-কিশোরদের নিয়ে মিছিল করেন৷ এই সরাইল হাইওয়েতে তারা যে আন্দোলন করেছে, সেখানে এত শিশু ছিল যে পুলিশ গুলি করতে ভয় পেয়েছে৷ এই শিশুদের তারা নিয়ে গেছেন৷ এগুলো ইসলামের পরিপন্থি কাজ৷ অথচ তারা ইসলামের নাম নিয়ে করছেন৷ এটার সুফল তারা পাবেন তো নাই, বরং সমস্ত কওমি অঙ্গনকে তারা কলুষিত করছেন৷

এই শিশুদের মধ্যে উগ্র মনোভাব তৈরি করা হচ্ছে৷ আপনি খেয়াল করবেন নারায়নগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় যে পিকেটিংটা হলো সেখানে বিভিন্ন মসজিদ থেকে নামাজের জন্য এসো না বলে আন্দোলনে যাওয়ার আহবান জানানো হয় মাদ্রাসা ছাত্রদের৷ এই যে, দেশের কোমলমতি শিশুদের তারা যে শিক্ষা দিচ্ছেন দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার জনকের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার স্থপতির বিরুদ্ধে এবং এমন বক্তৃতা বিবৃতি দিচ্ছেন যে সরকার ইসলামের ঘোর দুশমন৷ এভাবেই এই বাচ্চাদের মনে তারা ঘৃণা সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ এটা তো আত্মঘাতি, নিজেদের জন্যই তারা ক্ষতি করছেন৷ সারা দুনিয়ায় দেশের ইমেজ কমবে, ধর্মের ইমেজ কমবে৷ আফগানিস্তানের মতো তারা দেশটাকে একটা অস্থিতিশীল জায়গায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন৷

সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো কী বার্তা দেয়?  

বাংলাদেশ কখনই সাম্প্রদায়িক দেশ হবে না৷ এটার প্রমাণ দেখেন যে, স্বাধীনতার পর যতগুলো নির্বাচন হয়েছে সেখানে যারা ইসলামপন্থি বলে প্রচার করে তাদের মানুষ ভোট দেয়নি৷ কেন দেয়নি, যদি সেই প্রশ্ন করেন তাহলে বুঝবেন তারা ধার্মিক কিন্তু তারা ধর্মান্ধ নয়৷ তারা জানে, গুন্ডামি, গোড়ামি, ভন্ডামি এগুলো ধর্ম না৷ ধর্ম হবে উদার, ধর্ম হবে অসাম্প্রদায়িক, ধর্ম হবে ভালোবাসার৷ আল্লাহ কোরআন শরীফে বারবার বলেছেন, তোমরা সীমা লঙ্ঘন করো না৷ সীমালঙ্ঘনকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না৷ তারা তো একদিকে সীমা লঙ্ঘন করছেন, মানুষকে ভুল বার্তা দিচ্ছেন৷ মিথ্যাচার করছেন৷ ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে তারা কোরআন হাদিসের কথা বাদ দিয়ে নানা ধরনের কিচ্ছা কাহিনী বলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে ব্যবসা করছেন৷  

অনেকেই অভিযোগ করেন, সরকারের প্রশ্রয়ে হেফাজত আজকের অবস্থানে এসেছে? এখন তাদের নিয়ন্ত্রণ সরকারের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে?

আপনি যেটা বললেন সেটা আংশিক সত্য৷ নিয়ন্ত্রণ কঠিন নয়, যদি সরকার ইচ্ছা করে৷ তবে সরকার আরো বিলম্ব করলে বা আরো প্রশ্রয় দিলে এক সময় কঠিন হয়ে যাবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য