সাংবাদিকতায় সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বছর ২০১৮
১৮ ডিসেম্বর ২০১৮সাংবাদিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ)-এর প্রকাশ করা রিপোর্ট বলছে, যে ৮০ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে, তাঁদের অর্ধেকেরও বেশিজনকে টার্গেট করে হত্যা করা হয়েছে৷ ২০১৭ সালের তুলনায় সাংবাদিক হত্যা বেড়েছে অন্তত ১৫ শতাংশ৷
এর বাইরেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৩৪৮ জন সাংবাদিককে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে৷ ৬০ জন জিম্মি হয়েছেন বিভিন্ন গোষ্ঠীর হাতে৷
ভয়ঙ্করতম বছর
‘‘২০১৮ সালের মতো এতটা ভয়াবহ নিপীড়ন ও নির্যাতনের মুখে আর কখনোই পড়েননি সাংবাদিকরা,'' রিপোর্টে উল্লেখ করেছে আরএসএফ৷
তারা বলছে, খুন, কারাদণ্ড, জিম্মি ও গুম– সব ধরনের নির্যাতনেরই সম্মুখীন হয়েছেন সাংবাদিকরা৷
রিপোর্টে উঠে এসেছে ইস্তানবুলে সৌদি দূতাবাসে কলামিস্ট জামাল খাশগজির হত্যা কিংবা শ্লোভাক ডেটা জার্নালিস্ট ইয়ান কুৎসিয়াকের তাঁর বাগদত্তাসহ নিহত হওয়ার ঘটনাগুলো৷
সাংবাদিকতায় সবচেয়ে বেশি খারাপ পরিস্থিতি আফগানিস্তানে বলে উল্লেখ করেছে আরএসএফ৷ এ বছর দেশটিতে ১৫ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে৷ এর পরেই রয়েছে সিরিয়া৷ সেখানে নিহত হয়েছেন ১১ জন৷
সংঘাতপূর্ণ দেশ নয়, কিন্তু সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে, এমন দেশগুলোর মধ্যে ওপরে রয়েছে মেক্সিকো৷ ৯ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে সেখানে৷ এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে গত জুনে ক্যাপিটেল গ্যাজেট নিউজপেপারের ৫ জন বন্দুকের গুলিতে নিহত হন৷
আরএসএফ মহাসচিব ক্রিস্টোফ ডেলোয়ার বলেন, ‘‘পরিস্থিতি খুবই সঙ্গিন৷ বিবেকহীন রাজনীতিকরা, ধর্মীয় নেতারা ও ব্যবসায়ীরা প্রায়ই এখন খোলাখুলিভাবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ান৷ এ কারণেই সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতার মাত্রা বেড়েছে৷''
বাংলাদেশের পরিস্থিতি
আরএসএফ-এর হিসেবে বাংলাদেশের পরিস্থিতিও খুব একটা আশাব্যঞ্জক নয়৷ ২০১৭ সাল থেকে .ব্যাংকিংয়ে কোনো পরিবর্তন না হলেও রেটিংয়ে কিছুটা অবনতি হয়েছে৷ ১৮০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬৷ স্কোর ৪৮.৬২৷ ২০১৭ সালে স্কোর ছিল ৪৮.৩৬৷
৭.৬৩ স্কোর নিয়ে তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে নরওয়ে৷ আর ৮৮.৮৭ স্কোর নিয়ে সবচেয়ে নীচে আছে উত্তর কোরিয়া৷ সৌদি আরব ১৬৯ ও যুক্তরাষ্ট্র ৪৫ নম্বরে আছে৷
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত ১৩৮, পাকিস্তান ১৩৯, শ্রীলঙ্কা ১৩১, মালদ্বীপ ১২০, নেপাল ১০৬ ও ভূটান ৯৪তম স্থানে আছে৷
বাংলাদেশ বিষয়ে আরএসএফ বলছে, এখানেসংবিধান কিংবা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে সমালোচনা করা যায় না, যদিও দেশটি কাগজে কলমে অসাম্প্রদায়িক৷ মুক্তমনা ব্লগার ও লেখকদের ঝুঁকি বলবৎ আছে বলে উল্লেখ করা হয় রিপোর্টে৷ বলা হয়, এখানে ভিন্নমত প্রকাশের সুযোগ আছে, তবে সাংবাদিক ও মত প্রকাশের ওপর উপর্যুপরি আঘাতের কারণে সাংবাদিকরা ‘সেল্ফ সেন্সরশিপ' আরোপ করেছেন৷ সাংবাদিকদের ওপর আঘাত বা আক্রমণের বিচার না হওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে৷
বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে আইসিটি অ্যাক্ট নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পরও ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার অস্বচ্ছ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট পাশ করেছে৷
জেডএ/এসিবি