সাংবাদিক রাহনুমার মৃত্যু : আত্মহত্যা, নাকি হত্যা?
২৯ আগস্ট ২০২৪রাহনুমার বাবার দাবি, প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, হাতিরঝিল থেকে উদ্ধারের আগে তার সন্তান হাত তুলে সাহায্যের জন্য চিৎকার করেছে৷
ঢাকার বেসরকারি টেলিভিশন গাজী টিভির নিউজরুম এডিটর রাহনুমা সারাহর মৃত্যুর কারণ জানতে ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷
মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে তার লাশ হতিরঝিল থেকে উদ্ধার করা হয়৷ তার এক সহকর্মী জানান, রাতের পালার কাজ শেষে তিনি আর বাসায় ফেরেননি৷ তিনি কল্যাণপুর এলাকায় একটি বাসায় একাই থাকতেন বলে তার বাবা বখতিয়ার শিকদার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন৷ রাত দেড়টার দিকে হাতিঝিল এলাকার একটি রেষ্টুরেন্টের কর্মচারীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে পাশের ফরাজি হাসপাতালে নিয়ে যান, সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷
তার বাবা নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি বখতিয়ার শিকদার বলেন, ‘‘আমাকে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, আমার মেয়ে ঝিল থেকে হাত উঁচু করে বাঁচানোর আকুতি জানাচ্ছিলো৷ তার আকুতি শুনেই রেষ্টুরেন্টের দুই কর্মচারী উদ্ধার করে৷ তাকে কেউ ধাক্কা দিয়ে লেকে ফেলে দিয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ করি৷ আমার মেয়ে সাঁতার জানতো না৷”
মৃত্যুর ঘটনায় হাতিরঝিল থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা করেছেন রাহনুমার বড় বোন রাবিতা আলম৷ ওই থানার ওসি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘‘ময়না তদন্তের প্রতিবেদন এবং ভিসেরা প্রতিবেদন পেলেই মত্যুর কারণ জানা যাবে৷ প্রতিবেদন পেতে কমপক্ষে ১৫ দিন সময় লাগবে৷ তবে লাশের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি৷”
বখতিয়ার শিকদার বলেন, ‘‘আমরা মেয়ের মৃত্যু নিয়ে আমরা কাউকে এখনো সন্দেহ করতে পারছি না৷ পুলিশ তদন্ত করে দেখুক৷ তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ আমি জানতে চাই৷”
তিনি বলেন, ‘‘তবে তার কর্মস্থল নিয়ে অসন্তুষ্টি ছিল৷ তিন মাস ধরে বেতন পায়নি৷ কয়েকদিন আগেও সে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে৷ সে গাজী টিভির চাকরি ছাড়ার জন্য চাকরি খুঁজছিল৷ সে একা থাকতে পছন্দ করতো, তাই কল্যাণপুরের বাসায় একাই থাকতো৷ সে অবিবাহিত ছিলো৷ একজন তার স্বামী দাবি করে বক্তব্য দিলেও তার ব্যাপারে আমাদের কিছু জানা নাই৷”
তবে গাজী টিভির বার্তা সম্পাদক সালাম ফারুক ডয়চে ভেলেকে বলেন, “আমাদের প্রতিষ্ঠানে কারুর বেতন বকেয়া নেই। রাহনুমা ঘটনার দিন আগের মাসের বেতন তুলে বাসা ভাড়াও দিয়েছিলেন।”
পাচ-ছয় বছর তিনি গাজী টিভিতে কাজ করেছেন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে স্নাতক রাহনুমা দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে ছিলেন দ্বিতীয়৷ তার বড় বোন একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক৷
হাতিরঝিল থানার সাব ইন্সপেক্টর মাসুদ হোসেন লাশের সুরতহালের সময় ম্যাজিষ্ট্রেটের সঙ্গে ছিলেন৷ তিন বলেন, ‘‘আমরা ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে তার লাশ পাই৷ লাশের সুরতহালে বাইরে থেকে শরীরে আমরা কোমর্গনো আঘাতের চিহ্ন পাইনি৷ ঝিল থেকে তোলার সময় তার কাঁধে ব্যাগ ও গলায় আইডি কার্ড ছিল৷ তার ব্যাগের মধ্যে তার মোবাইল ফোন ছিল৷ ফোনটি ব্যাগের মধ্যে থাকার কারণে নষ্ট হয়নি৷ যারা তাকে উদ্ধার করেছেন, তারা ওই ফোন থেকেই তার পরিবার ও অফিসের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন৷” তিনি সালোয়ার-কামিজ পরা ছিলেন বলে জানান তিনি৷
রাহনুমার সহকর্মী জান্নাতুল ফেরদৌসি রাহনুমার মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান৷ তিনি ঘটনাস্থলেও গিয়েছেন৷ তিনি জানান, ‘‘রামপুরা ব্রিজ সংলগ্ন সোড রেষ্টুরেন্টের কাছে হাতিরঝিলের যে অংশ, সেখান থেকেই তাকে উদ্ধার করা হয়৷ প্রত্যক্ষদর্শী একজন আমাকে জানিয়েছেন যে, সে ওখানে একটি গাছের নীচে রাত দেড়টার কিছু আগে বসেছিল৷ তখন তারা তাকে বসে থাকার কারণ জানতে চাইলে সে তার পরিচয় দিয়ে জানায়, অফিস থেকে তাকে গাড়ি আসবে নিতে, সেজন্য অপেক্ষা করছে৷ সে রাতের পালার কাজ শেষ করে রাত ১২টার আগেই অফিস থেকে বের হয়ে যায়৷”
তিনি বলেন, ‘‘সে এমনিতে হাসিখুশিই থাকতো৷ আমাদের সাথে আড্ডা দিতো৷ তবে কয়েকদিন ধরে সে বলতো তার কিছু ভালো লাগছে না৷”
ময়না তদন্ত শেষে বুধবার বিকালে রাহনুমার লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়৷ পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয় গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে রাহনুমার দাফন হবে৷
সাংবাদিক রাহনুমার মৃত্যুতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ৷ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘‘আমরা লক্ষ্য করছি যে, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নারী ও কন্যারা বিভিন্ন সহিংসতার শিকার হচ্ছে৷ কর্মক্ষেত্রে পেশাজীবী নারীদের স্বাধীনভাবে চলাফেরা ও তাদের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন৷”
মহিলা পরিষদ নারী সাংবাদিক রাহানুমা সারাহ'র রহস্যজনক মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনপূর্বক জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে৷