সুন্দরবন বাঁচাতে ইউনেস্কো’র আহ্বান
১৯ অক্টোবর ২০১৬এদিকে, রামপালবিরোধীরা আবার হয়েছেন হামলার শিকার৷
জাতিসংঘের সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞান বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো বুধবার এক বিবৃতিতে বাংলাদেশ সরকারকে সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র না করার আহ্বান জানিয়েছে৷ সংস্থাটি মনে করে, সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে তা সুন্দরবনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হবে৷ আর বনটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভবিষ্যতে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতির মাত্রাও বাড়বে৷
এদিকে, সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরোধিতা করে মঙ্গলবার ঢাকায় আয়োজিত এক মিছিলে পুলিশের বাধায় আহত হয়েছেন কয়েকজন৷ পুলিশ জলকামান ও টিয়ার সেল ছুঁড়ে মিছিলটি ছত্রভঙ্গ করে দেয়৷ রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে লেখা খোলা চিঠি ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনে জমা দিতে মিছিলটির আয়োজন করা হয়৷
রামপাল বিরোধীদের মিছিলে পুলিশের বাধার বিষয়টি ফেসবুকে গুরুত্ব সহকারে জানিয়েছেন অনেকে৷ অ্যাক্টিভিস্ট লাকি আক্তার লিখেছেন, ‘‘সুন্দরবন বাঁচানোর লড়াইয়ে এ পর্যন্ত বহুবার আক্রমণ এসেছে৷ আজও (গতকাল) এর ব্যাতিক্রম ঘটেনি৷ রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প বাতিল এবং সুন্দরবন বাঁচানোর দাবিতে ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্দেশে খোলা চিঠি প্রদান করতে জাতীয় কমিটির মিছিলে পুলিশের হামলার তীব্র নিন্দা জানাই৷''
তিনি লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর সজীবসহ অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন৷ বিভিন্ন সংগঠনের অনেকেই আহত হয়েছেন৷ যত আক্রমণ আর বাধাই আসুক না কেন সুন্দরবন বাঁচানোর সংগ্রাম চলবেই৷ মশিউররা লড়বেই৷''
আরেক অ্যাক্টিভিস্ট ব্রাত্য আমিন ফেসবুকে একাধিক ভিডিও পোস্ট করেছেন৷ একটি ভিডিওতে তিনি মিছিলে অংশ নেয়া সন্তানসহ এক মা'কে দেখিয়ে লিখেছেন, ‘‘একজন মা তাঁর সন্তানকে কোলে নিয়ে শ্লোগান দিতে দিতে যাচ্ছে সুন্দরবনকে বাঁচানোর সেই মিছিলে৷ আপনার শিশু না হয় থাকবে বিদেশে, কিন্তু এই শিশুরা কিভাবে বাঁচবে এই দেশে, যদি সুন্দরবনই না থাকে!''
ব্রাত্য আমিন মিছিলে পুলিশের টিয়ার সেল ছুঁড়ে মারার একটি ভিডিও ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘এটা নাকি একটা স্বাধীন দেশ! আমরা নাকি স্বাধীন দেশের নাগরিক! এই কথাগুলো বলতে বা ভাবতে একটুও লজ্জা করে না আপনাদের? এই দেশের কোনো কিছুতেই কি আর আমাদের কিছুই যায় বা আসে না! আমরা এতটাই বোধশূন্য হয়ে যাচ্ছি! চারদিকে এত অন্যায়-অবিচার-অসততা দেখেও আমরা কি অদ্ভুত নির্বিকার! আমরা মানুষ তো, না!''
বলাবাহুল্য, পুলিশের বাধার মুখে পড়লেও রামপাল বিরোধীদের একটি দল মঙ্গলবার ভারতীয় দূতাবাসে চিঠিটি পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়৷ একইদিন ভারতের একদল রামপাল বিরোধী আন্দোলনকারীও সেদেশের প্রধানমন্ত্রীকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়েছেন৷ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট কল্লোল মুস্তফা এই বিষয়ে লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশের আন্দোলনকারীদের সাথে সংহতি জানিয়ে একই দিনে ভারতের আন্দোলনকারীরাও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবিতে চিঠি দিয়েছে৷ সেই সাথে দিল্লি সলিডারিটি গ্রুপের উদ্যোগে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের দাবিতে দিল্লি প্রেস ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়৷''
সংকলন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী