‘সৌদি ফার্স্ট' নীতিতে অটল রইলেন ট্রাম্প
২১ নভেম্বর ২০১৮বুধবার মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে সৌদি সাংবাদিকজামাল খাশগজি হত্যাকাণ্ডের তদন্তেররিপোর্ট জমা দেবে, এমনটাই শোনা যাচ্ছে৷ কিন্তু মঙ্গলবারই ট্রাম্প এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন৷ রিপোর্টে যা-ই থাকুক না কেন, তাঁর প্রশাসন সৌদি আরব তথা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের পাশেইথাকবেন৷ এমনকি যুবরাজ সালমান খাশগজি হত্যার ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আগে থেকে জেনে থাকলেও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর নীতিতে কোনো রদবদল করবেন না বলে সাফ জানিয়েছেন৷ ট্রাম্প বলেন, ‘‘হয়তো তিনি এ কাজ করেছেন, হয়তো করেননি৷'' প্রকৃত সত্য হয়তো কখনোই জানা যাবে না বলে মনে করেন তিনি৷
ট্রাম্প স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন যে, তিনি অ্যামেরিকার স্বার্থেই সৌদি আরবের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্কের অবনতি চান না৷ এই গভীর বাণিজ্যিক সম্পর্কের উপর অ্যামেরিকায় অনেক কর্মসংস্থান নির্ভর করছে৷ তাই সে দেশের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে তিনি মার্কিন অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না৷
ট্রাম্প বলেন, এমন ‘বোকামি' করলে আখেরে রাশিয়া ও চীনের লাভ হবে৷ তাছাড়া ইরানের উপর সর্বশেষ নিষেধাজ্ঞার ফলে সে দেশ বিশ্ব বাজারে পেট্রোলিয়াম রপ্তানি কমাতে বাধ্য হচ্ছে৷ এই অবস্থায় পেট্রোলিয়ামের মূল্য কম রাখতে সৌদি আরব উৎপাদন বাড়াতে প্রস্তুত৷ মার্কিন নিষেধাজ্ঞা চাপালে সেই নিশ্চয়তা আর থাকবে না বলে মনে করেন ট্রাম্প৷ অতএব বিশ্ব অর্থনীতি ও ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট' নীতির স্বার্থে তিনি সৌদি আরবের প্রতি কোনো ‘বোকামি' করবেন না বলেওক জানিয়েছেন ট্রাম্প৷
ট্রাম্প প্রশাসনের মূল্যায়নের মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি হচ্ছে, এমনটা ধরে নেওয়া কঠিন৷ রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দলের একাধিক সংসদ সদস্য ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে যুবরাজ সালমানের প্রতি অন্ধ সমর্থন ত্যাগ করে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের ডাক দিয়েছেন৷ তাঁরা সৌদি আরবে মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত দ্বিতীয় একটি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন৷ রিপাবলিকান দলের সংসদ সদস্য৷ ফ্রান্সিস রুনি সেইসঙ্গে ম্যাগনিটস্কি আইন প্রয়োগ করে খাশগজির হত্যাকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির ডাকদিয়েছেন৷ উল্লেখ্য, এই আইনের আওতায় অ্যামেরিকায় এমন ব্যক্তিদের বিষয়-সম্পত্তি আটক করা ও মার্কিন নাগরিকদের তাদের সঙ্গে ব্যবসা নিষিদ্ধ করা সম্ভব৷ এরই মধ্যে খাশগজি হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত ১৭ জন সৌদি নাগরিকের বিরুদ্ধে এমন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ অনেক সংসদ সদস্য অস্ত্র বিক্রির স্বার্থ সংক্রান্ত যুক্তিও মানতে নারাজ৷ তাঁদের মতে, সৌদি আরবের পক্ষে রাতারাতি অ্যামেরিকার উপর এ বিষয়ে নির্ভরতা কাটানো সম্ভব নয়৷
এমন চাপের মুখেও ট্রাম্প আপাতত অটল রয়েছেন৷ তাঁর প্রশাসনের মধ্যপ্রাচ্য নীতির ক্ষেত্রে সৌদি আরবের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে৷ ট্রাম্পের জামাই ও উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার ও সৌদি যুবরাজ সালমানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে উঠেছে৷ ইসরায়েলের সঙ্গেও সৌদি আরবের সহযোগিতা বেড়ে চলেছে৷ তবে ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, অ্যামেরিকার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনোরকম সমস্যা দেখা দিলে তিনি সৌদি আরবের বিষয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করতে প্রস্তুত৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, ডিপিএ)