হেট স্পিচ-এর বিরুদ্ধে লড়াই
২৭ মার্চ ২০১৮জার্মানির আইনটি সংক্ষেপে ‘নেৎসডিজি' নামে পরিচিত৷ এই আইন বলছে, সামাজিক মাধ্যমগুলো ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিষিদ্ধ ও আপত্তিকর কন্টেন্ট না মুছলে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৫০ মিলিয়ন ইউরো (প্রায় ৫০০ কোটি টাকা) পর্যন্ত জরিমানা করা হবে৷ অবশ্য বিশেষ ক্ষেত্রে কন্টেন্ট মোছার সময়সীমা এক সপ্তাহ পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে৷ এই আইনের আওতায় হেট স্পিচ ছড়ানো ব্যক্তির পরিচয় জানাতে বাধ্য সামাজিক মাধ্যমগুলো৷
২০১৫ সালে ইউরোপে শরণার্থীদের ঢল নামলে অনলাইনে বিদেশিদের বিরুদ্ধে হেট স্পিচ বেড়ে যাওয়ায় জার্মানি এমন আইন প্রণয়নে উদ্যোগ নেয়৷
আইনটি কার্যকর হওয়ার প্রায় তিন মাস হতে চলেছে৷ এখন পর্যন্ত সেটি সফল বলে মনে করছে সরকার৷ কারণ জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে আপত্তিকর কন্টেন্ট না মোছা সংক্রান্ত মাত্র ২০৫টি অভিযোগ এসেছে বলে জানিয়েছে বিচার মন্ত্রণালয়৷ অথচ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বছরে প্রায় ২৫ হাজার অভিযোগ আশা করেছিলেন৷
তবে সামাজিক মাধ্যমগুলো জরিমানার ভয়ে আপত্তিকর নয়, এমন অনেক পোস্টও মুছে ফেলছে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ যেমন গত জানুয়ারি মাসে জার্মানির তৎকালীন বিচারমন্ত্রী হাইকো মাসের একটি পুরনো টুইট মুছে ফেলা হয়৷ ঐ টুইটে তিনি অভিবাসনবিরোধী এক লেখককে ‘ইডিয়ট' বলেছিলেন৷ উল্লেখ্য, আলোচিত নেৎসডিজি আইনটি হাইকো মাসের হাত ধরেই প্রণীত হয়েছে৷ হাইকো মাস বর্তমানে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷
এছাড়া হাস্যরসাত্মক, ব্যাঙ্গাত্মক কন্টেন্টও অনেকসময় মুছে দেয়া হচ্ছে৷ যেমন গত জানুয়ারিতে মর্যাদাপূর্ণ ‘গ্রিমে অ্যাওয়ার্ড' জেতা ‘বারবারা'র (ছদ্মনাম) একটি ছবি মুছে দিয়েছিল ফেসবুক৷ এমনকি তার অ্যাকাউন্টও ব্লক করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছিল৷ সেই সময় বিষয়টি সমালোচনার জন্ম দিয়েছিল৷
এই আইনে এখনও পর্যন্ত মুছে দেয়া কন্টেন্ট ফিরে পাওয়ার কোনো উপায় রাখা হয়নি৷
এ সব কারণে বাকস্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা অ্যাক্টিভিস্ট, জার্মানির সাংবাদিকদের সংস্থাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নেৎসডিজি আইনের সমালোচনা করেছে৷ অনেকে আইনটি বাতিলেরও দাবি জানিয়েছেন৷
এসব আলোচনা বিবেচনায় নিয়ে জার্মানির নতুন সরকার আইনটিতে একটি ধারা যোগ করার চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানা গেছে৷ সেটি বাস্তবায়িত হলে ব্যবহারকারীরা তাদের মুছে দেয়া পোস্ট ফিরে পেতে পারেন৷
এছাড়া আপত্তিকর পোস্ট সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে সব সামাজিক মাধ্যম মিলে একটি স্বাধীন সংস্থা গড়ে তোলার কথা বলছেন সাংসদরা৷ সেটি সম্ভব হলে কোনো কন্টেন্ট ব্লক করা হবে কিনা, সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করে পদক্ষেপ নেয়া যাবে, বলে মনে করছেন আইন বিশেষজ্ঞরা৷
নেৎসডিজি মেনে চলতে জার্মানিতে ফেসবুকের প্রায় ১,২০০ কর্মী কাজ করছে৷ পুরো বিশ্বে ফেসবুকের এমন কর্মীর সংখ্যা ১৪ হাজার৷
টুইটার এ ব্যাপারে তাদের পরিকল্পনা জানায়নি৷ আর গুগলের ইউটিউব বলেছে, জার্মান আইন মানতে তারা ভবিষ্যতে বিনিয়োগ বাড়াবে৷
বিশ্ব তাকিয়ে
অনলাইনে হেট স্পিচ নিয়ন্ত্রণে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মধ্যে জার্মানিই সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্খী পদক্ষেপ নিয়েছে৷ কারণ নাৎসি আমলের অভিজ্ঞতা থাকার কারণে জার্মানিতে এমনিতেই ঘৃণা উসকে দেয় এমন বক্তব্য দেয়া ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়ার আইন রয়েছে৷
তাই জার্মানির এই আইনটি কেমন কাজ করছে তার দিকে নজর রাখছে অন্য দেশগুলো৷ কারণ তারাও এমন আইন করতে চাইছে৷ যেমন ‘ভুয়া খবর' বন্ধে আইন করতে চায় ফ্রান্স৷ অনলাইনে রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে হয়রানি বন্ধস করতে আগ্রহী ব্রিটেন৷ আর জাপান চায় আত্মহত্যা বিষয়ক পোস্ট নিয়ন্ত্রণ করতে৷ কারণ সেদেশের একজন সিরিয়াল কিলার নাকি টুইটারের মাধ্যমে শিকার খুঁজতেন৷
জেডএইচ/ডিজি (রয়টার্স)
এ বিষয়ে আপনার কোন মতামত থাকলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷